বিশেষ প্রতিনিধি
ঢাকা রূপ নেয় সমাবেশ আর মিছিলের শহরে
অসহযোগ আন্দোলনে উত্তাল পূর্ব পাকিস্তান। উত্তাপ ছড়িয়ে পড়ছে সর্বত্র। ঢাকা, চট্টগ্রাম, টঙ্গী, রাজশাহী, রংপুর, খুলনাসহ নানা জায়গা থেকে সংঘর্ষের খবর আসছে। অনেক স্থানেই বলবৎ রয়েছে সূর্যাস্ত থেকে সূর্যোদয় পর্যন্ত সান্ধ্য আইন। লাগাতার হরতালে অচল সবকিছু। ঢাকা রূপ নিয়েছে সমাবেশ আর মিছিলের শহরে। উত্তাল জনসমুদ্রের ক্ষুব্ধ গর্জন উত্তাল করে রাখছে পুরো শহরকে।
আজ ৬ মার্চ। একাত্তরের এদিন ষষ্ঠ দিনের মতো হরতাল পালিত হলো ঢাকায়। রাস্তায় নেমে এলো সর্বস্তরের মানুষ। বঙ্গবন্ধুর নির্দেশে কেবল দুপুর আড়াইটা থেকে বিকেল সাড়ে ৪টা পর্যন্ত টাকা তোলা ও বেতন প্রদানের জন্য খোলা থাকল বিভিন্ন ব্যাংক ও বেসরকারি অফিস। শহরের নানা স্থানে বিক্ষোভ সমাবেশ ও মিছিল করল শিল্পী, সাংবাদিক, শিক্ষক, ছাত্র ইউনিয়ন (মতিয়া গ্রুপ), গণশিল্পী গোষ্ঠী, উদীচী, ফরোয়ার্ড স্টুডেন্টস ও বাংলা ন্যাশনাল লীগসহ নানা সংগঠন।
কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে অনুষ্ঠিত মহিলা আওয়ামী লীগের সমাবেশে বাঁশের লাঠি, লোহার রড ও কালো পতাকা নিয়ে হাজির হলো বিক্ষুব্ধ নারীরা। সমাবেশ শেষে তাদের জঙ্গি মিছিল কাঁপিয়ে তুলল শহরকে। সন্ধ্যায় এক বিরাট মশাল মিছিল বের করে ছাত্রলীগ।
ভাইস অ্যাডমিরাল এস এম আহসানকে অপসারণ করে জেনারেল টিক্কা খানকে পূর্ব পাকিস্তানের নতুন গভর্নর নিযুক্ত করল প্রেসিডেন্ট ও প্রধান সামরিক আইন প্রশাসক জেনারেল ইয়াহিয়া খান। দুপুরে রাওয়ারপিন্ডি থেকে এক বেতার ভাষণে পূর্ব পাকিস্তানের জনতাকে দুষ্কৃতকারী আখ্যা দেয় প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া খান। ২৫ মার্চ জাতীয় পরিষদের অধিবেশন আহ্বান করে তিনি বলেন, যাই ঘটুক না কেন যতদিন পর্যন্ত পাকিস্তান সেনাবাহিনী আমার হুকুমে রয়েছে এবং আমি পাকিস্তানের রাষ্ট্রপ্রধান রয়েছি, ততদিন পূর্ণাঙ্গ ও নিরঙ্কুশভাবে পাকিস্তানের অখন্ডতা রক্ষা করব।
ইয়াহিয়ার সদম্ভ ভাষণে বিক্ষোভে ফেটে পড়ে গোটা পূর্ব পাকিস্তান। পথে নেমে আসে প্রতিবাদে জ্বলে ওঠা বাঙালি। ঢাকা ও নারায়ণগঞ্জে খন্ড খন্ড স্বতঃস্ফূর্ত প্রতিবাদ মিছিল হয়।
বঙ্গবন্ধুর বাসভবনে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় ও প্রাদেশিক শাখার ওয়ার্কিং কমিটি এক যুক্ত জরুরি বৈঠকে বসে। কয়েক ঘণ্টা স্থায়ী সে রুদ্ধদ্বার বৈঠকে ইয়াহিয়ার বেতার ভাষণের আলোকে দেশের সর্বশেষ রাজনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা হয়।
অন্যদিকে রাওয়ালপিন্ডিতে পিপলস পার্টির চেয়ারম্যান জুলফিকার আলি ভুট্টো, পেশোয়ারে পাকিস্তান মুসলিম লীগ প্রধান খান আবদুল কাইয়ুম, পশ্চিম পাকিস্তান পিডিপি প্রধান নবাবজাদা নসরুল্লাহ খান ও কাউন্সিল মুসলিম লীগ প্রধান মিয়া মমতাজ দৌলতানা প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়ার ভাষণকে স্বাগত জানান।
এদিকে লাহোরে এদিন বিকেলে এক বিক্ষোভ মিছিল থেকে নিখিল পাকিস্তান আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি বিএ সলিমী ও পাঞ্জাব প্রাদেশিক আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক হামিদ সরফরাজসহ ১৫ জনকে গ্রেফতার কর হয়।
অন্যদিকে সরকারের সমালোচনা করে লাহোরে কাউন্সিল মুসলিম লীগ নেতা এয়ার মার্শাল নূর খান এক সাক্ষাৎকারে বলেন, শেখ মুজিবুর রহমানের দেশ শাসনের বৈধতা রয়েছে।
৭ মার্চের সমাবেশে বঙ্গবন্ধুর প্রস্তাবিত ভাষণ নিয়ে চলতে থাকে নানা জল্পনা-কল্পনা। ছাত্রলীগ ও আওয়ামী লীগের জাতীয়তাবাদী শক্তি সমাবেশকে কেন্দ্র করে পর্যাপ্ত জাতীয় পতাকা এবং জাতীয় সংগীতের ব্যবস্থা করে। ছাত্রলীগ ও ডাকসু নেতারা রেসকোর্স ময়দান থেকে বঙ্গবন্ধুর ভাষণ সরাসরি প্রচারের দাবি জানান। শহরজুড়ে সভার মাইকিং করা হয়।
"