প্রতিদিনের সংবাদ ডেস্ক

  ১৯ মার্চ, ২০১৯

১১৬ উপজেলায় ভোট

রাঙামাটিতে দুর্বৃত্তের গুলিতে নিহত ৬

উপজেলা পরিষদ নির্বাচনের দ্বিতীয় দফায় গতকাল রাঙামাটিতে দুর্বৃত্তের গুলিতে কমপক্ষে ছয়জন নিহত হয়েছে। এছাড়া অন্য সব উপজেলায় ভোটারদের উপস্থিতি কম থাকায় ভোটের মাঠ ছিল অনেকটাই নিরুত্তাপ। এদিকে, গতকাল সোমবার সকাল ৮টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত চলা এই ভোট শান্তিপূর্ণ হয়েছে বলে জানিয়েছেন নির্বাচন কমিশন সচিব হেলালুদ্দিন আহমেদ। তিনি বলেছেন, দ্বিতীয় ধাপে অবাধ, নিরপেক্ষ ও শান্তিপূর্ণ ভোট হয়েছে, তবে রাঙামাটিতে হতাহতের খবর শুনেছি।

বিএনপিসহ অধিকাংশ দলের বর্জনের মধ্যে এবারের নির্বাচনে প্রথম ধাপে ভোটের হার ছিল ৪৩ শতাংশ। তবে সব মিলিয়ে প্রথম ধাপের চেয়ে ভোটের হার বেশি। আমাদের প্রতিনিধির পাঠানো খবরÑ

রাঙামাটি প্রতিনিধি জানান, ভোট শেষে সন্ধ্যা ৭টার দিকে বাঘাইছড়ির নয়মাইল এলাকায় ব্যালট বাক্সসহ নির্বাচনী সরঞ্জাম নিয়ে উপজেলা সদরে ফেরার পথে অজ্ঞাত দুর্বৃত্তদের গুলিতে এক নির্বাচন কর্মকর্তাসহ ছয়জন নিহত হয়েছেন। তারা হলেন আমির আলী (৩৭), মন্টু চাকমা (৫০), মিহির কান্তি দত্ত (৪০), আল আমিন (২৫), বিলকিস আক্তার (৫০) ও জাহানারা বেগম (৪০)। গতকাল রাত সাড়ে ৯টায় জেলা প্রশাসনের এক কর্মকর্তা সাংবাদিকদের এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন। এদের মধ্যে পোলিং অফিসার হচ্ছেন আমির হোসেন। তিনি স্থানীয় কিশলয় সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক। বাকি পাঁচজনই আনসার সদস্য। যাদের মধ্যে দুইজন নারীও রয়েছেন। এ হামলায় আহত হয়েছেন আরো ১৬ জন। আহতদের মধ্যে ১৪ জনকে হেলিকপ্টারে করে চট্টগ্রামে নেওয়া হয়েছে। গুরুতর আহতদের মধ্যে প্রিসাইডিং কর্মকর্তা ও কাচলং কলেজের প্রভাষক আবদুল হান্নান আরব, তৈয়ব ও মনিরের নাম জানা গেছে।

পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, সন্ধ্যা পৌনে ৬টার দিকে বাঘাইছড়ি উপজেলার সাজেক ইউনিয়নের কংলাক সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ভোট কেন্দ্র থেকে ভোটগ্রহণ শেষে দুটি জিপ গাড়িযোগে বাঘাইছড়ি উপজেলা সদরে ফিরছিলেন তারা। পথে ৯ মাইল পৌঁছলে পাহাড়ের ওপর থেকে একদল দুর্বৃত্ত তাদের গাড়ি লক্ষ্য করে গুলি করে। এতে আমীর হোসেন, বিলকিস আক্তার ও আল আমীন ঘটনাস্থলেই মারা যান। এছাড়া বাঘাইছড়ি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিলে মন্টু চাকমা, মিহির কান্তি দত্ত, জাহানারা ও অজ্ঞাতপরিচয় একজনের মৃত্যু হয়। এ ঘটনায় ১৬ জন আহত হয়। যাদের মধ্যে চারজনের অবস্থা আশঙ্কাজনক। গুরুতর আহত আবদুল হান্নান আরবের মাথায় গুলি লেগেছে।

