reporterঅনলাইন ডেস্ক
  ১৮ মার্চ, ২০২৪

অনলাইনে প্রতারণা বন্ধে চাই আইনের প্রয়োগ

অনলাইনে কেনাকাটা প্রতারণা নাকি আস্থার জায়গা- এমন প্রশ্ন সামনে আসছে বারবার। কারণ, এমএলএমের আদলে ই-কমার্স কোম্পানিগুলো ব্যবসার নামে গ্রাহকদের কাছ থেকে হাজার হাজার কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছে। ইভ্যালি, ই-অরেঞ্জ, আলেশা মার্ট, ধামাকা বা এমটিএফইসহ এমন অনেক প্রতিষ্ঠান হাতিয়ে নিয়েছে গ্রাহকের শত শত কোটি টাকা। আইন বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এদের কার্যক্রমের ধরন অনেকটাই এমএলএম কোম্পানির মতো। এমএলএম কোম্পানিগুলোর প্রতারণার চিত্র দেখার অভিজ্ঞতা থেকে মনে হচ্ছে, কোম্পানিগুলো তা-ই করেছে।

বিনিয়োগের টাকা তিন থেকে ছয় মাসেই দ্বিগুণ হবে কিংবা বিশেষ ছাড়ে প্রায় অর্ধেক মূল্যে দেওয়া হচ্ছে- যোগাযোগমাধ্যম, নিজস্ব ওয়েবসাইট বা নানা অ্যাপ ব্যবহার করে চালানো হয় এ রকম প্রচারণা। তাদের এই প্রচারণা দেখে প্রলোভনে পড়ে সরল মনের অনেকেই প্রতারকদের ফাঁদে পা বাড়ান। প্রথম দিকে বিশ্বাসযোগ্যতা অর্জনের জন্য গ্রাহকদের বিনিয়োগের অর্থ ফেরত দেওয়া হয়। অর্ধেক দামে পণ্য পৌঁছে দেওয়া হয় গ্রাহকদের ঘরে। এরপর সেই গ্রাহকদের দিয়েই প্রচারণা শুরু করে প্রতারক চক্র। ‘ব্যবসা’ জমজমাট হয়ে গেলেই শুরু হয় টালবাহানা। একপর্যায়ে চম্পট দেয় প্রতারক চক্র। একসময়ে যুবক, ডেসটিনি বা ইউনিপেটুইউ নামে এমএলএম প্রতিষ্ঠানগুলো সরাসরি সাধারণ মানুষকে প্রলোভনের ফাঁদে ফেলে প্রতারণা করেছে। কিন্তু সময়ের সঙ্গে প্রতারকরা কৌশল পাল্টেছে। সারা দুনিয়ায় ই-কমার্সের জনপ্রিয়তা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে আমাদের এখানে প্রতারক চক্রগুলো ই-কমার্সের নামে প্রতারণা শুরু করেছে। আর পিরামিড স্কিম বা এমএলএমের নামেও প্রতারণা চলছে অনলাইনে। বিভিন্ন অ্যাপ বানিয়ে দ্বিগুণ বা তিন গুণ লভ্যাংশ দেওয়ার আশ্বাস দিয়ে সাধারণ মানুষের বিনিয়োগ লুটে নিয়ে পালিয়ে যাচ্ছে প্রতারকরা।

জানা যাচ্ছে, ই-কমার্সের পাশাপাশি অনুমোদন ছাড়াই এমএলএম কোম্পানি খুলে গ্রাহকদের সঙ্গে প্রতারণা করে আসছিল বেশ কয়েকটি প্রতারক চক্র। সর্বশেষ গত বছরের শেষের দিকে এমটিএফই (মেটাভার্স ফরেন এক্সচেঞ্জ) নামে একটি অ্যাপভিত্তিক এমএলএম কোম্পানি সারা দেশের বিভিন্ন গ্রাহকের কাছ থেকে প্রায় ১১ হাজার কোটি টাকা আত্মসাৎ করেছে। একসময় যুবক, ডেসটিনি, নিউওয়ে বা ইউনিপেটুইউ এমএলএম কোম্পানিগুলো মানুষের কাছ থেকে সরাসরি অর্থ নিয়ে আত্মসাৎ করেছিল। এখন অ্যাপভিত্তিক এমএলএম কোম্পানি খুলে প্রতারণা করা হচ্ছে। নতুন নতুন প্রতিষ্ঠান ও নামে এমএলএম ব্যবসা পরিচালনার খবরটি অত্যন্ত উদ্বেগজনক। প্রতারণার ধরন পাল্টে ই-কমার্স, ই-বিজনেস ও ডিরেক্ট টেলিমার্কেটিং, ক্যাশলেস সোসাইটি প্রভৃতি নামে বিভিন্ন ‘এমএলএম কোম্পানি’ গড়ে উঠেছে। কোনো কোনো কোম্পানি ফুড সাপ্লিমেন্ট, প্রসাধনসামগ্রী ও হারবাল ওষুধ বিপণনের নামে অনেক এমএলএম কোম্পানি কার্যক্রম চালাচ্ছে। প্রতারণার অভিযোগে সরকার এমএলএম বাণিজ্য নিষিদ্ধ করেছিল। আশা করা হয়েছিল এ পদক্ষেপে কাজ হবে। কিন্তু সেটি হয়নি।

আমরা চাই প্রতারণা বন্ধে আইনের প্রয়োগ নিশ্চিত করবে সরকার। কারণ নিরীহ মানুষকে ফাঁদে ফেলে প্রতারকরা টাকা হাতিয়ে নেবে, সেটা মেনে নেওয়া যায় না। এ ছাড়া এমএলএম বা ই-কমার্স প্রতারণার সঙ্গে জড়িত যারা বিদেশে পলাতক রয়েছে, তাদের দেশে ফিরিয়ে এনে বিচারের মুখোমুখি করতে হবে। একই সঙ্গে সাধারণ মানুষকেও সতর্ক থাকতে হবে, যাতে প্রতারকরা কোনো ফাঁদে ফেলতে না পারে। বেশি লাভের আশায় যে কোনো প্রতিষ্ঠানে লেনদের করার ক্ষেত্রে ভালো করে যাচাই-বাছাই করে নিতে হবে।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close