reporterঅনলাইন ডেস্ক
  ২৪ জানুয়ারি, ২০২৩

শব্দদূষণের তাণ্ডব দ্রুত বন্ধ হোক

রাজধানীতে শব্দদূষণ অসহনীয় পর্যায়ে ঠেকেছে। রাস্তায় বেরোলেই যানবাহনের শব্দে কান পাতা দায়। যানজটে এই সমস্যা তীব্র থেকে তীব্রতর হয়। চারপাশে তখন হর্নের কোরাস চলতে থাকে। যেন হর্ন বাজালেই যানজট কেটে যাবে। তবে শব্দদূষণের উৎস শুধু যানবাহনই নয়, একে আরো অসহনীয় করে তোলে বাড়িঘর ও মেশিনারিজের শব্দ। দোকানপাটে উচ্চৈঃস্বরে মাইক। আর সামান্য কারণে মানুষের চিৎকার চেঁচামেচি তো দিনের অধিকাংশ সময়জুড়ে চলতেই থাকে। বলতে গেলে এগুলোও শব্দদূষণে অনেকাংশে ভূমিকা রাখছে। শব্দদূষণের কারণে নগরবাসী নানা শারীরিক সমস্যায় ভুগছে। বিনিষেধ সত্ত্বেও এর মাত্রা দিন দিন বেড়েই চলেছে। আর সমস্যা শুধু ঢাকাতে নয়; দেশের বড় বড় শহরে বিদ্যমান।

শব্দের মাত্রার একককে বলা হয় ডেসিবেল। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মতে, আবাসিক এলাকায় শব্দের মাত্রা দিনের বেলা ৫৫ ডেসিবেল, রাতে ৪৫ ডেসিবেল হওয়া উচিত; বাণিজ্যিক এলাকায় দিনে ৬৫ ডেসিবেল, রাতে ৫৫ ডেসিবেল; শিল্পাঞ্চলে দিনে ৭৫ ডেসিবেল, রাতে ৬৫ ডেসিবেলের মধ্যে থাকা উচিত। আর হাসপাতালে সাইলেন্স জোন বা নীরব এলাকায় দিনে ৫০, রাতে ৪০ ডেসিবেল শব্দ মাত্রা থাকা উচিত। স্বীকৃত বৈজ্ঞানিক নিয়ম অনুযায়ী, শব্দের মাত্রা ৮৫ ডেসিবেল বা তার বেশি হলে তা মানবদেহের জন্য ক্ষতিকর। অথচ ঢাকা মহানগরীতে এমন কোনো জায়গা পাওয়া যাবে না যেখানে শব্দের মাত্রা স্বাভাবিক পর্যায়ে আছে। প্রায় সব এলাকাতেই শব্দ গ্রহণযোগ্য মাত্রার চেয়ে দুই থেকে তিন গুণ বেশি। বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি অব হেলথ সায়েন্সেসের গবেষণা বলছে, পেশাজীবীদের মধ্যে কানের সমস্যায় সবচেয়ে বেশি ভুগছেন রিকশাচালকরা। ৪১ দশমিক ৯ শতাংশ চালক কানের রোগে আক্রান্ত। এর পরের অবস্থানে আছে ট্রাফিক পুলিশ। কারণ দিনের বেশির ভাগ সময় এদের রাস্তায়ই থাকতে হয়। শব্দদূষণের ফলে মাথা ধরা, কানে শব্দ হওয়া, রক্তচাপ বেড়ে যাওয়া, হৃদরোগ, খিটখিটে মেজাজ, পেটে আলসার, অনিদ্রা, মানসিক উত্তেজনা, উদ্বেগ-উৎকণ্ঠাসহ নানা সমস্যার সৃষ্টি হয়। উচ্চ শব্দের মধ্যে থাকতে থাকতে একজন মানুষের শ্রবণশক্তি মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে। তবে বেশি ক্ষতি হয় শিশুদের। এতে তাদের মনোযোগ দেওয়ার ও কিছু পড়ার ক্ষমতা লোপ পেতে পারে। ঢাকায় সাধারণভাবে যানবাহন ও হর্নের শব্দই শব্দদূষণের মূল কারণ। তবে এর বাইরেও বিভিন্ন অনুষ্ঠানে উচ্চ শব্দে মাইক বা সাউন্ড সিস্টেম ব্যবহার আরেকটি বড় কারণ। কেউ কেউ নিজের বাসায় উচ্চ শব্দে গান শোনেন বা অন্য কোনো সাউন্ড ডিভাইস ব্যবহার করেন। অথচ এটিকে তারা কোনো অপরাধই মনে করেন না।

বলাবাহুল্য, এর প্রতিবাদ বা প্রতিকার চাইতে গেলে উলটো হেনস্তার শিকার হতে হয়। এমনকি প্রতিবাদ করতে গিয়ে মারধরের শিকার হয়ে মৃত্যুর ঘটনাও ঘটেছে খোদ রাজধানীতে। কিন্তু দুঃখের বিষয়, শব্দদূষণ নিয়ন্ত্রণে আইন আছে, রয়েছে উচ্চ আদালতের রায়ও, তা সত্ত্বেও নেই এর বাস্তবায়ন। উপযুক্ত ব্যবস্থা নেওয়া হলে আজ হয়তো শব্দদূষণ এত মারাত্মক আকার ধারণ করত না। আমরা চাই, জনস্বাস্থ্যের গুরুত্বের কথা বিবেচনা করে দ্রুত শব্দদূষণ বন্ধে আইনের বাস্তবায়ন করা হোক। একই সঙ্গে যত্রতত্র হর্ন থেকে বিরত থাকাসহ তা নিয়ন্ত্রণে কর্তৃপক্ষ ব্যবস্থা গ্রহণ করবে। আর এটাই আমাদের প্রত্যাশা।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close