নারায়ণগঞ্জ প্রতিনিধি

  ১৫ জানুয়ারি, ২০২২

আইভী-তৈমূর আত্মবিশ্বাসী

অভিযোগ-পাল্টা অভিযোগের মধ্য দিয়ে নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশন নির্বাচনের প্রচার শেষ হলো। শেষদিনে ভোটারদের মন জয়ে প্রার্থীরা দিলেন নানা প্রতিশ্রুতি। নির্বাচনে মেয়র পদে জয়-পরাজয়ে নিয়ামক বা ফ্যাক্টর কারা হবেন, তা নিয়ে চলে চুলচেরা বিশ্লেষণ। প্রার্থীর যোগ্যতাণ্ডঅযোগ্যতা নাকি দলীয় প্রতীক, নারী নাকি নতুন ভোটার, কারা নির্ধারণ করবেন নগরপিতা- নগরজুড়ে এমনই আলোচনা সবার মাঝে। বিগত দুটি সিটি নির্বাচনে ভোটারদের মধ্যে এত উৎসাহ-উদ্দীপনা দেখা যায়নি। উৎসবের নগরীতে পরিণত হয়েছে নারায়ণগঞ্জ। মেয়র পদে সাতজন প্রার্থী থাকলেও সবার দৃষ্টি আওয়ামী লীগের সেলিনা হায়াৎ আইভী ও স্বতন্ত্র প্রার্থী তৈমূর আলম খন্দকারের দিকে। দুজনেরই কর্মী-সমর্থকদের প্রচার চলে সমানতালে।

আইভীর অনুসারীরা বলছেন, নির্বাচনী প্রচারণায় নেমে তারা সাধারণ ভোটার ও আওয়ামী লীগের কর্মী-সমর্থকদের কাছ থেকে জোরালো ইতিবাচক সাড়া পাচ্ছেন। শামীম ওসমানের অনুসারীরা শেষমেশ পক্ষে কাজ না করলেও আইভীই জিতবেন। আইভী নিজেও তার জয়ের ব্যাপারে দৃঢ় আশাবাদ প্রকাশ করে বলেছেন, সাধারণ জনগণ তার সঙ্গে আছে।

অন্যদিকে ভোটের মাঠে আইভীর প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী হাতি প্রতীকের স্বতন্ত্র মেয়র প্রার্থী বিএনপি নেতা তৈমূর আলম খন্দকার শিবিরও জয় নিয়ে আত্মবিশ্বাসী। তিনি বলেছেন, যেখানেই প্রচারে গেছেন, সেখানেই সাধারণ মানুষের সমর্থন ও ভালোবাসা পেয়েছেন। মানুষের এ ভালোবাসাই তাকে আত্মবিশ্বাসী করে তুলেছে।

গতকাল শুক্রবার নিজ বাড়িতে এক সংবাদ সম্মেলনে সেলিনা হায়াৎ আইভী বলেন, আমি সহিংসতার বিপক্ষে। নারী ও তরুণ ভোটাররা যাতে ভোট দিতে যেতে পারেন, সে পরিবেশ নিশ্চিত করতে হবে। আমার কোনো বাহিনী নেই। সহিংসতা আমার পক্ষ থেকে হবে না। বিগত নির্বাচনগুলোতে কখনো সহিংসতা হয়নি। তাই এবারও উৎসবমুখর পরিবেশে নির্বাচন হবে। আমার বিজয় সুনিশ্চিত। তাই নির্বাচনে কেউ যাতে সহিংসতা বা বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করতে না পারে, প্রশাসনকে অবশ্যই ব্যবস্থা নিতে হবে। ভোটের সুষ্ঠু পরিবেশ বজায় রাখতে হবে।

আইভী আরো বলেন, প্রতিটি নির্বাচনকেই আমি চ্যালেঞ্জ হিসেবে নিয়েছি। এবারও তার ব্যতিক্রম নয়। আইভীকে পরাজিত করতে অনেকগুলো পক্ষ এক হয়ে গিয়েছে। ঘরের-বাইরের সব পক্ষ মিলে গিয়েছে। কীভাবে বিশৃঙ্খলা করে আমাকে পরাজিত করা যায় সে চিন্তা করছে। কেননা সবাই জানে আমার বিজয় সুনিশ্চিত।

পরে বিকালে জেলা ও মহানগর আওয়ামী লীগ আয়োজিত সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে সেলিনা হায়াৎ আইভী বলেন, ‘যেকোনো সময় আমার জীবনে কিছু ঘটতে পারে। আমার নিজের জীবন বাজি রেখেছি, আমার বাবার মতো আপনাদের খেদমত করার সুযোগ দিন আমাকে।’ নগরের ২ নম্বর রেলগেট এলাকায় বঙ্গবন্ধু সড়কের পশ্চিম পাশে অস্থায়ী মঞ্চ তৈরি করে এই সমাবেশের আয়োজন করা হয়। সমাবেশ শেষে একটি মিছিল বের হয়ে চাষাঢ়া হয়ে ২ নম্বর রেলগেট এলাকায় জেলা ও মহানগর আওয়ামী লীগ কার্যালয়ে গিয়ে শেষ হয়।

আইভী বলেন, ‘এই শহরের মাটি ও মানুষের কল্যাণের জন্য কাজ করার চেষ্টা করেছি। আমার বাবা আলী আহাম্মদ চুনকাও এই শহরের মাটি ও মানুষের কল্যাণে কাজ করে গিয়েছেন। নগরবাসীর উদ্দেশে আইভী বলেন, ‘আমি আপনাদের ডাকে ছুটে এসেছি, দীর্ঘ ১৮ বছর আপনাদের কল্যাণে কাজ করেছি।’

