reporterঅনলাইন ডেস্ক
  ২৫ নভেম্বর, ২০২২

কর্মসংস্থান তৈরিতে ব্ল্যাক বেঙ্গল

ছাগল একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রাণিসম্পদ। বিশ্বে ছাগল পালনে চতুর্থ স্থান দখল করে আছে বাংলাদেশ। আমাদের দেশে আদিকাল থেকে যে ছাগল লালিত-পালিত হয়ে আসছে তা ব্ল্যাক বেঙ্গল ছাগল, আর বিদেশ থেকে বিশেষত ভারত থেকে আমদানি হয় রামছাগল। এ দেশের আবহাওয়া ব্ল্যাক বেঙ্গল জাতের ছাগল পালনে অত্যন্ত উপযোগী। ব্ল্যাক বেঙ্গল জাতের ছাগল পালনের মাধ্যমে গ্রামীণ জনগোষ্ঠীর বেকারত্ব দূরীকরণ এবং দারিদ্র্য বিমোচন সহজেই সম্ভব। ব্ল্যাক বেঙ্গল পৃথিবীর পাঁচটি সেরা মাংস উৎপাদনজাতের মধ্যে অন্যতম। মাংস সুস্বাদু, চামড়া আন্তর্জাতিক মানের। এদের বাচ্চা উৎপাদন ক্ষমতা বেশি এবং বাচ্চার মৃত্যুহার কম। আমাদের দেশের জলবায়ুতে এর জীবনযাপনের উপযোগিতা বেশি। ব্ল্যাক বেঙ্গল রামছাগলের চেয়ে অনেক আগে বয়োপ্রাপ্ত হয় এবং একই সময় রামছাগলের তুলনায় ২ থেকে ২ দশমিক ৫ গুণ বেশি বাচ্চা জন্ম দেয়। ফলে ব্ল্যাক বেঙ্গল লালন-পালন হতে পারে দারিদ্র্য বিমোচনের হাতিয়ার।

বাংলাদেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে প্রাণিসম্পদ খাতের ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। ২০১৯-২০ অর্থবছরে জিডিপিতে স্থির মূল্যে প্রাণিসম্পদ খাতের অবদান ১ দশমিক ৪৩ শতাংশ এবং প্রবৃদ্ধির হার ৩ দশমিক শূন্য ৪ শতাংশ। সার্বিক কৃষি খাতে প্রাণিসম্পদ খাতের অবদান ১৩ দশমিক ৪৪ শতাংশ। জিডিপিতে প্রাণিসম্পদ খাতের অংশ স্বল্প হলেও মানুষের দৈনন্দিন আমিষের চাহিদা পূরণের পাশাপাশি প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি ও দারিদ্র্য বিমোচনে এর গুরুত্ব অপরিসীম। প্রতিদিনের সংবাদের এক প্রতিবেদন থেকে জানা গেছে, ব্ল্যাক বেঙ্গল জাতের ছাগল উন্নয়ন ও সম্প্রসারণ প্রকল্পের মাধ্যমে বিদ্যমান সরকারি সাতটি খামারের আধুনিকায়ন করা হয়েছে। ফলে খামারগুলো ব্ল্যাক বেঙ্গল ছাগল উন্নয়ন ও সম্প্রসারণে মডেল খামার হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে। প্রান্তিক খামারিদের মধ্যে ছাগল পালনের আধুনিক পদ্ধতি সম্পর্কে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে। সরকারি খামারগুলো থেকে উপজেলা পর্যায়ে খামারিদের ছাগল পালনে প্রয়োজনীয় সেবা প্রদানের জন্য সাতটি সরকারি ছাগল উন্নয়ন খামার থেকে উন্নতমানের পাঁঠা সরবরাহ নিশ্চিত করা হয়েছে। ছাগলের বাচ্চার পুষ্টি নিশ্চিতকরণের লক্ষ্যে মিল্ক রিপ্লেসার (ছাগল ছানার বিকল্প দুধ) এবং কৃমিনাশক ও অন্যান্য অতি প্রয়োজনীয় ওষুধ বিনামূল্যে প্রদান করা হয়েছে। এতে প্রকল্পভুক্ত এলাকা ছাড়াও অন্যান্য এলাকায় উন্নতমানের মাচা প্রযুক্তি এবং মিল্ক রিপ্লেসার ব্যবহারসহ ব্যবস্থাপনা কার্যক্রমে ব্যাপকভাবে সম্প্রসারিত হয়েছে। এতে বিদেশফেরত যুবক, বেকার জনগোষ্ঠীর মধ্যে ব্যাপক আগ্রহ সৃষ্টি হয়েছে বাণিজ্যিক ছাগলের খামার স্থাপনে। তা ছাড়া ব্ল্যাক বেঙ্গল ছাগলের কৃত্রিম প্রজনন কার্যক্রমের চাহিদা বৃদ্ধি পেয়েছে। সরকারের এই প্রকল্পগুলো নিঃসন্দেহে বেকারত্ব দূরীকরণে এবং দারিদ্র্য বিমোচনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে।

খামারি পর্যায়ে ব্ল্যাক বেঙ্গল ছাগলের প্রাকৃতিক প্রজনন সেবা প্রদান, রোগ নিয়ন্ত্রণের ব্যবস্থাপনার উন্নয়ন, ছাগল পালন ও পাঁঠা পালনে আগ্রহী দক্ষ জনবল তৈরি এবং জাত সংরক্ষণে সরকারের পক্ষ থেকে এমন আরো প্রকল্প বাস্তবায়ন করা উচিত। দেশে যেহেতু বেকারত্বের হার বেশি এবং কর্মসংস্থানের অভাবও রয়েছে, সেহেতু বেকার তরুণরা সরকারের সহায়তা নিয়ে ছাগল লালন-পালন করে স্বাবলম্বী হতে পারে। আর এর মাধ্যমে ব্যাপক উন্নয়ন হতে পারে প্রাণিসম্পদ খাতেরও। এ ক্ষেত্রে তরুণ-যুবকদের উৎসাহী করে তুলতে সরকারের সুদূরপ্রসারী উদ্যোগ নেওয়া জরুরি।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close