reporterঅনলাইন ডেস্ক
  ১৪ ফেব্রুয়ারি, ২০২৪

তরুণ প্রজন্মের ভাবনায় ভালোবাসা

হৃদয়ের গভীরে পবিত্র এক অনুভূতির নাম ভালোবাসা। ভালোবাসা মানে সম্পর্ক, মানুষে মানুষে বিশ্বাসের ভিত্তি। ভালোবাসা মানে পরস্পরকে বুঝতে পারা। ভালোবাসা মানে শুধু ভালো লাগা নয়। এই ভালো লাগায় থাকে মানসিক প্রশান্তি, থাকে আত্মার সম্পর্ক। আধুনিক যুগের ভালোবাসা শুধু প্রেমিক-প্রেমিকার বাঁধনেই সীমাবদ্ধ। কিন্তু ভালোবাসা সর্বজনীন। তবে ভালোবাসার জোয়ার আসে তরুণ বয়সেই। আর ক্যাম্পাস জীবনে ভালোবাসা আসবে না তা তো হয় না। ছোট-বড় সবারই জানা ১৪ ফেব্রুয়ারি দিনটি ভালোবাসা দিবস। ভালোবাসা নিয়ে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের কয়েকজন তরুণ শিক্ষার্থীর ভাবনা তুলে ধরেছেন মেহেরাবুল ইসলাম সৌদিপ

স্রষ্টার দেওয়া শ্রেষ্ঠ উপহার ভালোবাসা

ভালোবাসার কোনো নির্দিষ্ট সংজ্ঞা নেই। ভালোবাসা সৃষ্টিকর্তার দেওয়া একটি সুন্দর গুণ। সবার সেই গুণ থাকে না। ভালোবাসা একটি মানবিক অনুভূতি এবং আবেগকেন্দ্রিক একটি অভিজ্ঞতা। বিশেষ কোনো মানুষের জন্য স্নেহের শক্তিশালী বহিঃপ্রকাশ হচ্ছে ভালোবাসা। ভালোবাসা মানে মানুষের সঙ্গে মানুষের আবেদনময় একটি সম্পর্ক। দায়িত্ববোধ, সম্মানবোধ, কমিটমেন্ট সবকিছুর মিলিয়েই যেন ভালোবাসার জন্ম। ভালোবাসার নির্দিষ্ট কোনো বয়স হয় না, না হয় নির্দিষ্ট মানুষ। যা নিজেই নিজের ভেতর লালন করতে হয় এবং ভালোবাসার মানুষের কাছে তা প্রকাশ করতে হয়। মানুষ শুধু বয়সেই বাঁচে না, মানুষ মূলত ভালোবাসায় বেঁচে থাকে। আর এ ভালোবাসা হৃদয়ের গভীর দিয়ে অনুভব করতে হয়। এ অনুভব করার অনুভূতি অনেকের থাকে না। যার ফলে সৃষ্টি হয় প্রতিহিংসা ও অহংবোধের। ভালোবাসায় বাঁচুক প্রতিটি মানুষ।

শারমিন আক্তার আয়শা

শিক্ষার্থী, পরিসংখ্যান বিভাগ

ভালোবাসা হোক পবিত্র

মানুষকে নিজের করে নেওয়ার সবচেয়ে সহজতর পন্থা নিঃসন্দেহে ভালোবাসা। ভালোবাসাই পারে সব ধরনের হিংসা, দ্বেষ বা হানাহানি থেকে সুন্দর এক পৃথিবী আমাদের উপহার দিতে। পৃথিবীর গুরুত্বপূর্ণ ও সময়োপযোগী সব গ্রন্থেই ভালোবাসার ওপর গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। বর্তমান সময়তে ফেব্রুয়ারি মাসকে ভালোবাসার সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত মনে করা হয়। যদিও তরুণ প্রজন্ম এ ভালোবাসাকে শুধুই তথাকথিত প্রেম ও বৈবাহিক হিসাবনিকাশের নিমিত্তে নিয়ে গেছে। বাস্তবিক অর্থে ভালোবাসা হওয়া উচিত সামগ্রিক। যার সূচনাটা হতে হবে ঘর হতে একদম বিশ্বব্যাপী। মানুষ আজকাল নিজের স্বার্থে বাবা-মায়ের সঙ্গে চোখ রাঙাতে বা ছেড়ে দিতে পিছপা হয় না। করোনাকালীন সময়ে করোনা আক্রান্ত বাবা-মায়ের অবহেলার দৃশ্য নিয়মিতই হতবাক করতো দেশবাসীকে। সেরূপ লোকজনই যখন ভালোবাসা দিবসে ভালোবাসায় মহিয়ান হয়ে যায়, তখন সেটা লজ্জাজনক বটে। প্রকৃতপক্ষে, পৃথিবীর সবার জন্য জীবনদানকারী বাবা-মা হতে ভালোবাসার সূচনা হওয়া উচিত। পুরো পৃথিবী ভরে সুন্দর হোক একে অন্যের ভালোবাসা।

