reporterঅনলাইন ডেস্ক
  ২৭ জানুয়ারি, ২০২৪

বাজার নিয়ন্ত্রণে চাই কার্যকর উদ্যোগ

নানা উদ্যোগ ও তৎপরতার পরও নিয়ন্ত্রণে আসেনি চাল ও আলুর বাজার। সরকার ঠিক করে দিলেও সেই দামে বিক্রি হচ্ছে না। পণ্যমূল্য বৃদ্ধির কারণ হিসেবে অনেকে ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধের নেতিবাচক প্রভাবের কথা বলেন। ডলারের বিপরীতে টাকার রেকর্ড দরপতনের বিষয়টিও উল্লেখ করা হয়। কিন্তু যেসব পণ্য আমদানি করতে হয় না, সেসব পণ্যের দাম কেন বাড়ে? বাজারসংশ্লিষ্টরা বলছেন, সরবরাহে বড় ধরনের ঘাটতি না থাকলেও বাড়তি লাভের উদ্দেশ্যে ব্যবসায়ীরা আলু ও চালের দাম বাড়িয়েছেন। বাজার ব্যবস্থাপনা মোটেই সংগঠিত নয়। এই সুযোগ নিয়ে এক শ্রেণির অসাধু ব্যবসায়ী সিন্ডিকেট করে পণ্যের কৃত্রিম সংকট তৈরি করেন।

বলা সংগত, বাজারে এখন নতুন আলু এসেছে। দাম কমেছে ভোক্তা পর্যায়ে। তবে খেত থেকে বিক্রির হওয়া আলুর দামের সঙ্গে বাজারে বিক্রি হওয়া দামের পার্থক্য অনেক। হাত ঘুরতেই আলুর দাম বেড়ে যাচ্ছে ৫০ শতাংশ। কৃষক পর্যায়ে ৩০ টাকা কেজি দরের আলু বাজারে বিক্রির হচ্ছে ৪০ থেকে ৪৫ টাকায়। দেশে মধ্যস্বত্বভোগীদের দৌরাত্ম্য রয়েছে আলুর ব্যবসায়। এ কারণে ঠকছেন কৃষক ও ভোক্তারা। এছাড়া দেশের বিভিন্ন জেলায় আলুর উচ্চফলন হলেও হিমাগার না থাকায় সংরক্ষণের সুযোগ পাচ্ছেন না কৃষকরা। এ জন্য বাণিজ্য মন্ত্রণালয় ও ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ বিভাগের তৎপরতার কমতিকে দায়ী করছেন ক্রেতারা। অন্যদিকে বছরের শুরুতেই বাজারে চালের দাম কেজিতে ৪ থেকে ৬ টাকা বেড়েছিল। এরপর ১৭ জানুয়ারি ব্যবসায়ীদের চার দিনের মধ্যে চালের দাম কমিয়ে আনার নির্দেশনা দিয়েছিলেন খাদ্যমন্ত্রী সাধন চন্দ্র মজুমদার। বেঁধে দেওয়া সেই সময় পেরিয়ে গেছে। এর মধ্যে বাজারে অভিযানও চালিয়েছে খাদ্য মন্ত্রণালয়। তবু চালের বাজারে এর কোনো প্রভাব পড়েনি। মোটা চাল বিক্রি হচ্ছে কেজি ৫৪-৫৫ টাকায়। মাঝারি মানের চালের কেজি ৬০ থেকে ৬২ টাকা। মিনিকেট ও নাজিরশাইলের মতো সরু চাল ৬৮ থেকে ৮০ টাকা কেজি বিক্রি হচ্ছে।

বাজারসংশ্লিষ্টরা বলছেন, জাতীয় নির্বাচনের পরপরই চালের দাম হুট করেই বস্তাপ্রতি ২৫০ থেকে ৩০০ টাকা পর্যন্ত বেড়ে যাওয়ার পর খাদ্যমন্ত্রীর নির্দেশে সারা দেশে মজুদবিরোধী অভিযান শুরু করেছে খাদ্য মন্ত্রণালয়। নিয়মিত অভিযানের কারণে পাইকারি পর্যায়ে কিছুটা দাম কমতে শুরু করেছে। বিক্রেতারা বলছেন, বস্তায় ৩০০ টাকা বাড়লেও অভিযানের কারণে কমেছে প্রায় ১০০ টাকা। কিন্তু দুঃখজনক হলেও সত্য, অভিযান শেষ হওয়ার পর স্বাভাবিক ব্যবসা চালিয়ে যান তারা। ফলে সাধারণ মানুষকে এর খেসারত দিতে হয়। বাজার বিশেষজ্ঞদের মতে, সাধারণত চাহিদার তুলনায় সরবরাহ কমে গেলে বাজারে যেকোনো জিনিসের দাম বাড়বে, এটাই স্বাভাবিক। কিন্তু মুক্তবাজারে যখন কোনো পণ্য সহজেই আমদানি করা যায়, তখন দাম বাড়ার কথা নয়। বাংলাদেশের বাজারে পণ্যের মূল্যবৃদ্ধির জন্য ব্যবসায়ীদের একটি গোপন জোট বা সিন্ডিকেটের কথা বরাবরই আলোচিত হয়। এখন একেক সময় একেকটি পণ্যের দাম বাড়ানো হয়। যেমন এবার আলুর পাশাপাশি বেড়েছে চালের দাম।

বলা বাহুল্য, কঠোরভাবে বাজার নজরদারি করা হলে এই কারসাজি রোধ করা সম্ভব বলে মনে করেন বাজারসংশ্লিষ্টরা। বাজারের নিয়ন্ত্রণ সরকার নিতে না পারলে কোনোভাবেই পণ্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি রোধ করা সম্ভব হবে না। কাজেই সরকারকে মূল ভূমিকা নিতে হবে। এ ক্ষেত্রে বাজার নিয়ন্ত্রণে সরকারের অনেক করণীয় রয়েছে। জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর আছে। আছে বাংলাদেশ প্রতিযোগিতা কমিশন। এসব সংস্থাকে আরো কার্যকর ভূমিকা নিতে হবে। যাতে সাধারণ মানুষের জীবনে স্বস্তি ফিরে আসে। আর এটাই আমাদের প্রত্যাশা।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close