হুসাইন আহমদ

  ১৮ মার্চ, ২০২৩

মুক্তমত

অগ্নিঝরা এ মাসেই বাঙালির স্বাধীনতা

স্বাধীনতা একটি শব্দ। যার মধ্যে লুকিয়ে আছে মহাকাশের বিশালতাসম মানুষের মুক্তির পদচিহ্ন, অধিকারের স্বপ্ন ও এক পরম পাওয়া। আরেকভাবে বললে, মানুষ তার প্রাপ্য অধিকার কীভাবে অর্জন করবে এটি তারই যেন এক রূপকল্প। অসহায়, দুর্বল ও সুবিধাবঞ্চিত মানুষ যখন তার প্রাপ্য পাওনাটুকু বুঝে নিতে চায়, তখন তার ভেতরে এক ধরনের স্বাধিকারবোধের সৃষ্টি হয়। আর তার পূর্ণাঙ্গ রূপই হলো স্বাধীনতা। এজন্য বলা হয়, স্বাধিকার থেকেই স্বাধীনতা। স্বাধীনতা অর্জনের ইতিহাস সহস্র বছর ধরে উজ্জ্বল নক্ষত্রের মতো থাকে জাজ্বল্যমান। এই স্বাধীনতা হঠাৎ করে কখনো উদয় হওয়া নয়, বরং স্বাধীনতা অর্জনে রয়েছে ত্যাগের ও সংগ্রামের ইতিহাস। সময়ের প্রতিটি কার্যকর মুহূর্ত যেন ধাপে ধাপে জাতিকে এগিয়ে নিয়ে চলে মুক্তিকামী মানুষের দুয়ারে। ১৯৫২-এর ভাষা আন্দোলন থেকে সংগ্রাম শুরু করা বাঙালি জাতি পরবর্তী ১৯৬৯-এর গণ-অভ্যুত্থান। ১৯৭০-এর নির্বাচন পেরিয়ে ১৮৭১-এর মহান স্বাধীনতার সূর্যটি ছিনিয়ে নেয় বীরদর্পে। আর এই প্রতিটি ধাপে ধাপে বাঙালি জাতি প্রমাণ করেছে কতটা স্বাধীনতার প্রয়োজনীয়তা ও গুরুত্বতা।

