মুফতি মুহাম্মাদ এহছানুল হক মুজাদ্দেদী

  ১৫ মার্চ, ২০২৪

ধর্মকথা

যেভাবে রোজা রাখতেন প্রিয়নবী (সা.)

মানবতার মুক্তির দূত মহানবী (সা.) যেভাবে রোজা পালন করেছেন, তার উম্মতদেরও সেভাবেই রোজা পালন করতে হবে। তাই প্রতিটি মুসলমানকে জেনে রাখা দরকার কীভাবে হুজুর (সা.) রোজা পালন করেছেন। রাসুল (সা.) রমজানের জন্য দুমাস আগ থেকেই প্রস্তুতি নিতেন। রজবের চাঁদ দেখে তিনি বারবার রমজান পর্যন্ত পৌঁছার দোয়া করতেন। হজরত আনাস ইবনে মালেক (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রজব মাস শুরু হলে রাসুল (সা.) এই দোয়া পড়তেন- ‘হে আল্লাহ আমাদের জন্য রজব ও শাবান মাসকে বরকতময় করে দিন। আর আমাদের রমজান মাস পর্যন্ত পৌঁছে দিন।’ (নাসায়ি)। রমজানের প্রস্তুতির জন্য শাবান থেকেই নফল রোজা শুরু করতেন প্রিয়নবী (সা.)।

রমজানের ঠিক আগে আগেই রাসুল (সা.) রমজানের ফজিলত এবং বরকত সম্পর্কে সাহাবিদের জানিয়ে দিতেন। রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘রমজান বরকতময় মাস। এ মাসে শয়তানকে শৃঙ্খলাবদ্ধ করা হয়। আকাশের দরজাসমূহ খুলে দেওয়া হয়। জাহান্নামের দরজাগুলো বন্ধ করে দেওয়া হয়। এ মাসে এমন একটি মহিমান্বিত রাত রয়েছে (লাইলাতুল কদর), যা হাজার মাসের চেয়েও শ্রেষ্ঠ।’ মুসলিম

রাসুল (সা.) চাঁদ দেখে রোজা শুরু করতেন। তিনি (সা.) ইরশাদ করেছেন, ‘তোমরা চাঁদ দেখে রোজা রাখো এবং চাঁদ দেখেই রোজা ছাড়ো। বোখারি

জাঁকজমকহীন রোজা পালন করতেন রাসুল (সা.)। নবীজি (সা.)-এর সাহরি ও ইফতার ছিল সাধারণের চেয়েও সাধারণ। হজরত আনাস (রা.) বলেন, ‘রাসুল (সা.) কয়েকটি ভেজা খেজুর দিয়ে ইফতার করতেন। ভেজা খেজুর না থাকলে শুকনো খেজুর দিয়ে ইফতার করতেন। ভেজা কিংবা শুকনো খেজুর কোনোটাই না পেলে কয়েক ঢোক পানিই হতো তার ইফতার।’ তিরমিজি ইফতারে দেরি করা তিনি পছন্দ করতেন না। তেমনিভাবে রাসুল (সা.)-এর সাহরিও ছিল খুব সাধারণ। তিনি (সা.) দেরি করে একেবারে শেষ সময়ে সাহরি খেতেন। সাহরিতে তিনি দুধ ও খেজুর পছন্দ করতেন।

রমজানে রাসুল (সা.)-এর ইবাদতের পরিমাণ বেড়ে যেত। বোখারির বর্ণনা অনুযায়ী তিনি (সা.) প্রবাহিত বাতাসের মতো দান করতেন। রমজানে রাসুল (সা.) জিবরাইল (আ.)-কে কোরআন শোনাতেন। আবার জিবরাইল (আ.) হজরত (সা.)-কে কোরআন শোনাতেন। রমজানের রাতে তিনি (সা.) খুব কম সময় বিশ্রাম নিয়ে বাকি সময় নফল নামাজে কাটিয়ে দিতেন। রাসুল (সা.) সাহাবিদের নিয়ে ২০ রাকাত সালাতুত তারাবি পড়েছেন। তারাবি পড়া সুন্নত। ৮ রাকাত ২৯ রাকাত- এ বিষয়ে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করা হারাম। সমাজে ফিতনা সৃষ্টি করার অধিকার আমাদের কারো নেই।