বাঘাইছড়ি থানার ওসি এম এ মঞ্জুর ঘটনা নিশ্চিত করে বলেন, লাশ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে রাখা হয়েছে। এ ঘটনায় বাঘাইছড়ি উপজেলায় থমথমে পরিস্থিতি বিরাজ করছে।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা নাদিম সারোয়ার বলেন, আহতদের হেরিকপ্টারযোগে চট্টগ্রামে সামরিক হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। তবে কারা এ ঘটনা ঘটিয়েছে তা জানা যায়নি।

২৭ বিজিবির জোন কমান্ডার লে. কর্নেল মাহাবুল ইসলাম জানান, ওই এলাকায় বিজিবি, পুলিশ ও আনসার সদস্যদের মোতায়েন করা হয়েছে। সন্ত্রাসীদের ধরতে যৌথভাবে অভিযানের প্রস্তুতিও চলছে।

দ্বিতীয় দফার উপজেলা নির্বাচনে রাঙামাটির সাতটি উপজেলায় ভোট হয়। এর মধ্যে বাঘাইছড়ি উপজেলাও রয়েছে। এ হামলার দায়িত্ব স্বীকার করেনি কেউ। প্রশাসনও এখন পর্যন্ত দুর্বৃত্তদের পরিচয় নিশ্চিত করতে পারেনি। এ নির্বাচনে রাজনৈতিক দলের প্রার্থী ছিলেন না। পার্বত্য চট্টগ্রামের আঞ্চলিক দল সন্তু লারমার নেতৃত্বাধীন জনসংহতি সমিতি ( জেএসএস) ও এই দলটি ভেঙে কয়েক বছর আগে গঠন করা জনসংহতি সমিতির (এমএন লারমা) দুই প্রার্থী নির্বাচনে অংশ নেন। জেএসএস প্রার্থী বড়ঋষি চাকমা অনিয়মের অভিযোগ এনে দুপুরে ভোট বর্জন করেন। নির্বাচনে এমএন লারমার প্রার্থী ছিলেন সুদর্শন চাকমা।

চট্টগ্রাম ব্যুরো : উত্তর চট্টগ্রামের সাত উপজেলায় ভোট হওয়ার কথা থাকলেও একক প্রার্থী হওয়ায় রাউজান ও মিরসরাইয়ে ভোট হয়নি। সীতাকুন্ড, সন্দ্বীপ, ফটিকছড়ি, হাটহাজারী ও রাঙ্গুনিয়ায় ভোটগ্রহণ হয়েছে। এ পাঁচ উপজেলায় চেয়ারম্যান, ভাইস চেয়ারম্যান ও মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান পদে ৩৫ জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছেন। রিটার্নিং কর্মকর্তা ও সিনিয়র জেলা নির্বাচন কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, শান্তিপূর্ণ পরিবেশে ভোট শেষ হয়েছে।

হাটহাজারীতে চেয়ারম্যান পদে আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী এস এম রাশেদুল আলম বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হয়েছেন। এদিকে, হাটহাজারী কলেজ কেন্দ্রে ভাইস চেয়ারম্যান প্রার্থী উদয় কুমার সেন (তালা) প্রতীকে জাল ভোট দেওয়ার সময় ধরা পড়েন। পরে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মোহাম্মদ রুহুল আমীন এ রকম অপরাধ না করবে মর্মে মুচলেকা নিয়ে তাকে ছেড়ে দেন।

