নিজস্ব প্রতিবেদক

  ১৮ জানুয়ারি, ২০২২

নতুন আইনেই ইসি প্রত্যাশা আ.লীগের

কে এম নুরুল হুদার নেতৃত্বাধীন নির্বাচন কমিশনের মেয়াদের পর যে নির্বাচন কমিশন গঠন হতে যাচ্ছে, তা নতুন আইনের অধীনেই হবে বলে প্রত্যাশা ব্যক্ত করেছে আওয়ামী লীগ।

রাষ্ট্রপতির সঙ্গে সংলাপ শেষে দলটির সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের গতকাল সোমবার সন্ধ্যায় বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউতে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে এ কথা জানান। এর আগে দলের সভাপতি শেখ হাসিনার নেতৃত্বে ১০ সদস্যের প্রতিনিধিদল বঙ্গভবনে রাষ্ট্রপতির সঙ্গে সংলাপে অংশ নেন।

নির্বাচন কমিশন আইন করার বিষয়ে ওবায়দুল কাদের বলেন, সরকারের নীতিগত সিদ্ধান্ত আইন মন্ত্রণালয়ে এ আইনটির খসড়া প্রস্তুত রয়েছে। খসড়াটি মন্ত্রিসভায় উপস্থাপিত হয়েছে, মন্ত্রিসভার অনুষ্ঠিত এক বৈঠকে। এবং নীতিগতভাবে উত্থাপনের অনুমোদন পেয়েছে।

তিনি বলেন, খসড়া আইনটি যথাযথ আনুষ্ঠানিকতা সম্পন্ন করে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় (আইন মন্ত্রণালয়) জাতীয় সংসদে পাঠাবে। জাতীয় সংসদ প্রচলিত বিধি-বিধান অনুসারে পরবর্তী পদক্ষেপ গ্রহণ করবে। ওবায়দুল কাদের বলেন, প্রধান নির্বাচন কমিশনার ও অন্যান্য নির্বাচন কমিশনার নিয়োগের লক্ষ্যে সংবিধানের অনুচ্ছেদ ১১৮-এর বিধান সাপেক্ষে একটি উপযুক্ত আইন প্রণয়ন করা যেতে পারে। বর্তমানে এই ধরনের কোনো আইন না থাকায় সংবিধানের ১১৮ অনুচ্ছেদের বিধান অনুযায়ী রাষ্ট্রপতি কর্তৃক প্রধান নির্বাচন কমিশনার ও নির্বাচন কমিশনারদের নিয়োগের ক্ষেত্রে সংবিধান ব্যতিরেকে অন্য কোনো আইন প্রতিপালনের বাধ্যবাধকতা নেই।

ওবায়দুল কাদের বলেন, তবে সাংবিধানিক চেতনা সমুন্নত রাখতে প্রধান নির্বাচন কমিশনার ও অন্য নির্বাচন কমিশনারদের যোগ্যতাণ্ডঅযোগ্যতা এবং তাদের নিয়োগ প্রক্রিয়া নির্ধারণের লক্ষ্যেই মূলত এই আইনের প্রয়োজনীয়তা রয়েছে। নির্বাচন কমিশন গঠন বিষয়ে যে কোনো আইন হবে সাংবিধানিক বিধান মতে একটি বিশেষ ধরনের আইন।

তিনি বলেন, ‘এই বিশেষ ধরনের আইন প্রণয়নের জন্য আমাদের রাজনৈতিক সংস্কৃতিতে কোনো সুনির্দিষ্ট উদাহরণ ছিল না। নির্বাচন কমিশন গঠন নিয়ে একটি রাজনৈতিক মতৈক্য প্রতিষ্ঠা করতে একমাত্র বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ একটি সাংবিধানিক রীতি ও রাজনৈতিক অনুশীলন প্রতিষ্ঠা করেছে। এই সাংবিধানিক রীতিটি হলো ‘সার্চ কমিটি’/‘অনুসন্ধান কমিটি’ গঠনের মাধ্যমে সবার মতামত ও অংশগ্রহণের ভিত্তিতে নির্বাচন কমিশন গঠন।

সার্চ কমিটির মাধ্যমে ২০১২ এবং ২০১৭ সালে নির্বাচন কমিশন গঠনের কথা উল্লেখ করে ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘দুবারই দেশের সব রাজনৈতিক দল ও নাগরিক সমাজের প্রতিনিধিরা এই অনুশীলনে অংশগ্রহণ করেছে। এমতাবস্থায়, এই রীতিটির আলোকে এবং এই প্রক্রিয়ালব্ধ অভিজ্ঞতা থেকে সংবিধানের ১১৮ অনুচ্ছেদের আলোকে একটি আইন প্রণয়ন করা যেতে পারে।’