এই স্বাধীনতা হলো, প্রয়োজন থেকে মানুষের চাওয়া। আর এই চাওয়া-পাওয়ার মধ্যে অসামঞ্জস্য দেখা দিলেই মানুষ তার অধিকারের প্রশ্নে সজাগ হয়ে ওঠে, গড়ে তোলে তুমুল আন্দোলন। ফলে চলে আসে ১৯৭১-এর মতো মুক্তির সময়, বাঙালির স্বাধীনতার রক্তিম সূর্য। ১৯৭১-এর মার্চ মাসেই বাঙালি জাতি বুঝে ফেলে বিশ্ব মানচিত্রে লাল-সবুজের পতাকা উড়তে চলছে। আর হ্যাঁ, স্বাধীনতা মানে শুধু আঁকিবুঁকি করে একটি লাল বৃত্ত তৈরি করা নয় বরং ‘সূর্যাকার’ সেই বৃত্তটিকে মহাকাশে পৌঁছে দিয়ে পুরো জাতির জন্য প্রাপ্য আলোটুকু নিশ্চিত করার মধ্যেই স্বাধীনতার সাফল্য লুকায়িত। যে সূর্যের আলো সেদিন বীর বাঙালি তার প্রতিটি ঘরে পৌঁছে দিয়েছিল। সেই আলোর উজ্জ্বলতা আমরা কতটুকু বজায় রাখতে পেরেছি? সেই বিস্তীর্ণ পথে কতটুকুই বা হাঁটতে পেরেছি আমরা? এই কথাগুলো আজও প্রশ্নবিদ্ধ। আমরা কি স্বাধীনতার সঠিক ব্যবহার করছি? আমরা কি স্বাধীনতাকে যথাযথভাবে কাজে লাগাতে পারছি? আর আমরা কি স্বাধীনতাকে আমাদের পরবর্তী প্রজন্মের কাছে পৌঁছাতে পারব? এসব নিয়ে আলোচনা-সমালোচনার সুযোগ আছে। কিন্তু একটি ব্যাপারে আমরা নিশ্চিত, স্বাধীনতার মতো বৃহৎ বিষয়টি সম্মুখে আনতে হলে জাতি হিসেবে আমাদের আরো ঐক্যবদ্ধ হতে হবে। মানুষের কথা বলার স্বাধীনতা, দুমুঠো খেয়ে-পরে বেঁচে থাকার স্বাধীনতা কিংবা নিজের মতো পথ চলার যে স্বাধীনতা, এসব নিশ্চিতকরণের মধ্য দিয়েই সমাজ থেকে সব অনিয়ম, অভিযোগ এবং অধিকারহীনতা থেকে মানুষকে মুক্ত করা সম্ভব। হ্যাঁ, এ দেশে যথাসম্ভব বাকস্বাধীনতা প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। কিন্তু অত্যাচারিত মানুষগুলোর পাশে দাঁড়িয়ে কজন মানুষ তাদের সাহায্যে এগিয়ে আসছে? নারীর ওপর অত্যাচার এ দেশে ক্রমেই বেড়েই চলছে। প্রতিনিয়ত নারী তার প্রাপ্য স্বাধীনতাকে হারাচ্ছে। গরিব-অসহায়, অধিকার বঞ্চিত মানুষ তার স্বাধীনতাকে হারাচ্ছে! এই স্বাধীনতা হরণ করছে কারা! এই স্বাধীনতাকে পরাধীনতার দিকে নিয়ে যাচ্ছে কারা! তাদের বিষয়ে কঠোর পদক্ষেপ নিতে হবে। কারণ, এই পরাধীনতাই মূলত স্বাধীনতাকে প্রশ্নবিদ্ধ করে। মনে রাখতে হবে, শুধু জাতীয় সংগীতের সুরে পতাকাকে সুউচ্চে ওঠানোই স্বাধীনতা নয়। বরং স্বাধীনতাকে এগিয়ে নিতে পতাকার লাঠিকে ঐক্যবদ্ধ হাতের বাঁধনে রাখতে হবে। এই হাত শক্ত রাখতে অর্জন করতে হবে অর্থনৈতিক, সামাজিক ও সর্বক্ষেত্রে সমণ্ডঅধিকারের স্বাধীনতা। তবেই তো তাকে স্বাধীনতা বলা যায়। আর যদি স্বাধিকার থেকে অর্জিত স্বাধীনতাকে যদি মুক্তি দিতে না পারা যায়। তবে আমাদের স্বাধীনতা অপূর্ণই রয়ে যাবে। হ্যাঁ, বাঙালি আশাবাদী জাতি, সে পথচলায় অবিচল, কর্মের মাধ্যমে সে তার অর্জিত স্বাধীনতাকে মহাকাশের জ্বলজ্বলে নক্ষত্রে পরিণত করতে পারবে এক দিন। বৈষম্যহীন, সুন্দর পৃথিবী নির্মাণে অনন্য উচ্চতায় এগিয়ে যাবে এক দিন, যা স্বাধীনতার এক অবিচ্ছেদ্য অংশ।

অতএব, এই দেশ আমাদের, এই দেশের সমস্যাও আমাদের, সমাধানও খুঁজতে হবে আমাদের। আর তাই অগ্নিঝরা এই স্বাধীনতার মাসে আমরা সবাই অঙ্গীকারবদ্ধ হই যে, বিশ্ব মানচিত্রে একটি উন্নত শক্তিশালী উন্নয়নশীল দেশ হিসেবে আমাদের বাংলাদেশের নাম থাকুক সবার ওপরে। শহীদের রক্তে রাঙানো লাল-সবজের পতাকায় যেন কোনো কলঙ্কের দাগ না লাগে। স্বাধীনতার মানচিত্র যেন সদা অক্ষুণ্ন থাকে। আর এর জন্য সদাসর্বদা সজাগ দৃষ্টি থাকুক আমাদের ও নতুন প্রজন্মের।

লেখক : প্রাবন্ধিক ও কলাম লেখক

[email protected]

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close