কাজী আবুল মনসুর, চট্টগ্রাম

  ২৭ জানুয়ারি, ২০২১

চট্টগ্রাম নগরে ভোটযুদ্ধ আজ

চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের (চসিক) ভোট আজ। তাই সবার দৃষ্টি বাণিজ্যিক রাজধানীখ্যাত চট্টগ্রামের দিকে। সকাল ৮টা থেকে বিকাল ৪টা পর্যন্ত চলবে ভোটগ্রহণ। শেষ মুহূর্তে এই নির্বাচন পরিণত হয়েছে মেয়র পদে আওয়ামী লীগের ‘নৌকা’ আর বিএনপির ‘ধানের শীষ’ প্রতীকের ভোটের লড়াইয়ে। কাউন্সিলর পদে দলীয় প্রতীক না থাকলেও দলের সমর্থনই বড় শক্তি।

চসিকের এবার পুরো ভোট হবে ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিনে (ইভিএম)। এবারেই প্রথম কাগজের ভাঁজের পরিবর্তে বোতাম টিপেই নির্বাচিত করা হবে চট্টগ্রামের নগরপিতা। তবে সম্ভাব্য জয়-পরাজয়ের নিয়ে চলছে নানা সমীকরণ ও বিশ্লেষণ। চট্টগ্রামে মেয়র পদে কারা জিতবেন, ‘নৌকা’ নাকি ‘ধানের শীষ’, জানা যাবে আজ রাতেই। নির্বাচনের সব প্রস্তুতি সম্পন্ন হয়েছে উল্লেখ করে রিটার্নিং কর্মকর্তা মুহাম্মদ হাসানুজ্জামান ভোটারদের নির্ভয়ে ভোটকেন্দ্রে গিয়ে পছন্দের প্রার্থীকে ভোট দেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন। সাংবাদিকদের তিনি বলেন, ‘ভোটাররা যাতে নির্বিঘেœ ভোটকেন্দ্রে আসতে পারেন, নির্বিঘেœ ভোট দিয়ে বাড়ি ফিরে যেতে পারেন, সেটা আমরা নিশ্চিত করেছি।’

ভোটের লড়াইয়ে মেয়র পদে জয়ের আশাবাদী দুই পক্ষই। নৌকা প্রতীকে লড়ছেন আওয়ামী লীগের রেজাউল করিম চৌধুরী এবং ধানের শীষ প্রতীকে বিএনপির ডা. শাহাদাত হোসেন। মেয়র পদ ছাড়াও কাউন্সিলর পদে প্রধান দুই রাজনৈতিক দলের সমর্থিত প্রার্থী, বিদ্রোহী প্রার্থী ও স্বতন্ত্র প্রার্থীরাও আজকের ভোটের লড়াইয়ে গুরুত্বপূর্ণ পক্ষ।

আওয়ামী লীগের দপ্তর সম্পাদক ও প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ সহকারী ব্যারিস্টার বিপ্লব বড়–য়া বলেছেন, ‘চসিক নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মনোনীত মেয়র পদপ্রার্থীর বিজয় সময়ের ব্যাপার মাত্র। চট্টগ্রামের দৃশ্যমান উন্নয়নের কারণে পুরো দেশের চিত্র পাল্টে গেছে। সরকার শুধু পরিকল্পনা করেনি, পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করে চলেছে। তাই চট্টগ্রামের মানুষ নৌকা প্রতীকেই ভোট দেবেন।’

অন্যদিকে ধানের শীষ প্রার্থী-সমর্থকরাও জয়ের বিষয়ে নিজেদের প্রত্যাশা ব্যক্ত করেছেন। বিএনপি প্রার্থী ডা. শাহাদাত হোসেন বলেছেন, ‘নির্বাচন যেভাবেই হোক, আমরা মাঠ ছেড়ে যাব না।’ সুষ্ঠু ভোট নিয়ে শঙ্কার থাকলেও ভোটারদের কেন্দ্রে যাওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন তিনি। নির্বাচন কমিশনার কে এম নুরুল হুদা বলেছেন, ‘কমিশন সুষ্ঠু, শান্তিপূর্ণ ও পক্ষপাতহীন আচরণের মধ্য দিয়ে নির্বাচন অনুষ্ঠানে কাজ করছে। আশ্বস্ত করার মতো নির্বাচনী পরিবেশ বিরাজ করছে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষা ও ভোটসংশ্লিষ্ট কাজে যারা নিয়োজিত থাকবেন, তাদের সব প্রার্থীর প্রতি সমান নজর রাখতে হবে। যাতে এটি নিয়ে কোনো প্রশ্ন না ওঠে।’

ইতোমধ্যে কেন্দ্রে কেন্দ্রে পৌঁছে গেছে নির্বাচনী সরঞ্জাম। শান্তিপূর্ণ পরিবেশ সৃষ্টিতে মাঠে নেমেছেন আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর প্রায় সাড়ে চৌদ্দ হাজার সদস্য। তার পরও কেন্দ্র পাহারার ঘোষণা দিয়েছে আওয়ামী লীগ ও বিএনপি।