আইভী বলেন, ‘আবারও দরবারে এসেছি, আপনাদের দুয়ারে এসেছি শান্তির বার্তা নিয়ে। অন্যায়ের বিরুদ্ধে, অত্যাচারের বিরুদ্ধে, অবিচারের বিরুদ্ধে, খুনের বিরুদ্ধে, সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে। এই নৌকা আইভীর নৌকা, এই নৌকা নারায়ণগঞ্জের নৌকা, এই নৌকা হজরত নুহ (আ.) এর নৌকা, এই নৌকা একাত্তরের নৌকা, এই নৌকা বিজয়ের নৌকা, এই নৌকা বঙ্গবন্ধুর নৌকা...। এই নৌকাকে হারানোর ক্ষমতা কারো নেই, কারো নেই।’

সমাবেশে আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ও মেয়র প্রার্থী আইভীর নির্বাচন পরিচালনা কমিটির সমন্বয়কারী জাহাঙ্গীর কবির নানক বলেন, ‘অশান্ত শহরে শান্তি প্রতিষ্ঠা করেছেন আইভী। আপনারা ভোটকেন্দ্রে গিয়ে ভোট দেবেন, শান্তিপূর্ণ পরিবেশ রক্ষা করবেন। মনে রাখবেন, কেউ কেউ অশান্তি সৃষ্টির চেষ্টা করবেন, আমরা প্রশাসনকে বলে এসেছি, কোনো বিশৃঙ্খলা এই নারায়ণগঞ্জে হতে পারবে না। এই নির্বাচন সামনে রেখে কোনো সন্ত্রাসীর উঁকি-ঝুঁকি আমরা মানব না।’

মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি আনোয়ার হোসেনের সভাপতিত্বে ও সাধারণ সম্পাদক খোকন সাহার সঞ্চালনায় সমাবেশে আরো বক্তব্য দেন আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য আবদুর রহমান, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম, জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আবদুল হাই, সাধারণ সম্পাদক আবু হাসনাত মোহাম্মদ শহীদ বাদল প্রমুখ।

একই দিন শহরের মিশনপাড়া এলাকার নির্বাচনী ক্যাম্পে সংবাদ সম্মেলন করেন তৈমূর আলম খন্দকার। তিনি বলেন, আচরণবিধি লঙ্ঘনের ব্যাপারে নির্বাচন কমিশনকে বারবার জানানো হয়েছে। তারা শুধু আশ্বাস দিয়েছে কোনো কার্যকর ব্যবস্থা নেয়নি। জনগণের মনের ধারণা নির্বাচন কমিশন একটা ঠুঁটো জগন্নাথ। তারা সে পথেই হাঁটছেন। এরপরও আমি নির্বাচন কমিশনের ওপর আস্থা রাখতে চাই।

তৈমূর আলম বলেন, নারায়ণগঞ্জের বিভিন্ন হোটেলগুলো চেক করলেই দেখতে পারবেন বিভিন্ন জেলার সরকারদলীয় নেতারা এখানে অবস্থান করছে। সার্কিট হাউস, ডাকবাংলোকে নির্বাচনের কাজে ব্যবহার করা হচ্ছে। আইনানুসারে সরকারি কোনো গাড়ি ও ডাকবাংলো ব্যবহার করার নিয়ম নেই। এটা আচরণবিধি লঙ্ঘন। এই আচরণবিধি লঙ্ঘন করেই সরকারি দলের মেহমানরা নির্বাচনকে প্রভাবিত করার চেষ্টা করছে। এ ধরনের কর্মকান্ডের জন্য জনগণ সন্দিহান হয়ে পড়েছে।

আর বিকাল সাড়ে ৪টায় বন্দর সিরাজউদ্দৌলা ক্লাব মাঠ থেকে নিজের নির্বাচনী শোডাউন শুরু করেন তৈমূর আলম। সিরাজউদ্দৌলা ক্লাব মাঠ থেকে বন্দর বাজার হয়ে আলী আহাম্মদ চুনকা সড়ক ধরে মদনগঞ্জের পায়রা চত্বর এলাকায় গিয়ে বিকাল সাড়ে ৫টায় মিছিলটি শেষ হয়।

এ সময় তৈমূর আলম খন্দকার বলেন, এই নির্বাচনের ওপর অনেক কিছু নির্ভর করছে। এই নির্বাচনের ফলাফল আমাদের পক্ষে এলে দেশনেত্রী খালেদা জিয়ার মুক্তি ত্বরান্বিত হবে। যদি ব্যতিক্রম হয়, তাহলে সরকারের বিরুদ্ধে এই নারায়ণগঞ্জ থেকে আন্দোলন শুরু হবে।’

মিছিলে অংশ নিয়ে নারায়ণগঞ্জ মহানগর বিএনপির সহসভাপতি আতাউর রহমান বলেন, বন্দরে হাতি প্রতীকের পক্ষে জোয়ার সৃষ্টি হয়েছে। ১৬ জানুয়ারি সিটি নির্বাচনে মানুষ পরিবর্তনের পক্ষে ভোট দেবে। নির্বাচন শান্তিপূর্ণ হবে আশা প্রকাশ করে তিনি বলেন, ‘আমরা যারাই নির্বাচন করছি, সবাই এই শহরের বাসিন্দা। আমাদের সবার সঙ্গে সবার সুসম্পর্ক আছে। নির্বাচনে কোনো ধরনের কারচুপি বা গোলযোগ তৈরি হবে বলে আমি মনে করছি না। যদি তা হয়, তবে সেটা সরকারের জন্যই খারাপ হবে।’

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close