মিথিলা দেবনাথ ঝিলিক

শিক্ষার্থী, পদার্থবিজ্ঞান বিভাগ

পৃথিবী পূর্ণতা পাক ভালোবাসায়

ভুবনের সবচেয়ে দামি বিষয়টি হলো ভালোবাসা। সৃষ্টিকর্তা মানুষের হৃদয়কে এত কোমল করে সৃষ্টি করেছেন যে মানুষ সহজেই মায়ায় জড়িয়ে যায়। পরিবার আমাদের ভালোবাসার প্রাথমিক বিদ্যালয়। সেখানেই মূলত ভালোবাসার প্রথম হাতেখড়ি। আজকাল তরুণদের দেখা যায় বিশেষ দিনটি একজন প্রিয় মানুষকে নিয়েই কাটাচ্ছে। আবার দেখা যায় বাকি ৩৬৪ দিন ভালোবাসার রেশটুকু পাওয়া না গেলেও এইদিনে উপচে পড়া ভালোবাসা। এই বিশেষ দিনের ভালোবাসা শুধু নর-নারীর মাঝে নয়, বিশ্বজুড়ে ছড়িয়ে যাক। আমরা যেমন আমাদের প্রিয় মানুষদের ভালোবাসি, তেমনি প্রিয় বস্তু বা পোষা প্রাণীকেও ভালোবাসি। দিবসটি ভালোবাসা শুধু একজনকে ঘিরে নয় বরং সমস্ত সৃষ্টি জুড়ে। যত দাঙ্গা-হাঙ্গামা চলছে সব নিমিষেই ভেঙে ফেলা যায় ভালোবাসা দিয়ে। শান্তি বিরাজমান হোক, পৃথিবী ভালোবাসায় পূর্ণ হোক।

বিথী রানী মন্ডল

শিক্ষার্থী, নাট্যকলা বিভাগ

ভালোবাসা এক অদৃশ্য স্বর্গীয় অনুভূতি

মানুষের জীবনে প্রেম আসে বারবার। কিন্তু ভালোবাসা আসে শুধু একবার। প্রেম হলো ক্ষণস্থায়ী আর ভালোবাসা হলো দীর্ঘস্থায়ী। ভালোবাসা হলো লজ্জাবতী বৃক্ষের মতো। যার পরশে মানুষের মন লাজুক হয়ে যায়। একজন মানুষ যতই ভালোবাসার মানুষকে দেখে ততই সে লজ্জায় লুকিয়ে থাকে। ভালোবাসা হলো এক স্বর্গীয় অনুভূতি, যা কোনোভাবেই সজ্ঞায়িত করা যায় না। কিন্তু প্রেম হলো সুগন্ধি ফুলের ঘ্রাণের মতো। যত সময় ফুলের ঘ্রাণ থাকে, তত সময় প্রেম থাকে। তবে ভালোবাসা থাকে অনন্ত কাল। মানুষের জীবনে প্রেম হয় আগে আর পরে রূপান্তরিত হয় ভালোবাসায়। কিন্তু আধুনিক যুগে প্রেম-ভালোবাসা হয়ে গেছে ছলনাময়ী ও স্বার্থবাদী। প্রেম ও ভালোবাসার নামে মানুষের জীবন নিয়ে ছিনিমিনি খেলে। ভালোবাসা এমন হওয়া উচিত যেখানে থাকবে না ভোগ বিলাসিতা। ভালোবাসার মানুষকে কাছে না পেলেও দূরে থেকে তাকে যেন নীরবে ভালোবেসে যেতে পারি এমন। চোখের তাকালে যেন দেখতে পাই সারা বিশ্বের ভালোবাসার প্রতিচ্ছবি।

