শাহ্জাহান সাজু

  ১৮ জানুয়ারি, ২০১৯

অর্থ পাচার রোধে কঠোর অভিযানে এনবিআর

চলতি মাস থেকে আন্তর্জাতিক লেনদেনের তথ্য সংগ্রহের কাজ শুরু

অর্থ পাচার ঠেকাতে আন্তর্জাতিক পর্যায়ে লেনদেন করে এমনÑ প্রতিষ্ঠানগুলোর তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহ শুরু করেছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)। কোম্পানিগুলোর তালিকা প্রস্তুত করে চলতি মাস থেকে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে কয়েকটি প্রতিষ্ঠানের আন্তর্জাতিক লেনদেনের তথ্য সংগ্রহের কাজ শুরু করেছে এনবিআরের ট্রান্সফার প্রাইসিং সেল। এনবিআরের নবম বোর্ড সভায় এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। সিদ্ধান্ত অনুযায়ী অডিট কাজ শেষ করে প্রতিষ্ঠানগুলোর পৃথক ট?্যাক্স প্রোফাইল তৈরি করা হবে। এনবিআর সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।

এ বিষয়ে এনবিআরের আয়কর বিভাগের একাধিক কর্মকর্তার সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, বোর্ড সভার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী তথ্য সংগ্রহের কাজ শুরু হয়েছে। সময়সাপেক্ষ হলেও প্রাথমিকভাবে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে ৯২১টি প্রতিষ্ঠানকে ধাপে ধাপে নিরীক্ষার আওতায় আনা হবে। প্রাথমিক পর্যায়ে কয়েকটি প্রতিষ্ঠানের দেশীয় ও আন্তর্জাতিক ব্যবসার ধরন এবং লেনদেনের উপাত্ত সংগ্রহ করা হচ্ছে। তারপর প্রতিষ্ঠানের ধরন অনুসারে প্রশ্নপত্র তৈরি করে কোম্পানিগুলোর কাছ থেকে উত্তর নিয়ে পরবর্তী পদক্ষেপ নির্ধারণ করা হবে বলে জানান তারা।

এনবিআর সূত্র জানায়, ট্রান্সফার প্রাইসিং সেল (টিপিসি) মূলত প্রতিষ্ঠানগুলোর প্রধান কার্যালয়, শাখা অফিস ও আঞ্চলিক অফিসসহ গুরুত্বপূর্ণ অফিসগুলোতে জরিপের মতো করে কার্যক্রম চালাবে। এরপর তাদের জরিপের তথ্য অনুযায়ী পৃথক কর ফাইল তৈরি করা হবে।

বোর্ড সভা সূত্রে জানা যায়, ৯২১টি প্রতিষ্ঠানের তালিকা থেকে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে প্রতিষ্ঠান নির্বাচন করে তাদের আন্তর্জাতিক লেনদেন সংগ্রহ করার বিষয়ে চেয়ারম?্যান অনুমতি দিয়েছেন। এতে আন্তর্জাতিক লেনদেন রয়েছে এ ধরনের প্রতিষ্ঠানে ট?্যাক্স প্রোফাইল তৈরি করা যাবে। দেশের অভ্যন্তরে কার্যক্রম পরিচালনা করছে এমন বহুজাতিক কোম্পানির আন্তর্জাতিক লেনদেন বিশেষভাবে নিরীক্ষার উদ্দেশে কোম্পানির বিদেশে অবস্থিত মূল কোম্পানি কিংবা অন্য কোম্পানির সঙ্গে লেনদেনের সব তথ্য পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে যাচাই-বাছাইয়ের উদ্যোগ নিয়েছে এনবিআর।

এনবিআর সূত্র আরও জানায়, বিদেশি কোম্পানিগুলোর শাখা কোম্পানি সুদ, মুনাফা, কোনো সম্পদ কিংবা কোনো পণ্যের মূল্য মূল কোম্পানিতে পাঠায়। এছাড়া পণ্য বা সেবা আমদানির মূল্যও মূল কোম্পানি বা অন্য কোনো কোম্পানিকে পাঠায়। এটি ট্রান্সফার প্রাইসিং হিসেবে পরিচিত। তবে পণ্যের দর কম বা বেশি দেখিয়ে বা মুনাফার অর্থ প্রেরণে মিথ্যা তথ্য দেওয়ার মাধ্যমে কর ফাঁকির পাশাপাশি অর্থ পাচারের অভিযোগ দীর্ঘদিনের।

অভিযোগ রয়েছে, বহুজাতিক কোম্পানিগুলো বছরে হাজার হাজার কোটি টাকা পাচার করে থাকে। সাধারণত যেসব দেশে কর হার বেশি, সেসব দেশের প্রতিষ্ঠান থেকে নানা কৌশলে কর হার কম এমন দেশের সহযোগী প্রতিষ্ঠানে অর্থ স্থানান্তর করা হয়। এতে বহুজাতিক প্রতিষ্ঠানের আয় বাড়ে কিন্তু কর কম দিতে হয়। যা এক ধরনের অর্থ পাচার। এতে প্রাপ্য রাজস্ব থেকে বঞ্চিত হচ্ছে অপেক্ষাকৃত বেশি কর রয়েছে এমন দেশগুলো। এভাবে বিশ্বজুড়ে অনেক বহুজাতিক কোম্পানি কর এড়িয়ে যায় বা কর ফাঁকি দিয়ে থাকে।

প্রসঙ্গত, বহুজাতিক কোম্পানিসহ আন্তর্জাতিক লেনদেনে স্বচ্ছতা এনে কর আদায়ের লক্ষ্যে সরকার ২০১২ সালে ট্রান্সফার প্রাইসিং আইন প্রণয়ন করে। এর আলোকে ট্রান্সফার প্রাইসিং সেল গঠন করা হয়। এটির কার্যক্রম শুরু হয় ২০১৪ সালে। কিন্তু এখনো পর্যন্ত বহুজাতিক কোম্পানিগুলোর লেনদেন সংক্রান্ত নথি বিশেষায়িত নিরীক্ষা করা শুরু হয়নি। এর মূল কারণ হিসেবে বরাবরই এনবিআর লোকবলে ঘাটতি ও কৌশলগত কারণকে দায়ী করে আসছে। বছরে কমপক্ষে ৩ কোটি টাকা আন্তর্জাতিক লেনদেন হয়, এমন ১০০ থেকে ১২০টি কোম্পানি এনবিআরের কাছে তাদের সব লেনদেনের বিবরণী পাঠায়। যদিও দেশে বহুজাতিক কোম্পানির সংখ্যা প্রায় পৌনে দুইশ’। প্রাথমিকভাবে এর মধ্য থেকেই সন্দেহজনক লেনদেনকারী বা উচ্চ ঝুঁকিতে থাকা কোম্পানির তথ্য যাচাই-বাছাই কার্যক্রম চলমান। যেসব কোম্পানির লেনদেনে সন্দেহ তৈরি হবে, সেগুলোতে বিশেষায়িত অডিট কার্যক্রম পরিচালনা করবে বিশেষ সেল।

সূত্র জানায়, এনবিআরের ট্রান্সফার প্রাইসিং সেলকে সম্প্রতি পুনর্গঠন করা হয়। সেন্ট্রাল ইন্টিলিজেন্স সেলের (সিআইসি) যুগ্ম মহাপরিচালক মো. শাব্বির আহমদকে ট্রান্সফার প্রাইসিং সেলের সমন্বয়কের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close