বদরুল আলম মজুমদার

  ১৯ অক্টোবর, ২০২১

ধর্মীয় সম্প্রীতি রক্ষার তাগিদ ইসলামি দলের নেতাদের

কুমিল্লায় পূজামণ্ডপে কোরআন শরিফ রাখার জের ধরে দেশের বিভিন্ন স্থানে মন্দির, পূজামণ্ডপ ও হিন্দুদের ওপর হামলা হয়েছে। এ পটভূমিতে ইসলামি দলের নেতারা বলেছেন, ধর্মীয় সম্প্রীতি কেউ যাতে নষ্টের সুযোগ না পায় সেদিকে দৃষ্টি দিতে হবে। তারা ধর্মীয় সম্প্রীতি রক্ষার তাগিদ দিয়েছেন। তারা মনে করেন একাধিক স্বার্থান্বেষী গোষ্ঠী ভূ-রাজনৈতিক ফায়দা নিতে এসব কর্মকাণ্ড করেছে। এসব কাজে জড়িতদের বিরুদ্ধে কড়া ব্যবস্থা নেওয়ার তাগিদ দিয়েছেন তারা। তবে তারা এও বলেছেন, পরিস্থিতির সুযোগ নিয়ে সরকার এ ঘটনাগুলো রাজনীতির হাতিয়ার করলে হিতে বিপরীত হবে।

নেতারা বলেছেন, ইসলাম ধর্মে অন্য ধর্মের প্রতি শ্রদ্ধা বা সম্প্রীতি দেখানোর কথা বলা আছে। সম্প্রীতি রক্ষার ক্ষেত্রে সরকারকে শক্ত হাতে এসব দমনের আহ্বান জানিয়েছেন ইসলামি দলগুলোর নেতারা। তবে এসব ঘটনার প্রকৃত কারণ অনুসন্ধান না করে এই ঘটনার বিষয়কে রাজনৈতিক হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহারের চেষ্টা করা হলে তা হিতে বিপরীত হবে। নেতারা এই আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন।

ইসলামি দলগুলোর নেতারা জোর দিয়ে বলছেন, বাংলাদেশ সংখ্যাগরিষ্ঠ মুসলিম জনসংখ্যার দেশ। এদেশের আলেম ওলামারা কোনো সময়েই অন্য ধর্মে প্রতি বিদ্বেষ করে কোনো বক্তব্য বিবৃতি দেয়নি। সম্প্রতি কুমিল্লায় ঘটে যাওয়া অনাকাক্সিক্ষত ঘটনার পরও ইসলামি দলগুলোর বা ধর্মীয় নেতাদের পক্ষ থেকে সর্বোচ্চ সংযম দেখানো হয়েছে। কারণ হিসেবে তারা বলছেন, এ জাতীয় কর্মকাণ্ড ধর্মীয় উসকানির দেওয়ার শামিল। তাই কোনো পক্ষ পায়দা নিতে এসব করে থাকতে পারে। অতীতেও এমনটা বার বার দেখা গেছে।

তারা মনে করেন, এ জাতীয় অধিকাংশ ঘটনাই উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে করা হয়ে থাকে। তাই এ জাতীয় ঘটনার পর না বুঝে কারোরই বাদ-প্রতিবাদে অংশ নিয়ে ক্ষতিকর কর্মকাণ্ডে জড়ানো যাবে না। বিশেষ করে পূজামণ্ডপে কোরআন শরিফ রাখার ঘটনায় দেশের অধিকাংশ বড় আলেমণ্ডওলামারা ধর্মীয় সম্প্রীতির পক্ষে কথা বলেছেন। অনেকে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম বা জুমার খুতবায় ধর্মীয় সম্প্রীতির পক্ষে শক্ত অবস্থান নিয়ে বক্তব্য রেখেছেন। জমিয়তে ওলামা ইসলামের সহসভাপতি ওবায়দুল্লাহ ফারুকী প্রতিদিনের সংবাদকে বলেন, দেশের হাজার বছরের সম্প্রীতি নষ্ট করতে পাশের একটি দেশ পরিকল্পিতভাবে এসব ঘটাচ্ছে। উপমহাদেশের রাজনৈতিক ও ধর্মীয় অবস্থান দেখলেও বুঝা যাবে মুসলিম সংখাগরিষ্ঠ এ অঞ্চলে হিন্দু-মুসলিম সম্প্রীতির কোনো সমস্যা হয়নি। এখন যা হচ্ছে তাতে আমার মনে হয়, আমরা ভূ-রাজনীতির কুফলে ভুগছি। তাই দেশের আইনশৃঙ্খলা বাহিনীসহ গোয়েন্দা সংস্থার নজর বাড়াতে হবে।

ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের মহাসচিব প্রিন্সিপাল হাফেজ মাওলানা ইউনুছ আহমাদ প্রতিদিনের সংবাদকে বলেন, কুমিল্লায় মূর্তির পায়ের নিচে পবিত্র কোরআন রেখে অবমাননা করার ঘটনা এবং পরে হিন্দু ধর্মালম্বীদের বাড়িঘর, মণ্ডপে প্রতিমা ভাঙচুরসহ যা ঘটছে তার পেছনে রয়েছে এক গভীর ষড়যন্ত্র। শতকরা ৯২ ভাগ মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ বাংলাদেশে সংখ্যালঘু সম্প্রদায় যে নিরাপত্তা ও অতিমাত্রায় নাগরিক সুবিধা ভোগ করছে বিশ্বে এমন দৃষ্টান্ত নজিরবিহীন। পাশের দেশে মুসলমানরা তার এক ভাগও পায় না। অথচ অতি আদরে থাকা এসব জনগোষ্ঠীর ওপর বার বার হামলার ঘটনা ঘটছে। যেগুলোর পেছনে কিছু স্বার্থান্বেষী চিহ্নিত মহল কাজ করছে বলে আমরা মনে করি।

বাংলাদেশ খেলাফত আন্দোলনের মহাসচিব মাওলানা হাবিবুল্লাহ মিয়াজী বলেন, কিছু উগ্র হিন্দুবাদীরা এসব ঘটনার পেছন থেকে কাজ করছে। তারা পরিকল্পিতভাবে নিজেদের দাম বাড়ানোর জন্য এসব করছে। অথচ এদেশে তারা একজন মুসলিম নাগরিক থেকেও ক্ষেত্রবিশেষ বেশি মর্যাদা ভোগ করছে। যা দেশের মানুষ জানে। এ চক্রান্তকারীদের শক্ত হাতে দমন করতে সরকারকে আরো বেশি কাজ করতে হবে। মুসলমানরা ধর্মীয় আবেগ দিয়ে অন্য ধর্মের লোকদের উপাসনালয় ভাঙতে যায় না।

কুমিল্লায় পূজামণ্ডপে পবিত্র কোরআন অবমাননার প্রতিবাদ ও সাম্প্রতিক হামলার ঘটনাতে অন্য মতলব রয়েছে জানিয়ে একটি বিবৃতি দিয়েছে হেফাজতে ইসলাম। সংগঠনটির আমির শাহ মুহিব্বুল্লাহ বাবুনগরী ও মহাসচিব নুরুল ইসলাম এক বিবৃতিতে বলেন, কুমিল্লায় পূজামণ্ডপে পবিত্র কোরআনকে যেভাবে অবমাননা করা হয়েছে, তা কিছুতেই মেনে নেওয়া যায় না। যারা বাংলাদেশের সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বিনষ্ট করতে চায়, তাদের বিরুদ্ধে অতিসত্তর কঠোর ব্যবস্থা নিতে হবে।

বাংলাদেশ ইসলামী ঐক্যজোটের চেয়ারম্যান মিছবাহুর রহমান চৌধুরী গণমাধ্যমে বলেন, কুমিল্লার দিঘীরপাড়ের ঘটনা পরিকল্পিত। যারা কোরআন অবমাননার ঘটনা ঘটিয়েছে তারা ধর্মীয় বিদ্বেষের কারণে নয়, এদের উদ্দেশ্য দেশকে অস্থিতিশীল করে সরকারকে বেকায়দায় ফেলা। দেশের সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বিনষ্ট করা। কিন্তু হাজার বছরের সম্প্রীতি মতলববাজদের একটি বিচ্ছিন্ন ঘটনায় বিনষ্ট হওয়ার কোনো আশঙ্কা নেই।

জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম বাংলাদেশের ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব ও বিশিষ্ট আলেম মাওলানা মঞ্জুরুল ইসলাম আফেন্দী গণমাধ্যমে বলেছেন, আইন নিজের হাতে তুলে নিয়ে কোনো ধরনের অরাজকতা সৃষ্টি করা এবং কোনো ধরনের ষড়যন্ত্রের ফাঁদে পা দেওয়া থেকে সংশ্লিষ্ট সবাইকে বিরত থাকতে হবে। বাংলাদেশ সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির দেশ। যেখানে সব ধর্মের মানুষ নির্বিঘ্নে নিজ নিজ ধর্মীয় উৎসব পালন করে। সেখানে কুমিল্লার পূজামণ্ডপে পবিত্র কোরআনের অবমাননাকে বিচ্ছিন্ন কোনো ঘটনা বলে উড়িয়ে দেওয়ার সুযোগ নেই। আমরা মনে করি, এটি মুসলমান এবং বাংলাদেশে আবহমানকাল থেকে চলে আসা ধর্মীয় সম্প্রীতির ওপর পরিকল্পিত আঘাত।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close