সরকারের নীতিগত সিদ্ধান্তে ইসি গঠনে আইন মন্ত্রণালয় আইনের খসড়া প্রস্তুত করেছে জানিয়ে মন্ত্রী বলেন, খসড়াটি মন্ত্রিসভায় সোমবার উপস্থাপিত হয়েছে। নীতিগতভাবে উত্থাপনের অনুমোদন পেয়েছে। খসড়া আইনটি যথাযথ আনুষ্ঠানিকতায় সম্পূর্ণ করে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় জাতীয় সংসদে পাঠাবে। জাতীয় সংসদ প্রচলিত আইন বিধিবিধান অনুযায়ী পরবর্তী পদক্ষেপ গ্রহণ করবে।

সময়ের কারণে আইন করা সম্ভব না হলে ইসি গঠনে সংলাপে বিকল্প কোনো প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে কি না- সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাবে ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘বিকল্প কোনো দফা নিয়ে ভাবার অবকাশই নেই। কেউ কোনো প্রক্রিয়া ফলো করতে পেরেছে বা প্রক্রিয়া অতিক্রম করতে পেরেছে? কেউ পারেনি।’

হাতে অল্প সময়ের মধ্যে আইন করা সম্ভব কি না’- এমন প্রশ্নে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বলেন, ‘কাম অ্যান্ড সি, নাথিং ইজ ইম্পসিবল।’ রাষ্ট্রপতির সঙ্গে আওয়ামী লীগের বৈঠকে আরো কয়েকটি প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে বলেও জানান দলটির সাধারণ সম্পাদক।

সেগুলো হচ্ছে, ‘সংবিধানের অনুচ্ছেদ ১১৮-এর বিধান অনুযায়ী রাষ্ট্রপতি প্রধান নির্বাচন কমিশনার ও অন্য নির্বাচন কমিশনারদের নিয়োগ দেবেন। প্রধান নির্বাচন কমিশনার ও অন্য নির্বাচন কমিশনার নিয়োগের ক্ষেত্রে রাষ্ট্রপতি যেরূপ উপযুক্ত বিবেচনা করবেন, সে প্রক্রিয়ায় তিনি প্রধান নির্বাচন কমিশনার ও অন্য নির্বাচন কমিশনারদের নিয়োগ দেবেন। সুষ্ঠু, অবাধ, নিরপেক্ষ ও স্বচ্ছ নির্বাচনের স্বার্থে সব নির্বাচনে অধিকতর তথ্যপ্রযুক্তির ব্যবহার নিশ্চিত করা প্রয়োজন।’

তিনি আরো জানান, বৈঠকে রাষ্ট্রপতির কাছে আওয়ামী লীগের সভাপতি শেখ হাসিনা নির্বাচন কমিশন পুনর্গঠনে ‘গণতন্ত্র ও নির্বাচন : বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ’ শিরোনামে দলের পক্ষ থেকে একটি প্রস্তাবনা উপস্থাপন করেন। আওয়ামী লীগের প্রস্তাবনায় নির্বাচন কমিশনকে শক্তিশালীকরণ, নির্বাচন কমিশনের আর্থিক ও প্রযুক্তিগত সক্ষমতা বৃদ্ধিসহ একটি স্বাধীন, নিরপেক্ষ ও শক্তিশালী নির্বাচন কমিশন গঠন ও সংস্কার নিয়ে বিভিন্ন প্রস্তাব ও সুপারিশ উপস্থাপন করা হয় এবং এই ধরনের অর্থবহ সংলাপ আহ্বানের মধ্য দিয়ে সবার কাছে গ্রহণযোগ্য একটি নির্বাচন কমিশন গঠনের উদ্যোগ গ্রহণ করায় রাষ্ট্রপতিকে ধন্যবাদ জানান আওয়ামী লীগ সভাপতি।

ওবায়দুল কাদের বলেন, আওয়ামী লীগ দেশের সংবিধান ও আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। রাষ্ট্রপতির দীর্ঘ রাজনৈতিক জীবনের সুগভীর জ্ঞান, প্রজ্ঞা ও সুবিবেচনার প্রতি আওয়ামী লীগের পরিপূর্ণ আস্থা ও বিশ্বাস রয়েছে এবং রাষ্ট্রপতির গৃহীত যে কোনো ন্যায়সঙ্গত উদ্যোগের প্রতি আমাদের পরিপূর্ণ আস্থা রয়েছে।

বঙ্গভবনে অনুষ্ঠিত বৈঠকে আওয়ামী লীগের সভাপতি শেখ হাসিনা, দলের উপদেষ্টা পরিষদ সদস্য আমির হোসেন আমু, তোফায়েল আহমেদ এমপি, সভাপতিমন্ডলীর সদস্য বেগম মতিয়া চৌধুরী, শেখ ফজলুল করিম সেলিম, ড. মো. আবদুর রাজ্জাক, লে. কর্নেল (অব.) মুহাম্মদ ফারুক খান, জাহাঙ্গীর কবির নানক, আবদুর রহমান উপস্থিত ছিলেন।

এর আগে বিকাল ৩টা ৫৫ মিনিটে প্রতিনিধিদল নিয়ে বঙ্গভবনে পৌঁছান আওয়ামী লীগের সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ৫টা ১০ মিনিটে বৈঠক শেষে বের হন তারা।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close