উত্তম কুমার মোহন্ত, ফুলবাড়ী (কুড়িগ্রাম)

  ০১ আগস্ট, ২০২১

ছিটমহল বিনিময়ের ৬ বছর

চারদিকে উন্নয়ন, বদলে গেছে জীবন

৩১ জুলাই। ছিটমহল বিনিময়ের ছয় বছর। ২০১৫ সালের এই দিনে মধ্যরাতে ভারত-বাংলাদেশের ১৬২টি ছিটমহলের বিনিময় ঘটে। সমাপ্তি ঘটে ১৬২ ছিটমহলের মানুষের ৬৮ বছরের বন্দিদশার। এই ছয় বছরে সরকারের উন্নয়নের জোয়ারে ভাসছে দাসিয়ারছড়ার মানুষ। বিনিময়ের পর দিন থেকে ছিটমহলগুলো উন্নয়নের পরিকল্পনা হাতে নেয় বাংলাদেশ সরকার। দৃশ্যমান বদল ঘটতে থাকে দাসিয়ারছড়ায়। সেখানকার রাস্তা, বিদ্যুৎ, চিকিৎসা, শিক্ষা, কৃষিসহ সব ক্ষেত্রে লাগে উন্নয়নের ছোয়া। পরিবর্তন ঘটে এখানকার জীবনযাত্রায়।

১৯৭৪ সালের ইন্দিরা-মুজিব স্থলসীমান্ত চুক্তি বাস্তবায়নের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশের অভ্যন্তরে থাকা ভারতের ১১১টি ছিটমহল এবং ভারতের অভ্যন্তরে থাকা বাংলাদেশের ৫১টি ছিটমহল নিজ নিজ দেশের অভ্যন্তরে থাকা মূল ভূখ-ের সঙ্গে যুক্ত হয়। বাংলাদেশের ভেতরে যে ১১১টি ছিটমহল ছিল, তার মধ্যে সবচেয়ে বড় কুড়িগ্রামের ফুলবাড়ী উপজেলার দাসিয়ারছড়া। মুক্তির ছয় বছর পূর্তি ও সাত বছরে পদার্পণ উপলক্ষে দাসিয়ারছড়ায় স্বাস্থ্যবিধি মেনে রাত ১২টা ১ মিনিটে ৬৮টি মোমবাতি প্রজ্বালন ও কেক কেটে বিজয় উদ্যাপন করে সাবেক ছিটমহলবাসী।

ফুলবাড়ী উপজেলা প্রশাসন সূত্রে জানা যায়, ১ কোটি ৫০ লাখ টাকা ব্যয়ে তিনটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, তিনটি মাধ্যমিক বিদ্যালয়, একটি সরকারি দাখিল মাদ্রাসা, দুটি কলেজ, ডিজিটাল আইসিটি ট্রেনিং সেন্টার, ১৮ কোটি টাকা ব্যয়ে ২৭ দশমিক ৪০ কিলোমিটার পাকা সড়ক, ২০ লাখ টাকা ব্যয়ে কালীরহাটে কমিউনিটি রিসোর্স সেন্টার, ৯০ লাখ টাকা ব্যয়ে পাঁচটি মসজিদ, ২০ লাখ টাকা ব্যয়ে একটি মন্দির, ২ কোটি ১৯ লাখ টাকা ব্যয়ে ৩০ মিটারের একটি ব্রিজ, সাতটি বক্স কালভার্ট, ৩৫টি ইউড্রেন, একটি কবরস্থান, শ্মশানঘাট দুটি, টিউবওয়েল ৩৮৪টি, কাঁচাপাকা ল্যাট্রিন ১ হাজার ১৫০টি স্থাপন করা হয়েছে।

