শাহজাহান সাজু

  ১৮ জানুয়ারি, ২০২১

৫৯৩০০০ কোটি টাকা হতে পারে আকার

* এডিপির আকার ধরা হচ্ছে ২ লাখ ১৩ হাজার কোটি টাকা * জিডিপির প্রবৃদ্ধি প্রাক্কলন ৭.৭ শতাংশ

আগামী বাজেটের আকার হতে পারে প্রায় ৬ লাখ কোটি টাকা। ২০২১-২২ অর্থবছরের বাজেট প্রণয়নের কাজ এরই মধ্যে শুরু করেছে অর্থ মন্ত্রণালয়। এ লক্ষ্যে আর্থিক, মুদ্রা ও মুদ্রাবিনিময় হার সংক্রান্ত কো-অর্ডিনেশন কাউন্সিলের সভাও হয়েছে। অর্থ মন্ত্রণালয়ের কো-অর্ডিনেশন কাউন্সিলের সভায় প্রাথমিকভাবে নতুন বাজেটের আকার প্রাক্কলন করা হয়েছে ৫ লাখ ৯৩ হাজার ৩১৪ কোটি টাকা। চলতি অর্থবছরের বাজেটের আকার ৫ লাখ ৬৮ হাজার কোটি টাকা। সে হিসাবে নতুন বাজেটে আকার বাড়ছে প্রায় ২৫ হাজার ৩১৪ কোটি টাকা। অর্থ মন্ত্রণালয় সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।

সূত্র মতে, ২০২১-২২ অর্থবছরের বাজেটে নভেল করোনাভাইরাস মহামারির চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করে অর্থনীতি পুনরুদ্ধার করতে অগ্রাধিকার দেওয়া খাতগুলোর মধ্যে আছে স্বাস্থ্য, বিনিয়োগ, উৎপাদন, কর্মসংস্থান, মানবসম্পদ উন্নয়ন, দারিদ্র্যবিমোচন ও খাদ্য নিরাপত্তা জোরদার কর্মসূচি ইত্যাদি। সবকিছু ঠিক থাকলে রীতি অনুযায়ী চলতি বছরের জুনের প্রথম সপ্তাহের বৃহস্পতিবার জাতীয় সংসদে নতুন বাজেট উপস্থাপন করবেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল।

এ প্রসঙ্গে অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল এরই মধ্যে বলেছেন, করোনার প্রভাবে জীবন থেমে থাকতে পারে না। সবকিছু মোকাবিলা করেই লক্ষ্যে পৌঁছাতে হবে। আগামী অর্থবছর সরকারের অগ্রাধিকার পাওয়া অনেক প্রকল্পের কাজ সমাপ্তির পথে থাকবে। ওইসব প্রকল্পের অর্থ সময়মতো ছাড় করার ক্ষেত্রে কোনো শিথিলতা থাকবে না। বরাদ্দও থাকবে। এ ছাড়া নির্ধারিত লক্ষ্যমাত্রা অনুযায়ী রাজস্ব আদায়ের কর্মসূচি বাস্তবায়নে বেশি তৎপর থাকবে সংশ্লিষ্ট বিভাগ।

অর্থমন্ত্রী আরো বলেছেন, মানুষের কর্মসংস্থান নিশ্চিত করতে সরকারের নতুন বাজেটে দিকনির্দেশনাসহ কর্মসূচি ও প্রয়োজনীয় বরাদ্দ রাখা হবে। নতুন বাজেটে দেশি-বিদেশি বিনিয়োগ আকৃষ্ট করার প্রস্তাবনাও থাকবে। মোট কথা, সরকারের অষ্টম পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনা অনুযায়ীই ২০২১-২২ অর্থবছরের নতুন বাজেট প্রণীত হবে।

অর্থ মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা যায়, প্রতি অর্থবছরের নভেম্বর-ডিসেম্বর মাসে অর্থ মন্ত্রণালয়ের কো-অর্ডিনেশন কাউন্সিলের বৈঠক হয়। সে বৈঠকেই একটি প্রাথমিক রূপরেখা প্রণয়ন করা হয় পরবর্তী অর্থবছরের বাজেটের। সে রূপরেখা অনুযায়ী জুনে চূড়ান্ত বাজেট প্রণীত হয়।

