reporterঅনলাইন ডেস্ক
  ১৪ আগস্ট, ২০২২

চা শ্রমিকদের মজুরি নিয়ে কিছু কথা

দেশের চা শ্রমিকরা অল্প মজুরিতে কাজ করেন। যুগ যুগ ধরে এই ধারা চলে আসছে। কিন্তু বর্তমানে জিনিসপত্রের দাম বেড়ে যাওয়ায় সম্ভবত শ্রমিকদের পিঠ দেয়ালে ঠেকেছে। বেঁচে থাকার তাড়না তাদের আজ এখানে দাঁড়াতে বাধ্য করেছে। ডাক দিয়েছেন আন্দোলনের। বলছেন, দৈনিক ১২০ টাকা বেতনে একটি পরিবার কীভাবে বেঁচে থাকতে পারে! কিন্তু আমরা বেঁচে আছি, বেঁচে আছি জীবন্ত লাশ হয়ে। আমাদের দিকে তাকানোর কেউ নেই। নিজেরাই নিজেদের মতো করে বেঁচে থাকা। বুকভরে নিঃশ্বাস নেওয়ারও ক্ষমতা নেই। আকাঙ্ক্ষা না থাকলেও বেঁচে আছি প্রকৃতির ইচ্ছায়। কষ্টের ঝিনুক দিয়েই সাজানো সংসার। চোখে কোনো স্বপ্ন নেই। চারপাশে জমাট অন্ধকার।

পত্রিকায় প্রকাশিত সংবাদ বলছে, দৈনিক ৩০০ টাকা মজুরির দাবিতে আন্দোলনের চতুর্থ দিনে দুই ঘণ্টা কর্মবিরতি পালন করছেন শ্রীমঙ্গলের ৪২টি চা বাগানের শ্রমিকরা। মালিকের আশ্বাস না পেলে কঠোর কর্মসূচির মধ্য দিয়ে আন্দোলন আরো ঘনীভূত করা হবে। আশ্বাস এখনো পাওয়া যায়নি। আন্দোলন শেষ পর্যন্ত কোনদিকে গড়ায়, তা সময়ই বলে দেবে। তবে দেশের ২৩১টি চা বাগান থেকে একযোগে দাবি মেনে নেওয়ার স্লোগানে মুখরিত হচ্ছে বাগানের নিস্তব্ধ পরিবেশ।

বাগানের এক নারীশ্রমিক আক্ষেপ করে বলেছেন, ‘১২০ টাকা মজুরি পাই। এদিয়ে সংসার চলে না। অনেক কষ্ট করে জীবন কাটাতে হয়। খাওয়া-দাওয়া ভালো হয় না। সন্তানদের পড়াশোনাও করাতে পারি না। সবকিছুর দাম বাড়লেও আমাদের মজুরি বাড়ে না। এটাই আমাদের জীবন, আমাদের বেঁচে থাকা।’ তার চিন্তায়, ‘চায়ের দাম ও উৎপাদন বাড়লে মজুরি কেন বাড়বে না-, যখন আমাদের বেঁচে থাকার ওপরই নির্ভরশীল বাগানের অস্তিত্ব।’

উল্লিখিত নারীশ্রমিক নন কোনো শিক্ষিতজন। তবে তিনি যা বলেছেন, তা অর্থনীতি শাস্ত্রের প্রথমপাঠ। শ্রমকে বাদ দিয়ে বিশ্ব মানচিত্রের কোরো উৎপাদনই সম্ভব নয়। তাদের ন্যায্য পাওনা থেকে বঞ্চিত করাকে অপরাধ হিসেবে গণ্য করা যেতে পারে। আমাদের সমাজব্যবস্থা কখনোই বিষয়টিকে অপরাধ হিসেবে বিবেচনায় নেয়নি। আর সে কারণেই শ্রমিকদের অসন্তোষ এবং আন্দোলন। তথ্য মতে, ১৯ মাস ধরে এ আন্দোলন চলছে। কিন্তু মালিকপক্ষের কাছ থেকে এখন পর্যন্ত কোনো সাড়া মেলেনি। শ্রমিকের পক্ষে কথা বলারও কেউ নেই। দাবি-দাওয়ার প্রশ্নে আইনের অবস্থানও তাদের জানা নেই যেন। তারা শুধু জানেন, চা বাগানের অন্ধকার এত সহজে সরার নয়। তাই নিয়তির কাছে অর্পণ করেই যেন বেঁচে আছেন চা-শ্রমিকরা।

পৃথিবী তো এখন সভ্যতার দাবিদার। সম্ভবত আমরাও তার অংশীদার। রাষ্ট্রের কাছে বেঁচে থাকার অধিকার সবার সমান। আর সুসম বণ্টনেই এর বিন্যাস। কিন্তু দুর্ভাগ্যজনক হলেও সত্য, বিপত্তিটা সেখানেই। বণ্টনের ক্ষেত্রে এই অসমতাই অঢেল অনৈতিকতার জন্ম দিচ্ছে। যে অনৈতিকতার শিকার চা বাগানের অগণিত শ্রমিক। আমরা মনে করি, এর একটি সমাধান হওয়া দরকার। যে সমাধান চা বাগান শ্রমিকদের বেঁচে থাকার অধিকারকে সুসংহত করতে পারবে, মর্যাদাবান করতে পারবে এবং মানবিক মূল্যবোধের পাল্লায় তুলে নিজেকে মহিমান্বিত করতে সক্ষম হবে। আমি, তুমি, সে এবং সভ্যতা বিকশিত হবে- এটুকুই প্রত্যাশা।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close