হাসান ইমন

  ১৫ জানুয়ারি, ২০২২

ট্রাকের দখলে আবারও তেজগাঁওয়ের সড়ক

রাজধানীর তেজগাঁও এলাকার অধিকাংশ সড়ক ট্রাকের দখলে থাকে। ব্যস্ত রাস্তায় অবৈধ পার্কিংয়ের ফলে যান চলাচল ব্যাহত হচ্ছে। যানজটের ফলে ভোগান্তিতে পড়ছেন সাধারণ মানুষ। কর্তৃপক্ষের নজরদারির অভাবে উদ্ধার করা রাস্তাগুলো আবারও চলে যাচ্ছে দখলদারদের কবলে।

২০১৫ সালের ডিসেম্বরে অবৈধ ট্রাকের দখল থেকে তেজগাঁওয়ের সড়কগুলো উদ্ধার করেন ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের তৎকালীন মেয়র আনিসুল হক। দখলমুক্ত হয় আশপাশের সংযোগ সড়কগুলোও। এরপর বিভিন্ন সময়ে রাস্তায় ট্রাক রাখলেও উচ্ছেদ করা হয় ট্রাকগুলোকে। নজরদারি না থাকায় এখনো সেই পুরোনো চেহারায় মেয়র আনিসুল হক সড়কসহ আশপাশের রাস্তাগুলো। ব্যস্ত রাস্তার ওপরই পার্কিং করা হয়েছে ট্রাক আর কাভার্ড ভ্যান। সকাল-বিকাল যানজট লেগেই থাকছে।

স্থানীয় বাসিন্দা ও যাত্রীদের অভিযোগ, ট্রাকস্ট্যান্ডের কারণে দিনের বেশিরভাগ সময় সড়কটিতে যানজট লেগে থাকে। তার মধ্যে আবার পুরো সড়ক ভরে গেছে ময়লায়। এছাড়া সড়কের দুপাশে দেয়ালচিত্র ট্রাকের আড়ালে চলে যাওয়ায় আনিসুল হক সড়কের সৌন্দর্য নষ্ট হয়ে গেছে। দ্রুত ট্রাকস্ট্যান্ড সরানোর দাবি জানিয়েছেন এলাকাবাসী। তবে ট্রাক শ্রমিক-মালিকরা বলছেন, তেজগাঁওয়ে ট্রাক পার্ক করার জন্য ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের (ডিএনসিসি) একটি তিনতলা পার্কিং নির্মাণের কথা। কিন্তু ডিএনসিসি তা না করায় নিরুপায় হয়ে সড়কেই তারা ট্রাক রাখছেন। বিকল্প ব্যবস্থা করলে সড়কে তারা আর ট্রাক রাখবেন না বলে জানানো হয়।

ভেতরের সড়কগুলোর পরিস্থিতি আরো ভয়াবহ। কোনো কোনো সড়কের পুরোটাই ট্রাকের দখলে। কেউ আবার ট্রাক মেরামতের কারখানাও গড়ে তুলেছেন সড়ক দখল করে। অথচ রেললাইনঘেঁষে রয়েছে অস্থায়ী ট্রাকস্ট্যান্ড। যেখানে ট্রাক-কাভার্ড ভ্যান রাখতে অনীহা কিছু চালক-মালিকের। তাদের একজন বলেন, আমাদের একটাই দাবি, নির্ধারিত কোনো জায়গা সেটিং করে আমাদের যদি ওখানে পাঠায় তাহলে আমরা যাব। ব্যবস্থা করার আগে যদি বলে যেতে- তাহলে আমরা কোথায় যাব?

বাংলাদেশ ট্রাক ও কাভার্ড ভ্যান ড্রাইভার্স ইউনিয়নের নেতাদের দাবি, স্থায়ী টার্মিনাল না হলে এই সমস্যার সমাধান সম্ভব নয়। বাংলাদেশ ট্রাক ও কাভার্ড ভ্যান ড্রাইভার্স ইউনিয়নের সভাপতি তালুকদার মো. মনির বলেন, আমরা বদ্ধপরিকর আমরা সড়কে গাড়ি রাখব না। কিন্তু এখানে যে জায়গা, এখানে গাড়ি ধরে না। এজন্য কিছু কিছু সময় গাড়ি সড়কে রাখে। আমরা এখানে গাড়ি রাখতে নিষেধ করি, পুলিশ প্রশাসনও নিষেধ করে। কিন্তু ইদানীং পুলিশের কোনো তৎপরতা না থাকায় রোডে গাড়ি রাখে।

স্থায়ী টার্মিনালের জন্য এখনো জায়গা খুঁজছে নগর কর্তৃপক্ষ। আর নিয়মিত নজরদারির প্রশ্নে সেই পুরোনো রেকর্ড কর্মকর্তাদের মুখে।

২০২০ সালের ৩০ ডিসেম্বর আনিসুল হক সড়ক পরিদর্শনে গিয়েছিলেন ডিএনসিসি মেয়র আতিকুল ইসলাম। ওই দিন তিনি বলেছিলেন, ট্রাক টার্মিনাল স্থায়ী সমাধানে রেলগেট সংলগ্ন গণপূর্তের কাছে পরিত্যক্ত ২১ বিঘা জমি চাওয়া হবে। গণপূর্ত এই জমি ডিএনসিসিকে দিলে সেখানে একটি আন্ডারগ্রাউন্ড এবং মাটির ওপর মাল্টিলেভেল ট্রাক পার্কিং করা হবে। এতে তেজগাঁও এলাকায় সড়কে শৃঙ্খলা আসবে বলে দাবি করেছিলেন তিনি।

ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা সেলিম রেজা বলেন, কিছু কিছু ট্রাক নিয়মনীতির ব্যত্যয় ঘটিয়ে মাঝেমধ্যে রাস্তায় চলে আসে। আমাদের মোবাইল কোর্টগুলো সক্রিয় আছে। এরই মধ্যে একটি জায়গার জন্য আমরা ভূমি মন্ত্রণালয়ে চিঠি পাঠিয়েছি। জায়গা পেলে আমরা একটি অত্যাধুনিক ট্রাক টার্মিনাল নির্মাণ করতে যাচ্ছি। ট্রাক নিয়ে এখানে জটিলতা সৃষ্টি হয়, সেটি যেন ভবিষ্যতে না হয় তার জন্য আমরা তৎপর আছি। আমরা চেষ্টা করছি তেজগাঁওয়ের যে পুরোনো সৌন্দর্য উদ্ধার করেছিলাম, সেটি যেন ধরে রাখতে পারি।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close