reporterঅনলাইন ডেস্ক
  ২৮ জানুয়ারি, ২০২৩

ছিনতাই প্রতিরোধে দৃশ্যমান পদক্ষেপ জরুরি

আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর জোর তৎপরতায় দীর্ঘদিন ছিনতাইয়ের কবল থেকে মুক্ত ছিল রাজধানীবাসী। মাঝে মধ্যে ঘটলেও এতটা ব্যাপক ছিল না। তবে ইদানীং মাথা চাড়া উঠছে দুর্বৃত্তরা, ফলে বেড়েছে ছিনতাই। রাজধানীর মোহাম্মদপুর, ধানমন্ডি, জিগাতলা, কারওয়ান বাজার, ফার্মগেট, বাংলামোটর, হাইকোর্টসহ বিভিন্ন এলাকার রাস্তায় ছিনতাইয়ের ঘটনা বেশি ঘটে। এসব এলাকায় ছিনতাই করে পালিয়ে যায় সন্ত্রাসীরা। ধরা পড়লেও অল্প সময়ে ছাড়া পেয়ে আবারো একই অপরাধে জড়িয়ে পড়ে তারা। এমনও হয়েছে যে, কোনো ছিনতাইকারী ১৫-১৬ বার পুলিশের হাতে ধরা পড়ে জেলে গেছে, কিন্তু বের হয়ে আবারো ফিরে এসেছে সেই পুরোনো পেশায়।

রাজধানীর নাগরিক জীবনে অন্তহীন সমস্যার মধ্যে চুরি-ছিনতাইয়ের উপদ্রবও একটি। অনেক এলাকায় সন্ধ্যা নামলে মানুষ নিরাপত্তাহীনতায় ভোগে। কমবেশি প্রতিদিনই রাজধানীর বিভিন্ন এলাকা ও উপকণ্ঠে ছিনতাইয়ের শিকার হচ্ছেন মানুষ। বিশেষ করে সন্ধ্যার পর অনিরাপদ হয়ে পড়ছে ঢাকার সড়ক ও অলিগলি। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী নানা উদ্যোগ নেওয়ার কথা বললেও তা পরিণত হয়েছে ‘বজ্র আঁটুনি ফসকা গেরো’র মতো। ছিনতাইকারীর হাতে কেউ মারা গেলে কিংবা লুট হয়ে যাওয়া টাকার পরিমাণ বেশি হলেই শুধু এসব ঘটনা আলোচনায় আসে। ছোটখাটো ছিনতাইয়ের ঘটনা হয়ে পড়ে গুরুত্বহীন। মূলত পেশাদার অপরাধীরাই ছিনতাইয়ের সঙ্গে জড়িত। তাদের প্রতিরোধে ঢাকা মহানগরের আটটি অপরাধ বিভাগের সব থানার ওসিকে ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে বলে জানা গেছে। কিন্তু বাস্তবতা হলো, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পদক্ষেপ সত্ত্বেও ছিনতাই-দস্যুতা দূর হয়েছে বলে দাবি করা যাবে না। ঢাকা মহানগর পুলিশের তথ্যানুযায়ী, রাজধানীতে ২০২২ সালে ছিনতাইয়ের ঘটনায় হারানো সাধারণ ডায়েরি হয়েছে সাড়ে আট হাজারের বেশি। একই সঙ্গে নিখোঁজের জিডি হয়েছে প্রায় ছয় হাজার। এছাড়া অন্যান্য অপরাধে মামলা হয়েছে ২৮ হাজার ৭৪৯টি, যা আগের বছরের চেয়ে অনেক বেশি। ছিনতাইয়ের ঘটনায় কোনো মামলার সঠিক চিত্রও পাওয়া যায় না। প্রতিদিন যতগুলো ঘটনা ঘটে, তার সামান্যই প্রকাশ পায় এসব সাধারণ ডায়েরি থেকে। ছিনতাই বেড়ে যাওয়ায় অভিযানও চালানো হচ্ছে। কিন্তু গ্রেপ্তার হলেও এসব আসামির মধ্যে অনেকেই খুব দ্রুত ছাড়া পেয়ে যায়।

নাগরিক জীবনে স্বস্তি আনতে ছিনতাই ও মলম পার্টির উৎপাত অবশ্যই বন্ধ করতে হবে। এজন্য পুলিশ প্রশাসনের নজরদারি জোরদার করতে চিহ্নিত স্পটগুলোতে এলাকাভিত্তিক সিসিটিভি ক্যামেরা বসানো হোক। এতে ছিনতাইকারী শনাক্ত করার পাশাপাশি সাধারণ মানুষকে নিরাপত্তা দেওয়া সহজ হবে বলে আমরা মনে করি। অন্যদিকে মাদকের সঙ্গে অপরাধের সম্পর্ক ওতপ্রোত, তাই সরকারের সংশ্লিষ্ট দপ্তর বা বেসরকারি সমাজসেবা প্রতিষ্ঠানগুলো মাদকাসক্তদের পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করলে কিছু অপরাধ কমে যাবে। এক্ষেত্রে নাগরিকদেরও দায়িত্ব রয়েছে। দেখা যায়, ছিনতাইয়ের কবলে পড়েও অনেকেই পুলিশের সহযোগিতা নেয় না, এমনকি অবহিতও করে না। এতে অপরাধের সঠিক পরিসংখ্যান অজানা থেকে যায়, যা প্রতিরোধে সমস্যা তৈরি করে। মোদ্দাকথা, ছিনতাই প্রতিরোধে দৃশ্যমান পদক্ষেপ জরুরি। যাতে স্বস্তি ফিরে আসে নাগরিক জীবনে। আর এটাই আমাদের প্রত্যাশা।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close