প্রতিদিনের সংবাদ ডেস্ক

  ১২ সেপ্টেম্বর, ২০২১

মিয়ানমারে প্রতিরোধ যোদ্ধাদের হামলায় ২০ সেনা নিহত

মিয়ানমারের সামরিক জান্তাবিরোধী পিপলস ডিফেন্স ফোর্সের (পিডিএফ) যোদ্ধাদের হামলায় অন্তত ২০ সৈন্য নিহত হয়েছে। দেশটির বিভিন্ন স্থানে প্রতিরোধ যোদ্ধারা সেনাবাহিনীর ওপর এসব হামলা চালান। অন্যদিকে সামরিক বাহিনীর অভিযানে কিশোরসহ কয়েক ডজন বেসামরিক লোক নিহত হয়েছেন। শুক্র ও শনিবার এই দুই দিনে এসব হতাহতের ঘটনা ঘটে। খবর ইরাবতি ও আলজাজিরার।

সর্বশেষ গতকাল শনিবার ইয়াঙ্গুনের সানচাউঙ্গ টাউনশিপে সামরিক এক যানে পিডিএফ যোদ্ধাদের হামলায় এক ডেপুটি ব্যাটালিয়ন কমান্ডারসহ সামরিক বাহিনীর তিন সেনা নিহত হন। এ ঘটনার পরপরই সানচাউঙ্গে রাস্তা বন্ধ করে দেয় সামরিক বাহিনী। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া এক ভিডিওতে দেখা যায়, সেনারা যত্রতত্র গুলি ও গালাগাল করছে।

এছাড়া দক্ষিণাঞ্চলীয় কারেন রাজ্যে শুক্রবার সকালে স্থানীয় কারেন ন্যাশনাল ইউনিয়নের যোদ্ধারা দুটি সামরিক ক্যাম্প দখল করে নেয়। শুক্রবার সকালে মাগউই অঞ্চলের গাঙ্গাও টাউনশিপের নান খার গ্রামে পিডিএফ যোদ্ধাদের সঙ্গে সামরিক জান্তার সংঘর্ষ হয়।

এর আগে বৃহস্পতিবার পিডিএফ যোদ্ধাদের সঙ্গে সংঘর্ষের পর গাঙ্গাও টাউনশিপের মিনথা গ্রামের ২০ বাড়িতে অগ্নিসংযোগ করে সৈন্যরা। এই সময় বাধা দিতে গিলে ওই গ্রামে ২২ কিশোরকে হত্যা করা হয় বলে জানান গ্রামের এক বাসিন্দা।

গ্রামের ওই বাসিন্দা বলেন, ‘আমাদের কাছে কেবল হাতে তৈরি বন্দুক ছিল। সেনাদের গুলি শুরু হলে এগুলো অকার্যকর হয়ে যায়। অস্ত্রের ভারসাম্য না থাকায় বহু হতাহত হয়েছে।’

তিনি জানান, প্রতিরোধ বাহিনীর অধিকাংশ সদস্য তরুণ। নিহতদের মধ্যে পাঁচ জন নবম থেকে দশম শ্রেণির শিক্ষার্থী। এদের মধ্যে মাধ্যমিক স্কুলের এক শিক্ষকও রয়েছেন।

১ ফেব্রুয়ারি মিয়ানমারের সামরিক বাহিনী তাতমাদাও দেশটিতে সেনা অভ্যুত্থান ঘটায় এবং প্রেসিডেন্ট উইন মিন্ট ও স্টেট কাউন্সিলর অং সান সু চিসহ রাজনৈতিক নেতাদের গ্রেপ্তার করে। একইসঙ্গে দেশটিতে এক বছরের জন্য জরুরি অবস্থা জারি করা হয়। পরে ১ আগস্ট জরুরি অবস্থার মেয়াদ ২০২৩ সালের আগস্ট পর্যন্ত বাড়ানোর ঘোষণা দেন জান্তা প্রধান জেনারেল মিন অং লাইং।

সেনা অভ্যুত্থানের প্রতিবাদে ফেব্রুয়ারির শুরু থেকেই মিয়ানমারের বিভিন্ন শহরেই বিক্ষোভ শুরু হয়। বিক্ষোভকারীরা অং সান সু চিসহ বন্দি রাজনৈতিক নেতাদের মুক্তির পাশাপাশি সামরিক শাসন প্রত্যাহারের দাবি জানিয়ে আসছেন। শান্তিপূর্ণভাবে শুরু হওয়া অহিংস বিক্ষোভকে সামরিক উপায়ে জান্তা সরকার দমন করতে গেলে বিক্ষোভকারীরাও বিভিন্ন স্থানে অস্ত্র হাতে নেয়। গত ৭ সেপ্টেম্বর মিয়ানমারের জান্তাবিরোধী ন্যাশনাল ইউনিটি গভর্নমেন্ট দেশের সাধারণ মানুষকে সামরিক জান্তার আক্রমণ থেকে রক্ষা করতে সর্বাত্মক যুদ্ধের ঘোষণা দেয়।

এদিকে মিয়ানমারের অবস্থা পর্যবেক্ষণকারী থাইল্যান্ডভিত্তিক সংস্থা অ্যাসিসটেন্স অ্যাসোসিয়েশন ফর পলিটিক্যাল প্রিজনারস (এএপিপি) জানিয়েছে, ১ ফেব্রুয়ারিতে সেনা অভ্যুত্থানের পর থেকে শনিবার পর্যন্ত দেশটিতে বিক্ষোভে সামরিক জান্তার দমন অভিযানে অন্তত ১ হাজার ৬২ জন নিহত হয়েছেন। প্রতিবেদনে আরো বলা হয়, বিক্ষোভ সংশ্লিষ্টতায় সামরিক জান্তার হাতে গ্রেপ্তার হয়েছেন ৮ হাজার ১৩ জন। বর্তমানে বন্দি রয়েছেন ৬ হাজার ৩৬৪ জন। এছাড়া গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি হয়েছে আরো ১ হাজার ৯৮৪ জনের নামে।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close