নিজস্ব প্রতিবেদক

  ১২ অক্টোবর, ২০১৮

আমরা অসাধ্য সাধন করেছি

প্রধানমন্ত্রী

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, বাংলাদেশের মানুষের আর্থসামাজিক উন্নয়নই সরকারের লক্ষ্য। তিনি বলেন, ‘আমাদের যে লক্ষ্য ছিল, বাংলাদেশকে আমরা উন্নত ও সমৃদ্ধ করব, দারিদ্র্য দূর করব। সে ব্যাপারে আমরা সাফল্য অর্জন করেছি। দারিদ্র্যের হার ৪০ থেকে ২১ শতাংশে নামিয়ে এনেছি। বাংলাদেশের মানুষের আয় বৃদ্ধি পেয়েছে। আমরা সবার বেতন-ভাতা বৃদ্ধি করেছি। পৃথিবীতে কোনো দেশ এত অল্প সময়ে এত উন্নতি সাধন করতে পেরেছি কিনা জানি না। আমরা কিন্তু সেই অসাধ্য সাধন করতে পেরেছি। গতকাল বৃহস্পতিবার সকালে গণভবনে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে ২০ জেলায় ৩৩টি উন্নয়ন প্রকল্পের উদ্বোধন করে প্রধানমন্ত্রী এ কথা বলেন। এর মধ্যে রয়েছে সেতু, নগর স্বাস্থ্য কেন্দ্র, মাতৃসদনসহ বিভিন্ন প্রকল্প।

এদিকে, সাংবাদিক কল্যাণ ট্রাস্টে ২০ কোটি টাকা অনুদান দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। গতকাল গণভবনে সাংবাদিক নেতাদের হাতে এই অনুদানের চেক তুলে দেন তিনি। এ সময় উপস্থিত ছিলেন তথ্য প্রতিমন্ত্রী তারানা হালিম, প্রধানমন্ত্রীর তথ্য উপদেষ্টা ইকবাল সোবহান চৌধুরী, পিআইবির মহাপরিচালক, সাংবাদিক কল্যাণ ট্রাস্টের এমডি শাহ আলমগীর, বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের (বিএফইউজে) সভাপতি মোল্লা জালাল, মহাসচিব শাবান মাহমুদ এবং ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের (ডিইউজে) সভাপতি আবু জাফর সূর্য ও সাধারণ সম্পাদক সোহেল হায়দার চৌধুরী।

সরকারের উন্নয়ন সফলতার কথা তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, পৃথিবীতে কোনো দেশ এত অল্প সময়ে এত উন্নতি সাধন করতে পেরেছি কিনা জানি না। আমরা কিন্তু সেই অসাধ্য সাধন করতে পেরেছি। টানা ১০ বছর আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় থাকার সুফল তুলে ধরে সরকারের ধারাবাহিকতার ওপর গুরুত্বারোপ করেন শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, এর ফলশ্রুতিতেই বাংলাদেশের আর্থসামাজিক উন্নয়ন হচ্ছে। বিভিন্ন প্রকল্প উদ্বোধন করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘সব দিক থেকে মানুষ যেন একটু ভালোভাবে বাঁচতে পারে, তার ব্যবস্থা করেছি।’ এ সময় কক্সবাজারসহ বিভিন্ন জেলার যোগাযোগ ব্যবস্থা উন্নয়নে সরকার কাজ করে যাচ্ছে বলেও জানান প্রধানমন্ত্রী।

উন্নয়ন কাজ শেষে তা রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্ব জনগণের বলে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী আরো জানান, ২০০৮ সালে নির্বাচিত হওয়ার পর নির্বাচনী ইশতেহার অনুযায়ী জনগণের জীবনমান উন্নয়নে কাজ করে যাচ্ছে সরকার। যার ফলে এরই মধ্যে শুরু হয়ে গেছে দিনবদলের যাত্রা।

স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদফতরের অধীনে বাস্তবায়িত সাতটি সেতু, একটি জেটি, ৯টি উপজেলা পরিষদের সম্প্রসারিত প্রশাসনিক ভবন ও হলরুম এবং ছয়টি নগর মাতৃসদন ভবন ও ১০টি নগর স্বাস্থ্য কেন্দ্র উদ্বোধন করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, জাতির পিতার আদর্শ বুকে ধারণ করে নিজের জীবনকে উৎসর্গ করেছি।

তিনি বলেন, ২০০৮ সালে নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পর আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন মহাজোট সরকার ক্ষমতায় এসে দেশের উন্নয়নে ব্যাপক কর্মসূচি বাস্তবায়ন শুরু করে। সব দিক থেকে মানুষ যেন ভালোভাবে বাঁচতে পারে, সেই চেষ্টা তার সরকার করছে।

