reporterঅনলাইন ডেস্ক
  ২৬ মার্চ, ২০২৪

মহান স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবস

মুক্তিযুদ্ধের অর্জন রক্ষায় প্রতিজ্ঞাবদ্ধ হতে হবে

‘পৃথিবীর এক প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্ত পর্যন্ত/ ঘোষণার ধ্বনি-প্রতিধ্বনি তুলে/ নতুন নিশান উড়িয়ে/ দামামা বাজিয়ে দিগি¦দিক/ এই বাংলায় তোমাকে আসতেই হবে হে স্বাধীনতা।’ সত্যিই এসেছে বাংলায় সেই স্বাধীনতা। আর এই স্বাধীনতা পাওয়ার জন্য ভাসতে হয়েছে ‘রক্তগঙ্গায়’; বাঙালি জাতিকে এ জন্য দিতে হয়েছে চরম মূল্য।

আজ ২৬ মার্চ। মহান স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবস। রক্ত, অশ্রুস্নাত বিক্ষুব্ধ বিদ্রোহের দিন। শৃৃঙ্খল মুক্তির দিন। বাঙালির দীর্ঘ স্বাধিকার আন্দোলনের চূড়ান্ত লড়াইয়ের সূচনাকাল। বিশ্বের বুকে লাল-সবুজের পতাকা ওড়ানোর দিন আজ। এই দিনেই বাঙালি জাতি তাদের চিরকালীন দাসত্ব ঘুচিয়ে স্বাধীনতার অগ্নিমন্ত্রে উজ্জীবিত হয়েছিল এবং লাখো প্রাণের বিনিময়ে ছিনিয়ে এনেছিল স্বাধীনতার লাল সূর্যটাকে। তবে আমাদের স্বাধীনতার ইতিহাস যেমন গৌরবের, তেমনি বেদনারও। কারণ অনেক রক্ত ও আত্মত্যাগের বিনিময়ে অর্জিত হয়েছে আমাদের স্বাধীনতা। আজ আমরা শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করছি সেসব নাম জানা-অজানা শহীদদের, যারা তাদের বর্তমানকে বিসর্জন দিয়ে গেছেন এ দেশের ভবিষ্যৎকে সুন্দর করার জন্য। আমরা শ্রদ্ধা জানাই স্বাধীনতার স্থপতি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এবং মুক্তিযুদ্ধের সব সংগঠক ও মুক্তিযোদ্ধাকে। আমরা কৃতজ্ঞতা জানাই ভারত ও রাশিয়াসহ (তৎকালীন সোভিয়েত ইউনিয়ন) সেসব বন্ধুরাষ্ট্র ও বিদেশি নাগরিকদের, যারা মুক্তিযুদ্ধে নানাভাবে আমাদের সহায়তা করেছেন।

১৯৭০ সালের নির্বাচনে বাঙালির প্রাণপ্রিয় নেতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ পাকিস্তানের পার্লামেন্টে নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেয়েছিল। কিন্তু পশ্চিম পাকিস্তানিরা সেদিন সংখ্যাগরিষ্ঠের মতামত উপেক্ষা করেছিল, ক্ষমতার বদলে দিয়েছিল বুলেট আর কামানের গোলা। ২৫ মার্চের কালরাতে ঘুমিয়ে থাকা নিরীহ, নিরস্ত্র বাঙালির ওপর পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী ট্যাংক, কামান নিয়ে ঝাঁপিয়ে পড়েছিল। ঢাকা শহরে বয়েছিল রক্তের বন্যা। ২৬ মার্চের প্রথম প্রহরে পাকিস্তানি হিংস্র শ্বাপদের গণহত্যার বিরুদ্ধে বাঙালি জাতির অবিসংবাদিত নেতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান আনুষ্ঠানিকভাবে ঘোষণা করেন বাংলাদেশের স্বাধীনতা। তার আগে ৭ মার্চের বিশাল জনসভায়ও বঙ্গবন্ধু ঘোষণা করেছিলেন- ‘এবারের সংগ্রাম আমাদের মুক্তির সংগ্রাম, এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম।’ এরপর দীর্ঘ ৯ মাস ধরে চলে রক্তক্ষয়ী মুক্তিযুদ্ধ। দুঃখের বিষয়, তখন এ দেশেরই কিছু কুসন্তান হাত মিলিয়েছিল পাকিস্তানি বাহিনীর সঙ্গে। গড়ে তুলেছিল রাজাকার-আলবদর-আলশামসসহ বিভিন্ন নামের বাহিনী, যাদের অত্যাচার-নির্যাতন পৃথিবীর ইতিহাসের সব বর্বরতাকে হার মানিয়ে দিয়েছিল। তা সত্ত্বেও ৩০ লাখ শহীদের রক্ত ও আরো বহু ত্যাগের বিনিময়ে ১৬ ডিসেম্বর আমরা চূড়ান্ত বিজয় অর্জন করি। দুঃখজনক হলেও সত্য, স্বাধীনতার পরও স্বাধীনতাবিরোধীদের ষড়যন্ত্র থেমে থাকেনি। সেই ষড়যন্ত্রেরই অংশ হিসেবে ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে হত্যা করা হয়। আশার কথা, সেসব যুদ্ধাপরাধী ও মানবতাবিরোধী অপরাধকারীদের বিচার কার্যকর করা হয়েছে এ দেশের মাটিতেই।

যে অসাম্প্রদায়িক, গণতান্ত্রিক ও সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গঠনের স্বপ্ন নিয়ে এ দেশের সাধারণ মানুষ অস্ত্র হাতে তুলে নিয়েছিল; জীবনপণ শপথ নিয়েছিল তা বাস্তবায়ন করার দায়িত্ব আমাদের সবার। আমরা এই দিবসে সেই দায়িত্বের কথা স্মরণ করছি। একই সঙ্গে জাতিকে প্রতিজ্ঞাবদ্ধ হতে হবে মুক্তিযুদ্ধের যেসব স্বপ্ন এখনো অপূর্ণ রয়ে গেছে সেসব স্বপ্ন বাস্তবায়নের পথে এগিয়ে যাওয়ার জন্য। আমাদের প্রিয় বাংলাদেশ এগিয়ে যাবে এবং বিশ্বের দরবারে মাথা উঁচু করে দাঁড়াবেই- এমনটাই প্রত্যাশা সবার।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close