reporterঅনলাইন ডেস্ক
  ২১ মার্চ, ২০২৩

এমন দুর্ঘটনা আর না ঘটুক

কী এক ভয়ানক সড়ক দুর্ঘটনা! মুহূর্তেই ঝরে গেল ২০টি প্রাণ। প্রতিদিনই দেশের কোথাও না কোথাও দুর্ঘটনা ঘটে, প্রতিদিনই সংবাদমাধ্যমে আসে মৃত্যুর খবর। কিন্তু সাম্প্রতিক সময়ে এমন দুর্ঘটনা ঘটতে দেখা যায়নি। গত রবিবার সকালে মাদারীপুরের শিবচরে পদ্মা সেতুর এক্সপ্রেসওয়ের কুতুবপুর এলাকায় একটি যাত্রীবাহী বাস নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে খাদে পড়ে যায়। এতে বাসটি দুমড়েমুচড়ে যায়। ঘটনাস্থলেই মারা যান ১৮ যাত্রী। এ ছাড়া আহতদের উদ্ধার করে শিবচর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ও ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে নেওয়ার পর মারা যান আরো দুজন।

দেশে এ সড়ক দুর্ঘটনা নিয়ে কমকিছু হয়নি। কত আলোচনা-সমালোচনা, আন্দোলন-বিক্ষোভ, সংবাদপত্রে লেখালেখি, আইন-কানুন বা নিয়মনীতি তৈরি। কিন্তু দুর্ঘটনা কি রোধ করা গেছে? যায়নি। আসলে সমস্যাটি কোথায়? কাগজে নাকি মগজে? অর্থাৎ নিয়মনীতি বা আইন-কানুন নেই নাকি আমাদের মানসিকতার পরিবর্তন নেই? কেন এত এত প্রাণ নির্মমভাবে অকালে ঝরে যাচ্ছে প্রতিনিয়ত- এই প্রশ্নের উত্তর কারো জানা নেই। শিবচরে যে বাসটি দুর্ঘটনার কবলে পড়ল, দুর্ঘটনার পর জানা গেল- চালক জাহিদ হাসান বাসটি চালাচ্ছিলেন ক্লান্ত দেহে, ঘুম ঘুম চোখে। বিশ্রামের ফুরসত তিনি পাননি, ট্রিপের পর ট্রিপ দিয়ে যাচ্ছিলেন।

জানা যায়, জাহিদ হাসান ঢাকার দোলাইরপাড়ের বাসা থেকে বের হন গত বৃহস্পতিবার। ওইদিন রাতেই যাত্রীবাহী বাসটি নিয়ে যান পিরোজপুরে। পরের দিন শুক্রবার সকালে পিরোজপুর থেকে যাত্রী নিয়ে ছুটে আসেন ঢাকায়। শুক্রবার বিকেলে আবার যাত্রী নিয়ে ছুটে যান পিরোজপুরে। রাতে পিরোজপুর পৌঁছে পরের দিন শনিবার সকালে আবার যাত্রী নিয়ে আসেন ঢাকায়। ঢাকা থেকে শনিবার দুপুরে আবার ছুটে যান খুলনায়। রাতে বাসের মধ্যে তিন থেকে চার ঘণ্টা বিশ্রাম নিয়ে রবিবার ভোর ৪টায় খুলনার ফুলতলা থেকে বাসটি নিয়ে ঢাকার উদ্দেশে যাত্রা করেন। এভাবে তিনি ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে ৩০ ঘণ্টার বেশি সময় বাস চালিয়ে ক্লান্ত হয়ে পড়েন। এ তো গেল চালকের কথা। বাসটির বিষয়ে বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআরটিএ) বলছে, এটি চলাচলের অনুমতি ছিল না। ফিটনেস সনদের মেয়াদও পেরিয়ে গিয়েছিল। এমনটি যে এই বাসটির ক্ষেত্রেই শোনা গেল, তা কিন্তু নয়। প্রতিটি সড়ক দুর্ঘটনার পরই শোনা যায় যে চালকের লাইসেন্স নেই, বাসের ফিটনেস নেই, বাসটি বেপরোয়া চলছিল- এমন আরো অনেক অনিয়মের কথা। দিনের পর দিন এভাবেই চলছে।

প্রশ্ন হচ্ছে, এত এত দুর্ঘটনার পরও কেন মানুষের সচেতনতা আসে না? কীভাবেই বা এত এত অবৈধ যানবাহন সড়কে চলাচল করে? আসলে সমস্যাটি কোথায়? কবে আমাদের হুঁশ ফিরবে? আমরা মনে করি, বিষয়টি নিয়ে যথাযথ কর্তৃপক্ষের নতুন করে ভাবা উচিত। তা না হলে সড়কে এই মৃত্যুর মিছিল থামানো যাবে না। আর তা-ই যদি না করা যায় তাহলে বলতে হবে এর চেয়ে বড় ব্যর্থতা নেই আর আমাদের। শিবচরের দুর্ঘটনায় অকালে ঝরে গেছে অনেকগুলো প্রাণ। এর মধ্যে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এক শিক্ষার্থীও ছিলেন। যারা চলে গেলেন তাদের তো আর ফিরিয়ে আনা যাবে না। তাদের পরিবারগুলোকে এই শূন্যতা সারাজীবনই বয়ে বেড়াতে হবে। আমরা শুধু তাদের আত্মার মাগফিরাতই কামনা করতে পারি। একইসঙ্গে এটাই প্রত্যাশা করতে পারি- এমন দুর্ঘটনা আর না ঘটুক, সড়কে ফিরে আসুক শৃঙ্খলা।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close