reporterঅনলাইন ডেস্ক
  ১২ ফেব্রুয়ারি, ২০২৪

ঝাড়ুদারের হাতে ফেরির স্টিয়ারিং যায় কীভাবে!

গত ১৭ জানুয়ারি সকালে মানিকগঞ্জের পাটুরিয়ার ৫ নম্বর ফেরিঘাটের অদূরে কুয়াশায় আটকে থাকা ফেরি ‘রজনীগন্ধা’র তলা ফেটে পানি উঠে ৯টি ট্রাকসহ ডুবে যায়। পরে জানা গিয়েছিল ফেরিটির ফিটনেস ছিল না। এর আগে ২০২১ সালের ২৭ অক্টোবর ‘আমানত শাহ’ নামের একটি ফেরি ১৭টি যানবাহন নিয়ে দৌলতদিয়া থেকে ছেড়ে পাটুরিয়ার উদ্দেশে গেলে মানিকগঞ্জের পাটুরিয়ার ৫ নম্বর ফেরিঘাটের কাছে ডুবে যায়। সেই ফেরিও ফিটনেসবিহীন ছিল। ফেরিটি ছিল প্রায় ৪১ বছরের পুরোনো।

পদ্মা নদীকে তার উত্তাল ঢেউ এবং দুর্ঘটনাপ্রবণতার কারণে একসময় ‘প্রমত্তা পদ্মা’ বলে অভিহিত করা হতো। কিন্তু গভীরতা কমে যাওয়ার কারণে পদ্মার সেই নাম এখন অনেকটাই অপ্রাসঙ্গিক হয়ে গেছে। তা সত্ত্বেও এখনো প্রতি বছরই পদ্মায় এ ধরনের ছোট-বড় অনেক দুর্ঘটনা ঘটে। বিশেষ করে শীত মৌসুমে ঘন কুয়াশার কারণে দুর্ঘটনার আশঙ্কা বেড়ে যায়। এতে একদিকে ঘটে প্রাণহানি, অন্যদিকে ক্ষতিগ্রস্ত হন ব্যবসায়ীরা। এ ছাড়া দুর্ঘটনার আরেকটি বড় কারণ ফিটনেসবিহীন ফেরি চলাচল। দৌলতদিয়া-পাটুরিয়া নৌরুটের অধিকাংশ ফেরির বয়স ৩৫ বছরের বেশি। রজনীগন্ধার বয়স ছিল ৪৭ বছরের বেশি। রোরো ফেরি ‘খান জাহান আলী’ তৈরি হয় ১৯৮৭ সালে। আরেক রোরো ফেরি ‘কেরামত আলী’ ৩৬ বছরের পুরোনো। ‘বীরশ্রেষ্ঠ জাহাঙ্গীর’ ফেরি তৈরি হয় ১৯৯২ সালে। বেশির ভাগ ফেরিতে নেই প্রয়োজনীয় নিরাপত্তা সরঞ্জাম। অনেক ফেরির বয়স ৪০ বছর পার হয়ে গেছে। আইন অনুযায়ী ৪০ বছরের বেশি বয়সি নৌযানের ফিটনেস সনদ দেয় না বাংলাদেশ নৌ-পরিবহন অধিদপ্তর। তার পরও চলছে ফেরি সার্ভিস। ফলে মাঝেমধ্যেই ঘটছে মর্মান্তিক দুর্ঘটনা।

বলা বাহুল্য, গতকাল রবিবার প্রতিদিনের সংবাদে ‘হেলপার-ঝাড়ুদারের হাতেও ফেরির স্টিয়ারিং!’ শিরোনামে প্রকাশিত একটি সংবাদ আমাদের হতবাক করে। প্রতিবেদনে বলা হয়, দুর্গম ও স্রোতবহমান নদীতে নৌযান দুর্ঘটনা রোধে চড়া বেতনে নিয়োগ করা হয় ইঞ্জিন কক্ষের ড্রাইভার এবং নৌযান পরিচালনার মাস্টার। অভিযোগ আছে, বেশি বেতনে নিয়োগ দিলেও তাদের কাজে থাকে চরম অবহেলা। মাস্টার-ড্রাইভাররা ফেরির স্টিয়ারিং হেলপার ও ঝাড়ুদার হাতে তুলে দিয়ে নিজেরা বাসায় থাকেন বা ব্যক্তিগত কাজে ব্যস্ত হয়ে পড়েন। আর অদক্ষ চালকরা ফেরি চালানোয় হরহামেশা ঘটে দুর্ঘটনা। অন্যদিকে অতি মুনাফার জন্য ধারণক্ষমতার চেয়ে অতিরিক্ত পণ্য পরিবহন করানো হয় লক্কড়-ঝক্কড় ফেরিতে। পরে অধিক ওজনের চাপ সামলাতে না পেরে গভীর নদীতে তলিয়ে যায় ফেরি। এ ছাড়া হাতুড়ে চালকদের হাতে স্টিয়ারিং থাকায় স্রোতের গতি-প্রকৃতি সম্পর্কে অবজ্ঞার কারণে ঘটে দুর্ঘটনা। এতে বাড়ে হতাহতের সংখ্যা। ফলে স্বাভাবিকভাবেই প্রশ্ন উঠতে পারে, বেশি বেতন দিয়ে এসব মাস্টার-ড্রাইভার নিয়োগ দিয়ে লাভ কী? একই সঙ্গে এ প্রশ্নও জাগে, হেলপার-ঝাড়ুদারের হাতে ফেরির স্টিয়ারিং যায় কীভাবে?

সর্বশেষ রজনীগন্ধা ফেরি ডুবে যাওয়ার পর টনক নড়ে কর্তৃপক্ষের। ফেরিগুলো কারা পরিচালনা করছে, তা নজরদারিতে আনতে ফেরি মাস্টার ও ড্রাইভারের কক্ষে বসানো হচ্ছে গোপন ক্যামেরা (সিসিটিভি)। বিলম্ব হলেও এই ইতিবাচক উদ্যোগ নেওয়াটা প্রশংসার দাবিদার। তবে শুধু সিসিটিভি বসিয়ে দায় সারলে হবে না, চালাতে হবে কঠোর নজরদারি। অপরাধ করলেই চাকরি থেকে স্থায়ী বরখাস্ত এবং শাস্তির মুখোমুখি করতে হবে, তাহলেই সচেতন হবেন দায়িত্ববানরা। একই সঙ্গে দুর্ঘটনারোধে ফিটনেসবিহীন ফেরি চালানো থেকে বিরত থাকতে হবে।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close