সূত্র মতে, প্রথমে পুরো ৬ লাখ কোটি টাকার বাজেটের পরিকল্পনা করা হলেও তা থেকে পিছিয়ে এসেছে অর্থ মন্ত্রণালয়। কিছুটা ঘষামাজা করে নতুন অর্থবছরের জন্য ৫ লাখ ৯৩ হাজার ৩১৪ কোটি টাকার বাজেট প্রাক্কলন করা হয়েছে। ২০২১-২২ অর্থবছরের বাজেটে ১৬৮৭ কোটি টাকা বাড়িয়ে রাজস্ব আয়ের লক্ষ্যমাত্রা প্রাক্কলন করা হয়েছে ৩ লাখ ৮৩ হাজার ৭০০ কোটি টাকা। এটি জিডিপির ১০ দশমিক ৮ শতাংশ। সভায় ২ লাখ ৬ হাজার ৬১ কোটি টাকা ঘাটতির প্রস্তাব করা হয়েছে। এটি জিডিপির ৫ দশমিক ৮ শতাংশ। আগামী বাজেটে প্রাথমিকভাবে জিডিপি প্রবৃদ্ধি প্রাক্কলন করা হয়েছে ৭ দশমিক ৭ শতাংশ। চলতি অর্থবছরে প্রবৃদ্ধির হার ধরা হয়েছে ৮ দশমিক ২০ শতাংশ। আগামী অর্থবছরে মূল্যস্ফীতি ধরা হচ্ছে ৫ দশমিক ৩ শতাংশ। অন্যদিকে চলতি অর্থবছরে মূল্যস্ফীতি ধরা হয়েছে ৫ দশমিক ৪ শতাংশ। তাছাড়া নতুন বাজেটে জিডিপির আকার প্রাক্কলন করা হয়েছে ৩৫ লাখ ৫২ হাজার ৭৭৮ কোটি টাকা। আগামী বাজেটে বিনিয়োগ প্রাক্কলন করা হয়েছে জিডিপির ৩২ শতাংশ।

অর্থ মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা যায়, আগামী বাজেটে বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচির (এডিপি) আকার প্রাথমিকভাবে ধরা হচ্ছে ২ লাখ ১৩ হাজার কোটি টাকা, যা জিডিপির ৬ শতাংশ। এটি চলতি অর্থবছরের তুলনায় ১০ শতাংশ বেশি। চলতি অর্থবছরের বাজেটে এডিপির আকার ধরা হয়েছে ২ লাখ ৫ হাজার কোটি টাকা। তবে নতুন এডিপির আকারটি অর্থ মন্ত্রণালয়ের প্রাথমিক প্রস্তাব। আগামী মে মাসের প্রথম সপ্তাহে পরিকল্পনা মন্ত্রণালয় এডিপির আকারের প্রস্তাব চূড়ান্ত করতে পারে। সাধারণত ১৫ মের মধ্যে এডিপি জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের (একনেক) সভায় পাস হয়ে থাকে।

সূত্র মতে, আগামী অর্থবছরের বাজেটে ৯টি খাতকে বিশেষ অগ্রাধিকার দেওয়া হবে। খাতগুলো হচ্ছে বৈশ্বিক মহামারির প্রাদুর্ভাব মোকাবিলায় সরকারের অগ্রাধিকার প্রকল্পে প্রয়োজনীয় অর্থ বরাদ্দ নিশ্চিত করা, কোভিড-১৯ মোকাবিলায় প্রধানমন্ত্রী ঘোষিত প্রণোদনা প্যাকেজগুলোর সফল বাস্তবায়ন, কোভিড-১৯ নিয়ন্ত্রণে স্বাস্থ্য খাতে অতিরিক্ত বরাদ্দ, প্রণোদনা ও ক্ষতিপূরণ, অধিক খাদ্য উৎপাদনের লক্ষ্যে কৃষি যান্ত্রিকীকরণ, সেচ ও বীজ প্রণোদনা, কৃষি পুনর্বাসন, সারে ভর্তুকি প্রদান অব্যাহত রাখা; ব্যাপক কর্মসৃজন ও পল্লী উন্নয়ন, সামাজিক নিরাপত্তা কার্যক্রমের আওতা সম্প্রসারণ, গৃহহীন দরিদ্র জনগোষ্ঠীর জন্য গৃহনির্মাণ (মুজিববর্ষের প্রধান কার্যক্রম), নিম্ন আয়ের মানুষের মধ্যে বিনামূল্যে বা স্বল্পমূল্যে খাদ্য বিতরণ ব্যবস্থা চালু রাখা। এছাড়া শিক্ষা ও দক্ষতা উন্নয়নসহ সার্বিক মানবসম্পদ উন্নয়ন। এছাড়া পদ্মা সেতুসহ ১০ মেগা প্রকল্প নির্ধারিত সময়ে সম্পন্ন করার লক্ষ্যে বাজেট বরাদ্দ বাড়ানো হবে। করোনায় বিপর্যস্ত ব্যবসা-বাণিজ্য পরিস্থিতি বিবেচনায় নিয়ে আগামী বাজেটেও স্বস্তিদায়ক কর-ভ্যাট নীতি অবলম্বন করা হবে। রূপকল্প-২১ এর ধারাবাহিকতায় রূপকল্প-৪১ বাস্তবায়নের লক্ষ্যে দ্বিতীয় প্রেক্ষিত পরিকল্পনা শুরু হবে আগামী অর্থবছর থেকে। উন্নত দেশের স্বপ্ন নিয়ে বাস্তবায়ন কাজ শুরু হবে প্রেক্ষিত পরিকল্পনা ২০২১-২০৪১। এছাড়া আগামী বাজেটে করোনার আর্থিক ক্ষতি মোকাবিলায় দেশের ১ কোটি মানুষকে সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনীর আওতায় আনা হবে।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close