অব্যাহত থাকুক ঢাকার উন্নয়নযাত্রা
ঢাকায় মানুষের বসবাস খ্রিস্টীয় সপ্তম শতক থেকে। মুঘল সম্রাট জাহাঙ্গীরের শাসনামলে ১৬১০ সালে এই শহরটি প্রথম রাজধানীর মর্যাদা পায়। এরপর পেরিয়ে গেছে চার শ বছরেরও বেশি সময়। সেই ঢাকা এখন স্থান করে নিয়েছে বিশ্বের সবচেয়ে জনবহুল শহরগুলোর তালিকায়। তবে অনেক স্থাপনা অপরিকল্পিত অবস্থায় গড়ে ওঠায় এই নগরী এখন কার্যত বসবাসের অযোগ্যই হয়ে পড়েছে।
ঢাকার অবকাঠামোগত অনেক উন্নয়ন হলেও দূষণ, যানজট ও জনসংখ্যা বৃদ্ধির কারণে যথেষ্ট পরিষেবার অভাবে শহুরে সমস্যাগুলো প্রকট হয়ে উঠেছে। সাম্প্রতিক দশকগুলোয় ঢাকার পরিবহন, যোগাযোগব্যবস্থা ও গণপূর্ত ব্যবস্থায় যে আধুনিকীকরণ হয়েছে, তা বিশেষভাবে লক্ষণীয়। এর মধ্যে মেট্রোরেল প্রকল্প ও এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে উল্লেখযোগ্য। সারা দেশ থেকে বিপুলসংখ্যক মানুষ ঢাকায় আসে জীবন ও জীবিকার সন্ধানে। এ কারণে ঢাকা হয়ে উঠেছে বিশ্বের দ্রুততম ক্রমবর্ধমান নগরী। অতিরিক্ত জনসংখ্যার চাপে ঢাকা নগরীতে সমস্যার অন্ত নেই। কর্মসংস্থানের অভাব, আবাসন সংকট, যানজট, বস্তি, পরিবেশ দূষণ, রোগব্যাধি- এমন নানান সমস্যা নগরীর পরিবেশ ও শৃঙ্খলাব্যবস্থা সর্বোপরি মানুষকে করেছে বিষাক্ত।
সাম্প্রতিক বছরগুলোতে ঢাকা নগরী নিয়ে আরেকটি উদ্বেগ বাড়ছে। আর সেটি হলো তাপমাত্রা বৃদ্ধি। একটি গবেষণায় বলা হয়েছে, বৈশ্বিক গড় তাপমাত্রা বৃদ্ধির প্রভাবে ঢাকাবাসীর কর্মক্ষমতা বিশ্বের মধ্যে সবচেয়ে বেশি কমেছে। ঢাকায় স্বাভাবিক সময়েও তাপমাত্রা ৩০ ডিগ্রি সেলসিয়াস থাকে। প্রায়ই ৪০ ডিগ্রির কাছাকাছি পৌঁছে যায়। পর্যাপ্ত প্রাকৃতিক পরিবেশের অভাব, জলাশয় না থাকা এবং কংক্রিটের ইমারত ও স্থাপনা তাপমাত্রা বাড়িয়ে দিচ্ছে। এর পাশাপাশি জনসংখ্যার আধিক্য তো আছেই। এ অবস্থা এক দিনে হয়নি। সমস্যাগুলো যেহেতু এক দিনে হয়নি, তেমনি এর সমাধানও এক দিনে হওয়ার মতো নয়। রাতারাতি সবকিছু বদলে ফেলা যায় না। এজন্য দীর্ঘমেয়াদি প্রক্রিয়ার মাধ্যমে উন্নয়ন পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করতে হবে। আমরা জানি, বিগত বছরগুলোতে সরকার ঢাকাকে বাসযোগ্য করতে বিভিন্ন উদ্যোগ গ্রহণ করেছে। এর মধ্যে অনেক প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হয়েছে, চলমান রয়েছে বেশ কিছু প্রকল্প। এভাবেই একটু একটু করে ঢাকাকে একটি আধুনিক শহরে রূপান্তর করা সম্ভব।
এ বিষয়ে স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায়মন্ত্রী মো. তাজুল ইসলাম গত শনিবার রাজধানীতে এক গোলটেবিল বৈঠকে জানিয়েছেন, বসবাসযোগ্য রাজধানী ঢাকা নগরী গড়ার জন্য সরকার নানা উদ্যোগ গ্রহণ করেছে এবং সেসব উদ্যোগের বাস্তবায়নও দৃশ্যমান। তিনি বলেন, নানা ধরনের অব্যবস্থাপনা ও দুর্বৃত্তায়ন উত্তরাধিকারসূত্রে প্রাপ্তির ফলে পরিবেশ দূষণসহ দখলদারির সংস্কৃতি থেকে মুক্ত হতে আমাদের সময় লাগছে। অসংখ্য মানুষের চাপে যেকোনো ভালো পরিকল্পনা ও নাগরিক সুবিধা ভেঙে পড়তে বাধ্য। মহানগরীতে কত মানুষ বসবাস করবে, তারও একটি নির্দিষ্ট সীমা থাকা প্রয়োজন। ঢাকায় সীমার অতিরিক্ত মানুষের বসবাসকে নিরুৎসাহিত করতে নানা ধরনের পরোক্ষ নীতিমালাও নেওয়ার সময় হয়েছে।
বসবাসের অযোগ্য নয়, ঢাকা হোক বসবাসযোগ্য বিশ্বের অন্যতম একটি আধুনিক নগরী- সেটাই প্রত্যাশা থাকবে আমাদের। নাগরিকসহ সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ- সবাই সচেতন হলে সেটা বাস্তবায়ন সম্ভব। কারণ, বাংলাদেশের পক্ষে কোনো কিছুই অসম্ভব নয়; বাংলাদেশ অনেক অসম্ভবকেই সম্ভব করেছে। আশা করব, সরকারের ধারাবাহিকতায় ঢাকার আধুনিকায়নে উন্নয়নযাত্রা অব্যাহত থাকবে আর আমরা পাব বাসযোগ্য নগরী।
"