শেষ দশ দিন ইতিকাফ করা রাসুল (সা.)-এর নিয়মিত সুন্নত ছিল। ইতিকাফে কদরের রাত তালাশ করাই মূল উদ্দেশ্য। অত্যন্ত দুঃখজনক হলেও সত্য, শেষ দশকে আমাদের মসজিদগুলো মুসল্লিশূন্য থাকে। রাসুল (সা.) শাওয়ালের চাঁদ দেখে রোজা ছাড়তেন। একাধিক হাদিস শরিফ থেকে জানা যায়, শাওয়ালের পহেলা রাত খুবই বরকতময়। এ রাতে রাসুল এবং সাহাবিরা ইবাদত-বন্দেগি করে কাটিয়ে দিতেন। আমাদেরও উচিত ইবাদতময় জীবন গড়ে তোলা।

মাহে রমজানকে স্বাগতম জানিয়ে মহানবী হজরত মুহাম্মদ মোস্তফা (সা.) বিশ্ববাসীর উদ্দেশে যে ঐতিহাসিক ভাষণ প্রদান করেন। বিশিষ্ট সাহাবি হজরত সালমান ফারসি (রা.) হুজুর (সা.)-এর ভাষণটি বর্ণনা করেছেন। তিনি বলেন, একবার শাবান মাসের শেষ দিন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদের উদ্দেশে এক গুরুগম্ভীর ভাষণ প্রদান করলেন। ওই ভাষণে প্রিয়নবী (সা.) বলেন, হে লোক সকল! তোমাদের ওপরে এক মহান মাস! এক কল্যাণময় মাস! ছায়া বিস্তার করছে। এটা এমন এক মাস, যাতে এমন একটি রাত রয়েছে, যা হাজার মাস অপেক্ষা অধিক উত্তম। আল্লাহতায়ালা তোমাদের জন্য এ মাসের রোজাকে ফরজ করেছেন এবং রাতে (সালাতুত তারাবি) নামাজ পড়াকে নফল করেছেন। যে ব্যক্তি এ মাসে আল্লাহর নৈকট্য লাভের আশায় একটি সুন্নত বা নফল কাজ করবে, আল্লাহ তাকে অন্য মাসে একটি ফরজ আদায় করার সমান সাওয়াব দান করবেন। আর যে ব্যক্তি এ মাসে একটি ফরজ পালন করবেন, অন্য মাসে সত্তরটি ফরজ পালনের সওয়াব তার আমলনামায় আল্লাহতায়ালা লিখে দেবেন।

এটা পারস্পরিক সহানুভূতির মাস। এটা ওই মাস যাতে মুমিন ব্যক্তির রিজিক বাড়িয়ে দেওয়া হয়। এ মাসে যে ব্যক্তি একজন রোজাদারকে ইফতার করাবে এটা তার পক্ষে তার গুনাহসমূহের জন্য ক্ষমাস্বরূপ হবে এবং তার নিজেকে জাহান্নামের আগুন থেকে মুক্তির কারণ হবে। আর তাকে রোজাদারের সমান সাওয়াব দান করা হবে, এতে তার সাওয়াব থেকে কিছুই কমানো হবে না।

প্রিয়নবী (সা.) রমজানের মাহাত্ম্য সম্পর্কে বলেছেন, যেন তার উম্মত রোজা সম্পর্কে আরো বেশি আগ্রহী এবং উদ্যমী হয়। তাই আসুন, পবিত্র রমজান মাসে আমরা যেন বেশি বেশি সুন্নাত-নফল এবং ফরজ ইবাদত করে মহান আল্লাহতায়ালার নৈকট্য হাসিল করতে পারি- এ বিষয়ে আমাদের আরো বেশি যত্নশীল হতে হবে। আল্লাহতায়ালা আমাদের সবাইকে মাহে রমজানের পূর্ণ ফয়েজ এবং বরকত দান করুন। আমিন।

লেখক : আরবি প্রভাষক, আউশপাড়া ফাজিল (ডিগ্রি) মাদ্রাসা লাকসাম কুমিল্লা

খতিব, মনিপুর বায়তুল আশরাফ (মাইকওয়ালা) জামে মসজিদ, মিরপুর-২, ঢাকা

[email protected]

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close