সিলেট : দু-একটি বিচ্ছিন্ন ঘটনা ছাড়া সিলেটের ১২টি উপজেলায় ভোট সম্পন্ন হয়েছে। অন্তত ২০ থেকে ২৫টি কেন্দ্রে ঘুরে দেখা গেছে, দু-একজন করে কিছুক্ষণ পরপর ভোট দিতে আসেন। আবার অনেক কেন্দ্রে মানুষের উপস্থিতি থাকলেও তা ছিল হাতেগোনা।

শহরতলির আখালিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে ভাইস চেয়ারম্যান প্রার্থী পারভেজ আহমদ (বই) ও মকবুল হোসেন খানের (টিউবওয়েল) সমর্থকরা জাল ভোট দেওয়ার অভিযোগ এনে সংঘর্ষে জড়ায়। পরে পুলিশ কয়েক রাউন্ড রাবার বুলেট নিক্ষেপ করে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।

দক্ষিণ সুরমার ইছরাব আলী উচ্চবিদ্যালয় কেন্দ্রে কর্মরত আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর দুই সদস্য বলেন, ভোটারদের উপস্থিতি কম। তাই চাপও ছিল না।

গোলাপগঞ্জের পৌরসভা কেন্দে দুপুরে সাংবাদিককে লাঞ্ছিত করার ঘটনা ঘটেছে। জৈন্তাপুর উপজেলার ফতেহপুর হেমু সরকারি বিদ্যালয়ে জাল ভোটার ধরা পড়ে।

মৌলভীবাজার : জেলার ৭ উপজেলায় চেয়ারম্যান পদে ২০, ভাইস চেয়ারম্যান (পুরুষ) ৩৫ এবং ভাইস চেয়ারম্যান (মহিলা) পদে ২৮ জনসহ ৮৩ জন প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন। তবে আজব ভোট হয়েছে কাশিনাথ আলাউদ্দিন স্কুল অ্যান্ড কলেজ কেন্দ্রে। সারা দিনে ভোট পড়েছে মাত্র ৪১টি। ৯টি বুথের মধ্যে একটি বুথে কোনো ভোটই পড়েনি। সকাল থেকে এই কেন্দ্র ভোটার শূন্য ছিল। সকাল ১১টা পর্যন্ত ভোট পড়েছে ৮টি। আর ৪টায় তা দাঁড়িয়ে ৪১ এ। দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তাদের ভোট গণনা করতে সময় লেগেছে মাত্র কয়েক মিনিট। ফলও ঘোষণা হয়েছে।

ঈশ্বরদী (পাবনা) : ভোটারদের মধ্যে উৎসাহ-উদ্দীপনা ছিল না। কোনো কোনো কেন্দ্রে ১০-১২ ভাগ, আবার কোনো কোনো কেন্দ্রে ২৫-৩০ ভাগ ভোট পড়েছে। বুথগুলোতে ভোট দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রিসাইডিং অফিসার, সহকারী প্রিজাইডিং অফিসার, পোলিং অফিসার এবং পোলিং এজেন্টদের অলস সময় কাটাতে হয়েছে। কোথাও কোনো সহিংসতার ঘটনা ঘটেনি। তবে ভ্রাম্যমাণ আদালতে আচরণবিধি লঙ্ঘনের দায়ে তিনজনকে ৩০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়েছে।

সারিয়াকান্দি (বগুড়া) : সারিয়াকান্দিতে আওয়ামী লীগ মনোনীত মুনজিল আলী সরকারের সমর্থকদের সঙ্গে দলের বিদ্রোহী প্রার্থী আবদুস সালামের সমর্থকের সংঘর্ষ ও ধাওযা-পালটাধাওয়া হয়েছে। এতে উভয় পক্ষের সাতজন আহত হয়েছে। পুলিশ পিন্টু ও রেজাউল নামে দুইজনকে আটক করেছে। এছাড়া সংঘর্ষ চলাকালে প্রায় ৩০ মিনিট ভোটগ্রহণ বন্ধ ছিল বলে ওই কেন্দ্রের প্রিসাইডিং অফিসার বদিউজ্জামান জানান।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close