এ ছাড়া ১০ লাখ টাকা ব্যয়ে হতদরিদ্র পরিবারের ১০টি বসতবাড়ি নির্মাণ, স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করতে তিনটি কমিউনিটি ক্লিনিক, শতভাগ বিদ্যুতের সংযোগ, দ্রুতগতির ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট সংযোগ। ইউনিসেফের অর্থায়নে বাংলাদেশ শিশু একাডেমি স্থাপন করেছে ১৫টি প্রাক প্রাথমিক শিক্ষাকেন্দ্র। এ ছাড়া ইসলামিক ফাউন্ডেশন প্রতিষ্ঠা করেছে ১৪টি মসজিদভিত্তিক শিশু ও গণশিক্ষা কেন্দ্র। বাংলাদেশে অন্তর্ভুক্তির ৭৫ দিনের মধ্যে প্রায় ২ হাজার ৫৬২ পরিবারে বিদ্যুৎ সংযোগ দেওয়া হয়েছে। দেওয়া হয়েছে দ্রুতগতির ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট সংযোগ। ইউনিসেফের অর্থায়নে বাংলাদেশ শিশু একাডেমি স্থাপন করেছে ১৫টি প্রাক প্রাথমিক শিক্ষাকেন্দ্র।

এ ছাড়া ইসলামিক ফাউন্ডেশন প্রতিষ্ঠা করেছে ১৪টি মসজিদভিত্তিক শিশু ও গণশিক্ষাকেন্দ্র। উপজেলা কৃষি অফিসের অর্থায়নে কৃষকদের প্রশিক্ষণ ও কৃষি যন্ত্রপাতি দেওয়া হয়েছে। দাসিয়ারছড়ায় ঘরে ঘরে সুপেয় পানি আর স্যানিটেশন ব্যবস্থা নিশ্চিত হয়েছে। আত্মকর্মসংস্থান সৃষ্টির লক্ষ্যে যুব উন্নয়ন অধিদপ্তর বেকার যুব ও যুব নারীদের নানা ট্রেডে দেওয়া হয়েছে প্রশিক্ষণ। সেখানকার বাসিন্দাদের দেওয়া হয়েছে ন্যাশনাল আইডি কার্ড ও স্মার্টকার্ড।

বিলুপ্ত দাসিয়ারছড়া ছিটমহলের আন্দোলনকারী ছাত্রনেতা জাকির হোসেন জানান, চুক্তি বাস্তবায়নের মাধ্যমে ৬৮ বছরে আমাদের অবরুদ্ধ জীবনের অবসান ঘটেছে। মূল ভূখ-ে যুক্ত হওয়ার বছরের মধ্যে বর্তমান সরকার ঘরে ঘরে বিদ্যুৎ, রাস্তা, সেতু-কালভার্ট, স্কুল-কলেজ, মাদ্রাসা, কমিউনিটি ক্লিনিকসহ দাসিয়ারছড়ায় ব্যাপক উন্নয়ন কর্মকা- হয়েছে। আমরা কখনো কল্পনা করিনি সরকার এত দ্রুত দাসিয়ারছড়ায় উন্নয়ন করবে। এজন্য আমাদের প্রাধামন্ত্রী শেখ হাসিনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ জানাই।

দাসিয়ারছড়া খরিয়াটারী বয়োজ্যেষ্ঠ কবির হোসেন, ৬৮ বছরের বন্দি জীবন শেষ হয়েছে। শেখের বেটি আমার আমাদের স্কুল-কলেজ ক্লিনিকসহ অনেক কিছু দিয়েছে। আমরা ওনাকে অনেক ধন্যবাদ জানাই। সাবেক বাংলাদেশ-ভারত ছিটমহল বিনিময় সমন্বয় কমিটির দাসিয়ারছড়া ইউনিটের সভাপতি আলতাফ হোসেন জানান, প্রাধামন্ত্রী শেখ হাসিনা দাসিয়ারছড়ার ঘরে ঘরে বিদ্যুৎ, রাস্তা, সেতু-কালভার্ট, স্কুল-কলেজ, মাদ্রাসা, কমিউনিটি ক্লিনিকসহ অনেক কিছু দিয়েছেন। আমারা দাসিয়ারছড়াবাসী তার কাছে কৃতজ্ঞ। সাবেক বাংলাদেশ-ভারত ছিটমহল বিনিময় সমন্বয় কমিটির আন্দোলনের নেতা গোলাম মোস্তফা খান জানান, মুজিব-ইন্দিরা স্থলসীমান্ত চুক্তির বাস্তবায়ন করে ছিটবাসীকে মুক্তি দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। আমরা তার কাছে চিরঋণী। গত ছয় বছরে সরকার দাসিয়ারছড়ায় ব্যাপক উন্নয়ন করায় আমরা সরকারের কাছে কৃতজ্ঞ।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close