reporterঅনলাইন ডেস্ক
  ২৯ জুন, ২০২২

শৃঙ্খলা ফিরবেই পদ্মা সেতুতে

একটি মহাযজ্ঞের নান্দনিক সমাপ্তি হয়ে গেল ২৫ জুন। উদ্বেলিত, উল্লসিত ও উদ্ভাসিত ছিল গোটা দেশ। দিনটি ছিল মানুষের দীর্ঘদিনের লালিত স্বপ্নের একটি নগদ উপঢৌকন। ভিড় তো এখানে হবেই। যারা এখানে এসেছিলেন তাদের ভেতরে ছিল প্রচণ্ড আবেগ। যাকে সামাল দেওয়াটা সবার জন্য সম্ভবও ছিল না। এমন একটি দিনে নিরাপত্তাকর্মীরাও কঠোরতা আরোপ করতে পারেননি। যা ছিল খুবই স্বাভাবিকের একটি অংশ। কিছুটা হলেও শৃঙ্খলা ভেঙেছে। বিচ্ছিন্ন দু-একটি ঘটনাও ঘটেছে। তবে এতে উদ্বেগ হওয়ার মতো তেমন কিছু ঘটেছে বলে মনে করারও কিছু নেই। তবে স্বাভাবিকতা ফিরে আসার অপেক্ষায় সাধারণ মানুষ তাকিয়ে আছে কর্তৃপক্ষের দিকে। সরকারও মুখ তুলে তাকিয়েছে। বলা যায়, শৃঙ্খলা ফিরছে।

স্বপ্নের পদ্মা সেতু চালুর প্রথম দিনেই বেশ কয়েকটি অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেছে। সেই পরিস্থিতি এড়াতে সাধারণ মানুষ যেন পদ্মা সেতুতে চলাচলের সময় নির্ধারিত নিয়ম মেনে চলে, সেজন্য অতিরিক্ত নজরদারি বাড়ানো হয়েছে। আইন বাস্তবায়নে কঠোরতা অবলম্বন করা হয়েছে হেঁটে বা মোটরসাইকেল নিয়ে সেতুতে প্রবেশ নিষিদ্ধ করা হয়েছে। সেতুতে অবতরণও নিষেধের আওতায় নেওয়া হয়েছে। সকাল থেকে টহল দিচ্ছে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর সদস্যরা। ফলে শৃঙ্খলা এখানে বাধ্যতামূলক হওয়ার পথে এগিয়ে চলেছে।

শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনতে সবার আগে যা প্রয়োজন তা হলো আইনের সুষ্ঠু বাস্তবায়ন। আবার আইনের বাস্তবায়ন নির্ভর করে সেইসব কর্মকর্তা-কর্মচারী- যাদের ওপর দায়িত্ব অর্পিত হয়। তাদের সততা, দক্ষতা এবং আন্তরিকতার ওপর নির্ভর করে শৃঙ্খলার গতি প্রকৃতি কী হবে। আমাদের দেশে অভাবটা এখানেই। সততা, দক্ষতা এবং আন্তরিকতায় ঘাটতি প্রচুর। যদি পদ্মা সেতুর শৃঙ্খলা রক্ষা করতে হয় তাহলে সততা, আন্তরিকতা এবং দক্ষতার ওপর জোর দেওয়াই হবে সঠিক পদক্ষেপ।

এখানেই শেষ নয়, সাধারণ মানুষের বোধের উৎকর্ষতা বাড়ানোর ব্যবস্থা নিতে হবে। প্রতিটি মানুষকে বুঝতে হবে পদ্মা সেতু শুধু একটি সেতু নয়। এটি আমাদের ইতিবাচক একটি অহংকারও বটে। তাই এই সেতুকে ব্যবহার করতে হবে সন্তান পালনের মতো। সেতুর ওপর কোনো আঘাত এলে তা যেন প্রতিটি নাগরিকের ওপর আঘাত হিসেবে গণ্য করা হয়। মনে রাখতে হবে, গড়ে তোলা যতটা কঠিন, ভেঙে ফেলা ততটা সহজ। আমরা আমাদের স্বপ্নের সেতুকে সন্তানের মতো ভালোবাসব। এটুকু প্রত্যাশা করা যেতেই পারে।

গত রবিবার পদ্মা সেতুতে ঘুরতে গিয়ে মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় দুই তরুণের মৃত্যু হয়। পরে সেতুতে মোটরবাইক চলাচল বন্ধ করা হয়। নিষেধাজ্ঞা সত্ত্বেও সোমবার মোটরসাইকেল উঠেছিল পদ্মা সেতুতে। তবে চালিয়ে নয়, পিকআপে তুলে পদ্মা সেতু পাড়ি দিয়েছে মোটরবাইক। এক চালক বলেছেন, সড়কে দুর্ঘটনা হতেই পারে। সমস্যা নিয়ন্ত্রণে কাজ করা যেতে পারে। মোটরসাইকেল নিষিদ্ধ করা ভালো সিদ্ধান্ত নয়। যদি কোনো বাস দুর্ঘটনায় পড়ে, তাহলে কী বাস চলাচলও নিষিদ্ধ হবে!

কথায় যুক্তি আছে। তবে সরলীকরণ কাম্য নয়। যিনি বা যারা গাড়ি চালাবেন, তাদেরও দায়িত্ব নিতে হবে। দায়িত্বজ্ঞানহীন চালকের জন্য পদ্মা সেতু নয়। একই সঙ্গে নিরাপত্তা রক্ষায় নিয়োজিত সদস্যদেরও দায়িত্ব সম্পর্কে সজাগ থাকতে হবে। আসুন, আমরা শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনতে নিজ নিজ অবস্থান থেকে দায়িত্ব পালনে এগিয়ে আসি। মনে রাখতে হবে, পদ্মা সেতু আমাদের দীর্ঘদিনের আবেগে গড়া এক ঐতিহাসিক স্থাপনা। আমাদের প্রেম, আমাদের ভালোবাসা।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close