এ অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী দিনাজপুরের কান্তজিউ মন্দির সড়কে ডেপা নদীর ওপর ২২৮ মিটার দীর্ঘ সেতু, জামালপুরে ব্রহ্মপুত্র নদের ওপর ৫৬০ মিটার দীর্ঘ ‘শহীদ লেফটেন্যান্ট শেখ জামাল সেতু’ ও ‘শহীদ মেজর জেনারেল খালেদ মোশাররফ বীর উত্তম সেতু’, টাঙ্গাইলে ধলেশ্বরী নদীর ওপর ৫২০.৬০ মিটার দীর্ঘ ‘দেশরতœ জননেত্রী শেখ হাসিনা সেতু’, শ্রীপুর উপজেলায় ৩১৫ মিটার দীর্ঘ সেতু, মাদারীপুরে আড়িয়াল খাঁ নদের ওপর ৬৮৬.৭৫ মিটার দীর্ঘ ‘শেখ লুৎফর রহমান সেতু’ এবং নড়াইলে চিত্রা নদীর ওপর ‘শেখ রাসেল সেতুর’ উদ্বোধন করেন।

এছাড়া টেকনাফ-মিয়ানমার ট্রানজিট ঘাটে নির্মিত ৫৫০ মিটার দীর্ঘ জেটিরও উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, আমি জানি না পৃথিবীতে কোনো দেশ এত অল্প সময়ে এত উন্নতি সাধন করতে পারে কিনা। কিন্তু আমরা সেই অসাধ্য সাধন করতে পেরেছি।

এ অনুষ্ঠান থেকে প্রধানমন্ত্রী ঢাকার মিরপুর এক নম্বর সেকশনে, গাজীপুরের দক্ষিণ কোলার বাজারের ধীলাশ্রমে, রংপুরের পূর্ব খাসবাগে, কিশোরগঞ্জের হারুয়ায়, কুষ্টিয়ার মিলের পাড়ায় ও গোপালগঞ্জ পৌরসভায় ছয়তলা নগর মাতৃসদন এবং গাজীপুরের নীলের পাড়ায়, কুমিল্লার কমলাপুর, বাউবন্দ ও রসুলপুরে, রংপুরের এরশাদনগর ও জুমাপুড়ায়, কুষ্টিয়ার বারাদি ও বড়খাদায়, কিশোরগঞ্জের নূরানী ও তারাপাশায় তিনতলা নগর স্বাস্থ্য কেন্দ্রের উদ্বোধন করেন।

তিনি বলেন, গত ১০ বছরে জনগণের জীবনমানের উন্নয়ন হয়েছে এবং দিনবদলের যাত্রা শুরু হয়েছে। নীলফামারীর ডোমার, নওগাঁর আত্রাই ও রানীনগর, নাটোরের সিংড়া, সিরাজগঞ্জের তাড়াশ, কিশোরগঞ্জের সদর উপজেলা, মানিকগঞ্জের সাটুরিয়া, যশোরের শার্শা এবং নোয়াখালীর সদর উপজেলায় ‘উপজেলা পরিষদের সম্প্রসারিত প্রশাসনিক ভবন ও হলরুমের উদ্বোধন করেন শেখ হাসিনা।

ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে মাদারীপুর, কুমিল্লা, নওগাঁ, ময়মনসিংহ এবং গাজীপুরে সরকারি বিভিন্ন কর্মসূচির উপকারভোগীদের সঙ্গেও কথা বলেন তিনি।

অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেন স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রী খন্দকার মোশাররফ হোসেন। স্বাগত বক্তব্য দেন স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব ড. জাফর আহমেদ খান। অনুষ্ঠান সঞ্চালন করেন প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব মো. নজিবুর রহমান।

নড়াইল প্রতিনিধি জানান, নড়াইলের চিত্রা নদীর ওপর নির্মিত শেখ রাসেল সেতুর উদ্বোধন অনুষ্ঠানে নড়াইল জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে উপস্থিত ছিলেন নবাগত জেলা প্রশাসক আনজুমান আরা, নড়াইল-২ সংসদ সদস্য শেখ হাফিজুর রহমান, জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান সোহরাব হোসেন বিশ্বাস, পুলিশ সুপার মোহাম্মদ জসিম উদ্দিন, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) মো. ইয়ারুল ইসলাম, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) কাজী মাহবুবুর রশীদ, জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি সুভাস চন্দ্র বোস, সাধারণ সম্পাদক নিজাম উদ্দিন খান নিলু, এলজিইডির নির্বাহী প্রকৌশলী বিধান চন্দ্র সোমদ্দার প্রমুখ।

সেতুটি চালুর ফলে জেলার তিন উপজেলার প্রায় সাত লাখ মানুষের দীর্ঘদিনের দুর্ভোগ লাঘব এবং ফরিদপুর, গোপালগঞ্জ, ফরিদপুর, মাগুরাসহ ঢাকার সঙ্গে যোগাযোগ বৃদ্ধি পেল। নড়াইলের সাধারণ জনগণের প্রাণের দাবি ছিল চিত্রা নদীর পুরাতন ফেরিঘাটে একটি সেতু নির্মাণের।

জানা গেছে, স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদফতর এলজিইডির বাস্তবায়নে ২৯ কোটি ১১ লাখ টাকা ব্যয়ে ২০১৫ সালের মাঝামাঝি এ সেতুর নির্মাণ কাজ শুরু হয়। সেতু নির্মাণের দায়িত্ব পায় এমবিইএল-ইউডিসি জেভি। সেতুটি ফ্লাইওভারের মতো হওয়ায় এ সেতু দেখতে এবং সময় কাটাতে প্রতিদিন বিকেলে অনেক মানুষ এখানে আসেন।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close