ছয়টি দলের অংশগ্রহণ : চট্টগ্রাম সিটি নির্বাচনে সিটিতে মেয়র পদে ছয়টি দল প্রার্থী দিয়েছে। তবে প্রচারে এগিয়ে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ ও রাজপথের বিরোধী দল বিএনপি প্রার্থীরা। মেয়র পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন আওয়ামী লীগের এম রেজাউল করিম চৌধুরী, বিএনপির ডা. শাহাদাত হোসেন, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের মো. জান্নাতুল ইসলাম, বাংলাদেশ ইসলামী ফ্রন্টের এম এ মতিন, ন্যাশনাল পিপলস পার্টির আবুল মনজুর, ইসলামিক ফ্রন্ট বাংলাদেশের মুহাম্মদ ওয়াহিদ মুরাদ এবং স্বতন্ত্র খোকন চৌধুরী।

বিএনপির অভিযোগ সেল : এদিকে বিএনপির মেয়র পদপ্রার্থী শাহাদাত হোসেনের সমর্থনে গঠন করা হয়েছে একটি অভিযোগ সেল। পাঁচ সদস্যের একটি আইনজীবী প্যানেল গঠন করা হয়েছে। দেওয়া হয়েছে নির্বাচনী হটলাইন। ভোটকেন্দ্রে কোনো অনিয়ম হলে তা সঙ্গে সঙ্গে জানানোর জন্য এটি গঠন করা হয়েছে বলে দলীয় সূত্র জানায়।

ইভিএমে সহায়তায় সশস্ত্র বাহিনী : নির্বাচন কমিশন জানিয়েছে, আজ ৭৩৫টি ভোটকেন্দ্রের ৪ হাজার ৮৮৬টি বুথে ভোটগ্রহণ চলবে। এজন্য প্রস্তুত রাখা হয়েছে ১১ হাজার ৫৭২টি ইভিএম। ইভিএম মেশিনে কারিগরি সহায়তা দেবেন সশস্ত্র বাহিনী। প্রতিটি কেন্দ্রে দুজন করে সার্জেন্ট বা করপোরাল বা ল্যান্স করপোরাল অথবা সৈনিক দায়িত্ব পালন করবেন। এ ছাড়া মাঠে জেসিও ও অফিসার থাকবেন।

এক প্রশ্নের উত্তরে রিটার্নিং কর্মকর্তা হাসানুজ্জামান বলেন, ‘কেন্দ্রভিত্তিক যেসব মালামাল রয়েছে এগুলো ৪টি ভেন্যু থেকে বিতরণ করা হচ্ছে। এসব মালামাল ৩ থেকে ৪ ঘণ্টার মধ্যে পৌঁছে গেছে। সেখানে নিয়ে যাওয়ার পর আবার পরীক্ষা করা হচ্ছে, কোনো সমস্যা আছে কি না। সবগুলো পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে প্রস্তুতি গ্রহণ করা হয়েছে।’

নিরাপত্তার চাদরে সিটি : শান্তিপূর্ণ ভোটের জন্য নিরাপত্তার চাদরে ঢেকে ফেলা হয়েছে পুরো বন্দরনগরী। পুলিশের পক্ষ থেকে নেওয়া হয়েছে চার স্তরের নিরাপত্তা। সাধারণ ভোটকেন্দ্রে ১৬ জন এবং ঝুঁকিপূর্ণ ভোটকেন্দ্রে ১৮ জন আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য মোতায়েন থাকছেন। নগরীর ৭৩৫টি ভোটকেন্দ্রের এরই মধ্যে ৪২৯টি ভোটকেন্দ্র ঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে চিহ্নিত করে নিরাপত্তা-বলয়ে ঢেকে ফেলা হয়েছে।

আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় মাঠে থাকবেন ২৫ প্লাটুন (৭৫০ জন) বিজিবি, ৪৯২ র‌্যাব, ৪ হাজার ৩০৮ পুলিশ এবং ৮ হাজার ৮২০ আনসার সদস্য। পাশাপাশি মাঠে থাকছে মোবাইল ও স্ট্রাইকিং ফোর্স। এবারের নির্বাচনে সব বাহিনী মিলে ১৪ হাজার ৩৭০ সদস্য নিয়োজিত থাকবেন।

মোবাইল টিম থাকবে ৪১০টি, স্ট্রাইকিং ফোর্স থাকবে ১৪০টি। নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট থাকবেন ৭৬ জন। প্রতি ওয়ার্ডে একজন করে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট দায়িত্ব পালন করবেন। এ ছাড়া বিজিবির প্রতি প্লাটুনে একজন করে এবং র‌্যাবের সঙ্গে তিনজন দায়িত্ব পালন করবেন। এ ছাড়া নির্বাচন সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করার লক্ষ্যে ২০ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মাঠে রয়েছেন।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close