reporterঅনলাইন ডেস্ক
  ২২ সেপ্টেম্বর, ২০২০

চাষাবাদ ব্যবস্থাপনার উন্নয়ন জরুরি

ধান এ দেশের প্রধান খাদ্যশস্য। অর্থনীতির চালিকাশক্তি হিসেবে এর গুরুত্ব অনেক। ঘনবসতিপূর্ণ এ দেশের জনসংখ্যা ক্রমেই বাড়ছে। পাশাপাশি নানা কারণে কমছে আবাদি জমির পরিমাণ। রয়েছে নানা প্রাকৃতিক দুর্যোগ। এসব প্রতিকূলতা মোকাবিলা করে নির্দিষ্ট পরিমাণ জমিতে বেশি ধান উৎপাদন করে দেশের খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করা দুঃসাধ্য। তার পরও এ দেশের কৃষকের ঐকান্তিক প্রচেষ্টা এবং সরকারের উৎপাদনমুখী পদক্ষেপের ফলে দেশ আজ খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ। বিশ্বে ধান উৎপাদনকারী দেশগুলোর মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান চতুর্থ। এখানকার হেক্টরপ্রতি গড় ফলন ৪ দশমিক ২ টন। চীন, জাপান ও কোরিয়ায় এ ফলন হেক্টরপ্রতি ৬ থেকে ৬ দশমিক ৫ টন। দেশের ক্রমবর্ধমান জনসংখ্যার খাদ্য চাহিদার সঙ্গে সংগতি রেখে ধানের ফলন বাড়ানো ছাড়া কোনো বিকল্প সুযোগ নেই।

তবে নানামুখী দুর্যোগের মুখে থাকা বাংলাদেশি কৃষকের সুখবর জানিয়েছেন জাপানি বিজ্ঞানীরা। তাদের উদ্ভাবিত একটি নতুন জাতের লবণসহিষ্ণু ধান বাংলাদেশের মতো প্রাকৃতিক দুর্যোগপ্রবণ অঞ্চলে কৃষকের উপকারে আসবে। জিনগত উন্নতির পথ খুঁজে বের করে এই ধান তৈরি করেছে জাপানের জাতীয় কৃষি গবেষণা প্রতিষ্ঠান এনএআরও। টোকিওর সংবাদ সংস্থা কিয়োডো নিউজ এ তথ্য জানিয়েছে। জাতীয় কৃষি গবেষণা প্রতিষ্ঠান এনএআরওর বরাত দিয়ে গত রোববার প্রকাশিত প্রতিবেদনে বলা হয়, জাপানের বিজ্ঞানীরা এমন এক জিন খুঁজে পেয়েছেন, যা মূলবৃদ্ধির ‘অ্যাঙ্গেল’ নির্ধারণে ভূমিকা রাখে। বৈশ্বিক জলবায়ু পরিবর্তনের এ দিনগুলোতে এই আবিষ্কার আরো নতুন জাতের সন্ধান দেবে বলে আশা প্রতিষ্ঠানটির বিজ্ঞানীদের। গবেষক দলটিকে উদ্ধৃত করে প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ২০৫০ সাল নাগাদ জাপানের উপকূলীয় এলাকাসহ পৃথিবীর কয়েকটি দেশের অর্ধেকের বেশি আবাদি জমি লবণের কারণে ক্ষতিগ্রস্ত হবে। বাংলাদেশের দক্ষিণাঞ্চলে এখনই ধানের উৎপাদন অনেকাংশে কমে গেছে। ধানগাছের শেকড় জমির অবস্থা অনুযায়ী কীভাবে বেড়ে উঠবে, তা এই জিনের মাধ্যমে নকশা করা সম্ভব, জানিয়ে সংস্থাটির প্রধান বিজ্ঞানী ইউসাকু উগা বলেন, লবণাক্ত জমিতে এর ফলন কয়েকগুণ বাড়বে। অন্য জমিতেও সাধারণ ধানের মতো ফলন দেবে। নিঃসন্দেহে আমাদের দেশের কৃষকের জন্য এটি একটি সুসংবাদ। কারণ বৈশ্বিক জলবায়ু পরিবর্তনে ক্ষতিগ্রস্ত দেশগুলোর মধ্যে বাংলাদেশ অন্যতম। প্রতি বছরই ঝড়ঝঞ্ঝা, বন্যা, নদী ভাঙন ও উপকূলে লবণাক্ততা সৃষ্টির ফলে ধান উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ব্যাহত হচ্ছে। এ ক্ষেত্রে জাপানি বিজ্ঞানীদের উদ্ভাবিত নতুন জাতের লবণসহিষ্ণু ধান বাংলাদেশের মতো প্রাকৃতিক দুর্যোগপ্রবণ অঞ্চলে কৃষকের উপকারে আসবে।

বলা সংগত, আমাদের দেশে খাদ্য শুধু নিরাপত্তার জন্য নয়, ভবিষ্যৎ জনগোষ্ঠীর বসবাস উপযোগী পরিবেশ সৃষ্টির লক্ষ্যেও ধানের আবাদ বৃদ্ধির প্রতি গুরুত্ব দেওয়া প্রয়োজন। বর্তমানে ধান উৎপাদনে বৃদ্ধির হার, মাথাপিছু চালের চাহিদা ও সরবরাহ, খাদ্যাভ্যাসে পরিবর্তন, ক্রয়ক্ষমতা, জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার এবং আগামীতে এগুলোর সম্ভাব্য পরিবর্তন হার ইত্যাদি বিবেচনা করে ধান উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা প্রয়োজন। এ ছাড়া নতুন কোনো প্রজাতির প্রচলন শুরু করার আগে সতর্কতার সঙ্গে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে নেওয়া ভালো। আর একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো, ধানের ফলন বা উৎপাদন বৃদ্ধির জন্য বাংলাদেশে নতুন কোনো জাতের প্রচলন থেকে চাষাবাদ ব্যবস্থাপনার উন্নয়ন জরুরি। এর ফলে উৎপাদন উল্লেখযোগ্য পরিমাণে বৃদ্ধির সুযোগ রয়েছে বলে আমরা মনে করি।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close