reporterঅনলাইন ডেস্ক
  ২৪ জুন, ২০২১

কোভিড প্রতিরোধে বৈষম্যই বড় বাধা

করোনা মহামারির সঙ্গে যুদ্ধে বিশ্ব মানব সম্প্রদায় আজ অনেকটা ব্যাকফুটে। আত্মরক্ষা ছাড়া বিকল্প কিছুর সন্ধান এখনো পায়নি তারা। এখন পর্যন্ত একমাত্র টিকাই শেষ ভরসা। টিকা নিয়ে বিশ্বজুড়ে চলছে এক বিশাল বৈষম্য। আর এই বৈষম্যের কবলে পড়ে ভুগতে হচ্ছে দরিদ্র রাষ্ট্রগুলোকে। বহু দরিদ্র রাষ্ট্রকে টিকাদান কর্মসূচি চালিয়ে যাওয়ার মতো যথেষ্ট টিকা নেই। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডব্লিউএইচও) পক্ষ থেকে বলা হয়, কো-ভ্যাকসিন কর্মসূচির আওতায় ১৩১ দেশে ৯ কোটি ডোজ টিকা দেওয়া হয়েছে। কিন্তু এই সামান্য সহযোগিতা দিয়ে দেশগুলোর জনগণকে সুরক্ষা দেওয়া সম্ভব হয়ে উঠছে না। সে কারণেই করোনা প্রতিহত করা খুব কঠিন হয়ে পড়ছে। টিকা এখনো সহজলভ্য পণ্যে পরিণত হতে পারেনি। তাই এসব দেশ করোনাভাইরাস থেকে জনগণকে সুরক্ষা দেওয়ার মতো ক্ষমতা তাদের থাকছে না। বাইরে থেকে সংগ্রহ করার মতো অর্থও তাদের নেই। পাশাপাশি বণ্টনব্যবস্থাও সুষম বণ্টনের আওতায় আসেনি। অথচ বিশ্বজুড়ে ভাইরাসটির সংক্রমণ এখনো অব্যাহত আছে।

আফ্রিকার কিছু দেশে যখন সংক্রমণের তৃতীয় ঢেউ শুরু হয়েছে, তখনই টিকার এই ঘাটতি দেখা দিয়েছে। এমন পরিস্থিতিতে দরিদ্র দেশগুলোকে কোভিডের হাত থেকে বাঁচার সুযোগ তৈরি করে দেওয়ার জন্য দক্ষিণ আফ্রিকার প্রেসিডেন্ট সিরিল রামাফোসা ধনী দেশগুলোকে টিকা মজুদ করে রাখার চিন্তাচেতনা থেকে বেরিয়ে আসার আহ্বান জানিয়েছেন। এদিকে বিশ্বে করোনা রোগীর সংখ্যা দ্রুত বাড়তে শুরু করেছে। মহাদেশীয় পর্যায়ে আফ্রিকাজুড়ে এ পর্যন্ত মাত্র চার কোটি ডোজ টিকা দেওয়া হয়েছে; যা মোট জনসংখ্যার ২ শতাংশেরও কম। বিবিসির তথ্য মতে, বিশ্বজুড়ে করোনাভাইরাসের টিকাপ্রাপ্তি নিশ্চিত করার লক্ষ্যে গত বছর কোভ্যাক্স গঠন করা হয়। এই উদ্যোগে দরিদ্র দেশগুলোকে টিকা ক্রয়ের ক্ষেত্রে ধনী দেশগুলোর ভর্তুকি দেওয়ার কথা।

ডব্লিউএইচও ও অন্যান্য আন্তর্জাতিক সংস্থার নেতৃত্বে পরিচালিত কোভ্যাক্স প্রথমে ২০২১ সালের মধ্যে বিশ্বজুড়ে ২০০ কোটি ডোজ টিকা জোগান দেওয়ার লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করে। কিন্তু উৎপাদনে জটিলতা ও সরবরাহে বিঘ্ন ঘটায় টিকা বিতরণের গতি শ্লথ হয়ে পড়েছে। আর সে কারণেই কোভ্যাক্সের ওপর পুরোপুরি নির্ভরশীল দেশগুলোতে টিকার ঘাটতি দেখা দিয়েছে। একদিকে ধনী রাষ্ট্রগুলোর বিশাল মজুদ গড়ে তোলার প্রতিযোগিতার পাশাপাশি দরিদ্র রাষ্ট্রগুলোর অসহায়ত্ব নতুন করে প্রমাণ করল বৈষম্যের তীব্রতা। এই বৈষম্যই মানুষকে আজ অসহায়ত্বের বৃত্তে কঠিনভাবে আটকে রেখেছে। সম্ভবত মানব সম্প্রদায়ের ঘুমের ঘোর এখনো কাটেনি। বোধোদয় হয়নি। করোনা মহামারি থেকে এখনো শিক্ষাগ্রহণ করেনি। বোধোদয় হলে করোনাকালীন বিশ্বে নতুন করে ৫২ লাখ ধনকুবেরের জন্ম হতো না আর একই সময়ে আরো চার কোটি মানুষ দুর্ভিক্ষপীড়িত হয়ে মৃত্যুর প্রহর গুনত না। এটাই হচ্ছে বৈষম্য সৃষ্টির এক জীবন্ত উদাহরণ।

আমরা মনে করি, করোনা মহামারিকে দ্রুত মোকাবিলা করতে হলে চাই ঐক্যবদ্ধ প্রয়াস। আর সেই প্রয়াস সামনে আনতে হলে চাই বৈষম্যের পরিমাণ কমানো। চাই যূথবদ্ধ সিদ্ধান্ত। অন্যথায় করোনাকে পরাজিত করা সম্ভব নয়। মনে রাখা দরকার যে, মানুষ সামাজিক জীব। একে অপরকে অবলম্বন করেই বেঁচে আছে, বেঁচে থাকে। এর বাইরে চিন্তা করলে অস্তিত্ব বিপন্ন হওয়ার সম্ভাবনাই বেশি। আমরা চাই, কেবল টিকা বৈষম্যই নয়, সব বৈষম্যেরই অবসান হোক।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close