reporterঅনলাইন ডেস্ক
  ১৫ মে, ২০২২

বল্গাহীন গো-মাংসের চাপে ক্রেতাপক্ষ

পরিবারের গার্ডিয়ান না থাকলে পরিবারের কী হাল হয় তা আমাদের অজানা নয়। গার্ডিয়ানের আভিধানিক অর্থ অভিভাবক। আর এই অভিভাবকবিহীন পরিবার অনেকটা নাবিকবিহীন জাহাজের মতো। বিশাল জলরাশির মধ্যে দিকহীন চলার মতো। যেকোনো অঘটনের অপেক্ষায় থাকা এক অনন্ত যাত্রা। যাত্রীদের সামনে থাকে না কোনো ইতিবাচক ভবিষ্যৎ। বাংলাদেশের বাজারের দিকে তাকালে আমাদের সে কথাই মনে করিয়ে দেয়। প্রায় প্রতিটি দেশে বাজারের অভিভাবক হিসেবে আমরা একটি সুষ্ঠু বাজার ব্যবস্থাপনার চিত্র দেখতে পাই। কিন্তু দুর্ভাগ্যজনক হলেও সত্য স্বাধীনতার ৫০ বছর অতিক্রম করার পরও বাংলাদেশ সে ব্যবস্থাপনার খোঁজ পেল না। অভিভাবকহীন হয়েই পড়ে থাকল সুদীর্ঘ সময়। আর সে কারণেই বাজারে অনৈতিকতার অনুপ্রবেশ। অনৈতিক মানুষের আধিপত্য।

তেলের জ্বালানি শেষ হতে না হতেই গো-মাংসের বল্গাহীন ঊর্ধ্বগতিতে মানুষ নাজেহাল। শুধু ভোজ্য তেলই মানুষকে বিপাকে ফেলেনি, পেঁয়াজের মূল্যবৃদ্ধির পাঁয়তারা চলছে। সবজির দামও কিছুটা বেড়েছে। পেঁয়াজ আমদানির মেয়াদ শেষ হওয়ায় প্রতিবেশী দেশ ভারত থেকে পণ্যটি আসা বন্ধ। প্রতিক্রিয়ায় দাম বেড়েছে। প্রশ্ন হলো, বাজার ব্যবস্থাপনা কি ঘুমিয়ে থাকে? আমদানিকে সুষ্ঠু পথে পরিচালনা করার ক্ষমতা এবং যোগ্যতা কি তারা হারিয়েছে! যদি তাণ্ডই হয়, এমন ব্যবস্থাপনার কি কোনো প্রয়োজন আছে!!

এ নিয়ে বিতর্ক হতে পারে। তবে সমাজে সুষ্ঠু বাজার ব্যবস্থাপনার গুরুত্ব অনেক। সুষ্ঠু বাজার ব্যবস্থাপনা ছাড়া কোনো কিছুতেই ইতিবাচক ফলাফল পাওয়া যায় না। অব্যবস্থাপনা শুধু ধ্বংসকেই ডেকে আনে। যার প্রতিফলন দেশের বাজার ব্যবস্থাপনার দিকে তাকালেই টের পাওয়া যায়। ঢাকায় এখন প্রতি কেজি গরুর মাংস ৭০০ থেকে ৭৫০ টাকা। পাশাপাশি খাসির মাংস ৮৫০ থেকে ১০০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। কিন্তু অস্টেলিয়ায় এই মাংস প্রতি কেজির দাম ৪ দশমিক ৯০ ডলার, যা বাংলাদেশি টাকায় ৪০০ টাকা।

আবার প্রতিবেশী ভারতের পশ্চিমবঙ্গের কলকাতা শহরে মহিষের মাংসের দাম প্রতি কেজি ২৩৫ থেকে ২৭০ টাকা। তথ্য মতে, দক্ষিণ এশিয়ার মধ্যে বাংলাদেশে গরুর মাংসের দাম সবচেয়ে বেশি। কেন এ দেশে এত বেশি দাম? এ ব্যাপারে পক্ষে-বিপক্ষে অনেক যুক্তিও আছে। তবে তা চাহিদা ও জোগানের প্রশ্নে। বাজার ব্যবস্থাপনা নিয়ে তাদের কোনো মাথাব্যথা নেই। নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের ব্যাপারে বাজার ব্যবস্থাপনাও যে একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় সে বিষয়টি তাদের রোজনামচায় থাকে না। আমরা সবাই জানি, চাহিদা ও জোগানে ভারসাম্য হারালে বাজার লাগামহীন পাগলা ঘোড়ার মতো ছুটবে। আর এই পাগলা ঘোড়ার লাগাম টেনে রাখার দায়িত্ব বাজার ব্যবস্থাপনার। তার চেয়েও বড় কথা, চাহিদা ও জোগানের ভারসাম্য রক্ষার দায়িত্বও বাজার ব্যবস্থাপনার। বছরের আগাম হিসাব-নিকাশ করেই তাদের চাহিদা ও জোগানের ব্যবস্থাপনা নিশ্চিত করতে হবে। কিন্তু ব্যবস্থাপনার দায়িত্বে থাকা ব্যক্তিরা কখনোই তা করেননি। কিন্তু কেন?

সম্ভবত ব্যক্তিগত স্বার্থই তাদের এ কাজ না করার জন্য উৎসাহ জুগিয়েছে। তাদের উৎসাহেই সৃষ্টি হয়েছে সিন্ডিকেট। যেখানকার প্রতিটি ব্যবসায়ীই নৈতিকতার কোনো ধার ধারেন না। সমাজের অর্থনীতি, রাজনীতিসহ সবকিছুই তাদের নিয়ন্ত্রণে। এদের প্রতিহত করার মতো শক্তি কোথায়! আশা করি দ্রুতই এর একটা সমাধান হবে।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close