সাঈদ চৌধুরী

  ১৯ মে, ২০১৭

শিক্ষা

অভিভাবকদের বলছি

পরীক্ষার ফলাফলে এখন কে বেশি চিন্তিত থাকেন! পরীক্ষার্থী, নাকি অভিভাবক? সত্যি বলতে গেলে, পরীক্ষার্থীরা এখন বেশি চিন্তা করে না পরীক্ষার ফলাফল নিয়ে। চাপটা থাকে মা-বাবার মাথার ওপর। এসএসসি পরীক্ষার ফল প্রকাশিত হলো সেদিন। আমার নিকটাত্মীয়ের ছেলে পরীক্ষা দিয়েছিল। ভালোই ফল করেছে। জিপিএ-৫ না পেলেও সে পেয়েছে ৪.৬৯। কিন্তু তার বাবা-মা এতে সন্তুষ্ট হতে পারেননি। ক্ষুব্ধ এবং রুষ্ট পিতা তার ছেলেকে দেওয়া সাইকেলে তালা মেরেছেন, বইগুলো ওপরে তুলে রেখেছেন; এবং বলেছেন, তাকে আর পড়াশোনা করতে হবে না। এমনকি তারা কোনো ধরনের মিষ্টিও বিতরণ করেননি। সবকিছুর পেছনে কারণ একটাই। আর তা হলো, তাদের সন্তান ‘এ’-প্লাস পায়নি।

ছেলেটি আগেই তার ভয়ের কথা জানিয়েছিল। সে এও বলেছিল, ‘আমি যা লিখেছি, সব নিজে থেকে লিখেছি; এবং আমার গণিত পরীক্ষা খারাপ হয়েছে।’ আমি তখন তাকে বলেছিলাম, ‘তুমি শুধু ভালো করার চেষ্টা করে যাও।’ কিন্তু সে বারবারই বলছিল, ‘এ+ না পেলে বাবা-মা বাড়িতেই থাকতে দেবে না আমাকে।’

শুধু তার ক্ষেত্রে নয়, আমার আশপাশের সবার বাড়িতে যাদের সন্তান পরীক্ষা দিয়েছে, তারাও একই আশা নিয়ে বসে আছেন, সন্তান এ+ পাবে। আর যারা যারা এ+ পায়নি, তাদের কারো বাড়ি থেকেই মিষ্টি বিতরণ হয়নি!

ফলাফল পাওয়ার পর বাড়িতে সুনসান নীরবতা এবং তা দেখে আপনার নিঃসন্দেহে মনে হতে পারে, এই বাড়ির মানুষগুলো গেল কোথায়? আমি তেমন ভালো ফলাফল উপহার দিতে পারিনি। কিন্তু আমার বাবা-মা রেজাল্টের পর অনেক আনন্দ নিয়ে মিষ্টি বিতরণ করেছিলেন। এতে আমি উৎসাহ পেয়েছিলাম সামনে এগিয়ে যাওয়ার। কিন্তু বর্তমানে ফলাফল ঘোষণা হওয়ার পর দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে আত্মহত্যার খবরও শোনা যাচ্ছে। শোনা যাচ্ছে, বিভিন্ন শিক্ষার্থীর বিবিধ সামাজিক ও মানসিক সমস্যার কথা।

এক ছেলের কথা শুনলাম, তার ফলাফল খারাপ হওয়ায় বাবা-মা বকেছে বলে নানাবাড়িতে গিয়ে থাকছে এবং বাসায় আসছে না! তার মানে, সে নিজে খুব বেশি হতাশ হয়েছে এবং নিজের ওপর বিশ্বাস হারাতে শুরু করেছে। এমনিতেই হতাশাগ্রস্ততা থেকে বর্তমানে সন্তানরা জঙ্গিবাদে জড়িয়ে পড়ছে, সেখানে সন্তানদের এভাবে নিরুৎসাহিত করা কতটা যৌক্তিক? এ নিয়ে

ভাববার সময় এসেছে।

এ+ প্রাপ্তির জন্য ছাত্র এবং অভিভাবকদের ঝাঁপিয়ে পড়ার কারণ খুঁজতে গেলে আরেকটি বড় মাপের কারণ হচ্ছে, ভালো কলেজে ভর্তির জন্য বেশি জিপিএ অর্জন। যারা যেনতেনভাবে এ+ পেয়ে ভালো কলেজগুলোতে ভর্তি হচ্ছে, তারা পরে তাদের অবস্থান ধরে রাখতে পারছে না। এর বড় প্রমাণ হলো, ইদানীং ইউনিভার্সিটিগুলোতে ভর্তি পরীক্ষার ফলাফল। এ ক্ষেত্রে কলেজে ভর্তির জন্য পুনরায় ভর্তি পরীক্ষা পদ্ধতি চালু করা যায় কিনা ভেবে দেখা প্রয়োজন। ভর্তি পরীক্ষা পদ্ধতি চালু হলে অবশ্যই অযোগ্য ‘এ’-প্লাসধারীরা প্রথমেই বাদ পড়ে যাবে এবং সঠিক মেধাবীরা ভালো প্রতিষ্ঠানে পড়ার সুযোগ পাবে।

ফলাফল যা-ই হোক না কেন, সন্তানের পাশে থাকাটা বাবা-মার অন্যতম দায়িত্ব এবং কর্তব্য। তাকে তার মতো করে ভাবতে সাহায্য করা, পরবর্তীতে সে কিভাবে তার জীবনকে সুন্দর করবে, সেই ব্যাপারে সহায়তা করাই অভিভাবক মহলের কাজ। রেজাল্ট এবং সার্টিফিকেট একটি জীবনের সবকিছু নয়। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়টি হচ্ছে, সন্তানকে ভালো মানুষ হিসেবে গড়ে তোলা এবং তাকে উপযুক্ত পরিবেশের ব্যবস্থা করে দেওয়া। সবাই এ+ চায়। তার মানে, এ+ একটি অ্যান্টি-ব্যাক্টেরিয়াল টিকার মতো হয়ে গেছে, যা একবার পেলেই সব সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে বলে ধরে নিচ্ছেন এখনকার অভিভাবকরা। সন্তানকে সঠিক শিক্ষা দেওয়াই হতে পারে সামাজিক অসঙ্গতিগুলো দূরীকরণের হাতিয়ার। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের প্রতিও আর্জি রইল- কলেজে ভর্তির জন্য ভর্তি পরীক্ষা যেন আবার চালু করা হয়।

লেখক : কলামিস্ট ও রসায়নবিদ

ই-মেইল : [email protected]

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close
Error!: SQLSTATE[42S02]: Base table or view not found: 1146 Table 'protidin_sangbad.news_hits_counter_2020_04_07' doesn't exist
Error!: SQLSTATE[42S02]: Base table or view not found: 1146 Table 'protidin_sangbad.news_hits_counter_2020_04_07' doesn't exist