reporterঅনলাইন ডেস্ক
  ৩১ মার্চ, ২০২৩

ভূমি-সংক্রান্ত সেবা পেতে হয়রানি দূর হোক

ভূমি নিয়ে ভোগান্তি আর দুর্নীতি ছিল একই মুদ্রার এপিঠ-ওপিঠ। ভূমি-সংক্রান্ত কাগজপত্র ওঠাতে গিয়ে, নামজারি বা কর দিতে গিয়ে, মানুষের ভোগান্তির কোনো শেষ ছিল না। এ ছাড়া সনাতন পদ্ধতির কারণেও মানুষকে প্রচণ্ড হয়রানির শিকার হতে হয়েছে। সঙ্গে ভূমি অফিসের কিছু কর্মকর্তা-কর্মচারীর নয়-ছয়তো ছিলই। যার ফলে ভূমি-সংক্রান্ত কাজে সেবাগ্রহীতাদের অসন্তোষ ছিল চরমে। বলা হতো ভূমি-সংশ্লিষ্ট প্রতিটি কার্যালয়ই দুর্নীতির আখড়া। সেই চিত্র এখন অনেকটাই পাল্টে গেছে। ২০২১ সালের ৭ নভেম্বর ই-সেবা উদ্বোধন করা হয়েছে। এরপর এ পর্যন্ত ৭৭ লাখের বেশি নাগরিক এই সেবাটি গ্রহণ করেছে। ডাক বিভাগ এখন নাগরিকের ঠিকানায় খতিয়ান ও ম্যাপ পৌঁছে দিচ্ছে, যা একসময় চিন্তা করাও সম্ভব ছিল না।

বলা সংগত, এ পর্যন্ত তিন লাখের অধিক খতিয়ান ও ম্যাপ নাগরিকের হাতে পৌঁছেছে। পৃথিবীর বিভিন্ন রাষ্ট্র থেকে প্রবাসীরা ভূমিসেবা পোর্টাল ই-খতিয়ান অ্যাপের মাধ্যমে আবেদন করলে ডাক বিভাগ তাদের ঠিকানায় জমির খতিয়ান পৌঁছে দেওয়ার ব্যবস্থা নিচ্ছে। ২০১৭ সাল থেকে ই-নামজারি শুরু হয়েছে। ফলে ভূমির মালিকরা ঘরে বসেই নামজারি আবেদন করতে পারছেন এবং হয়রানি ছাড়াই সেবা গ্রহণ করছেন। প্রতি মাসে প্রায় দুই লাখের বেশি নামজারি নিষ্পত্তি হচ্ছে। নগদ টাকা ছাড়াই সেবা নেওয়া যাচ্ছে। ২০২২ সালে ১ অক্টোবর থেকে ই-নামজারি সিস্টেমকে পুরোপুরি ক্যাশলেস ঘোষণা করা হয়েছে। সব ভূমি অফিসে ম্যানুয়াল ডিসিআরের পরিবর্তে চালু করা হয়েছে সর্বোচ্চ গ্রহণযোগ্য কিউআর কোডসমৃদ্ধ ডিসিআর। বিভিন্ন সিস্টেমের সঙ্গে আন্তসংযোগ করে শিগগিরই দ্বিতীয় প্রজন্মের ই-নামজারি চালু করার পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। ই-মিউটেশন বাস্তবায়নের স্বীকৃতিস্বরূপ ভূমি মন্ত্রণালয় জাতিসংঘ থেকে ইউনাইটেড ন্যাশনস পাবলিক সার্ভিস অ্যাওয়ার্ড ২০২০ অর্জন করেছে। এসব কিছুই সম্ভব হয়েছে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কারণে। তিনি ভূমিব্যবস্থাকে ঢেলে সাজাতে ভূমি মন্ত্রণালয়কে নির্দেশ দিয়েছেন। মন্ত্রণালয় সে অনুযায়ীই কাজ করে যাচ্ছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বুধবার (২৯ মার্চ) জাতীয় ভূমি সম্মেলন-২০২৩ ও ভূমি মন্ত্রণালয়ের ৭টি উদ্যোগ ও প্রকল্পের উদ্বোধন করেছেন। সম্মেলনের উদ্দেশ্য একটি ‘স্মার্ট বাংলাদেশ’ গড়তে ভূমি মন্ত্রণালয়ের ভূমিকা তুলে ধরা এবং ভূমিসেবার ডিজিটালাইজেশনের ভবিষ্যৎ চ্যালেঞ্জগুলো খুঁজে বের করা। জাতীয় ভূমি সম্মেলনের অন্যান্য উদ্দেশ্যের মধ্যে রয়েছে ভূমি মন্ত্রণালয়ের গৃহীত পদক্ষেপ সম্পর্কে নাগরিক, সরকারি সংস্থা এবং স্টেকহোল্ডারদের অবহিত করা, ভূমি ব্যবস্থাপনা সম্পর্কে জনগণের মধ্যে সচেতনতা সৃষ্টি করা এবং ভূমি-সংক্রান্ত বিদ্যমান আইন ও প্রবিধান সম্পর্কে ধারণা দেওয়া। ওই অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘ভূমি-সংক্রান্ত সেবা নিতে গিয়ে মানুষকে অনেক হয়রানি হতে হয়েছে। আমরা যে ডিজিটাল বাংলাদেশ, স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ে তুলছি, তাতে আর সেই হয়রানিটা মানুষকে পেতে হবে না। আমরা চাই বাংলাদেশ থেকে সব ধরনের অনিয়ম দূর হোক।’

বলা বাহুল্য, ভূমি-সংক্রান্ত জটিলতা নিরসন ও সেবা দেওয়ার লক্ষ্যে স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ে তোলার মূলমন্ত্রে উজ্জীবিত হয়ে ভূমি মন্ত্রণালয়ের প্রত্যেক কর্মকর্তা-কর্মচারী আরো নিষ্ঠার সঙ্গে কাজ করবেন। প্রধানমন্ত্রীর কথার সূত্র ধরে আমরা এটাই বলতে পারি, ভূমি-সংক্রান্ত সেবা নিতে গিয়ে মানুষ আর হয়রানির শিকার হবে না। ভূমি মন্ত্রণালয় থেকে শুরু করে অধিদপ্তর, দপ্তর বা প্রতিটি কার্যালয়ে কর্মরত কর্মকর্তারা সেবাগ্রহীতাদের আন্তরিকতার সঙ্গে সেবা প্রদান করবেন- এটাই আমাদের প্রত্যাশা।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close