নাজমুন নাহার মুনা

শিক্ষার্থী, চারুকলা বিভাগ

ভালোবাসার সংজ্ঞাটাই অন্যরকম

ভালোবাসার নানা রং। এক একজনের কাছে তাই ভালোবাসার সংজ্ঞাটাও আলাদা। কারো কাছে ভালোবাসা প্রেমময় গান বা কবিতার লাইন আবার কারো কাছে লাল গোলাপ হয়ে ধরা দেয়। তবে অনুভূতির গভীরতা মাপতে গেলে তল পাওয়া যায় না কারো মনেরই। ভালোবাসা এমনই এক উষ্ণতা, যা একই রকম থেকে যায় আজীবন। জীবনে মায়ের স্থান যেমন বদলে যায় না কোনো দিন, প্রিয় বই বা গান যেমন নির্দিষ্ট থেকে যায় মনে, তেমনি ভালোবাসার স্বরূপও পালটায় না। আমরা যাকে ভালোবাসি তাকে চিরদিনই বাসি। মানুষ হোক বা বস্তু, প্রিয় সবকিছু বরাবরই বড্ড রঙিন। প্রিয়কে হারানোর আশঙ্কা তাই এতটা তীব্র। হয়তো সময়ের সঙ্গে বাড়তে পারে দূরত্বের পরিমাণ বা থেমে যেতে পারে যোগাযোগ। তবু ভালোবাসা ম্লান হয় না। যত দিন থাকে, থেকে যায় একটি রক্ত-মাংসের প্রাণের মতো।

ফারজানা ইয়াসমিন জীবন

শিক্ষার্থী, গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগ

সম্মান-বিশ্বাসের ব্যাপারটাই ভালোবাসা

ভালোবাসা একটি মানবিক অনুভূতি এবং আবেগকেন্দ্রিক একটি অভিজ্ঞতা। মানবজীবনে ভালোবাসা হলো পরমাণু শক্তির মতো। ব্যক্তি জীবনের সুখ-দুঃখ, আনন্দ, হাসি-কান্না সবকিছু ভাগাভাগি করে নিতে কিছু কাছের মানুষ ভালোবাসার মানুষের প্রয়োজন। এই ভালোবাসা ছাড়া মানুষ অসহায়। ভালোবাসা মানুষকে সুখী হতে সাহায্য করে। তবে সম্মানহীন ভালোবাসা ঠুনকো। ভালোবাসায় থাকতে হয় শ্রদ্ধা ও সম্মানবোধ। ভালোবাসা শুধু প্রেমিক-প্রেমিকার মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়। ভালোবাসতে হয় নিজেকে। সব ধরনের ভালোবাসায় থাকতে হয় বিশ্বাস। ভালোবাসা হবে নিখুঁত। যেখানে থাকবে সম্মানবোধ। ভালোবাসা দিয়ে ভালোবাসা জয় করতে হয়। ভালোবাসা আমাকে সব সময় মুগ্ধ করে। ভালোবাসার কোনো সীমা নেই। ভালোবাসলে কেউ জিতে যায়, কেউ হেরে যায়, কেউ লিখে যায় কবিতা, কেউ বা গেয়ে যায় গান। এই ভালোবাসার মায়ায় একবার পড়ে গেলে সব উজাড় করে দেওয়া সম্ভব। তবু ভালোবাসা সুন্দর। চিরস্থায়ী হোক সবার জন্য সবার ভালোবাসা।

মো. মেহেদী হাসান

শিক্ষার্থী, গণিত বিভাগ

ভালোবাসা বেঁচে থাকুক আজীবন

প্রতিটি মানুষের মন ভালোবাসার জন্য আকুল হয়ে থাকে, হয়ে ওঠে আন্দোলিত। ভালোবাসা পাওয়ার জন্য প্রত্যেকেরই মন কাঁদে। মানুষ ভালোবাসতে চায়, ভালোবাসা পায়, আবার ভালোবাসা থেকে পালিয়ে বেড়ায় আত্মগোপন করে, প্রতারিত এমনকি খুন হয়। ভালোবাসার জন্য কেউ কেউ আত্মহত্যা করে। ভালোবাসার জন্য রাজ্য ছেড়েছে এমন কাহিনি অনেক। কিন্তু ভালোবাসা থেকে পালাতে পারে না কেউ। ভালোবাসতে গিয়ে কতজনের মন ভেঙেছে, কতজন বিবাগী হয়েছে তার হিসেব অজানা। তারপরও মানুষ ভালোবাসতে চায়। কারণ ভালোবাসাই জীবন, ভালোবাসাই মরণ, ভালোবাসা অনন্ত প্রেরণা। বুদ্ধিমত্তার সঙ্গে ভালোবাসার কথা জানালে প্রত্যাখ্যানের কোনো শঙ্কা থাকে না। চিরায়ত পন্থা অথবা সৃজনশীল কোনো উপায়- যেভাবে হোক না কেন মূল কথা হলো ভালোবাসার বহিঃপ্রকাশ। জোয়ার-ভাটার জীবনে ভালো দিন আসুক কিংবা মন্দ সময়, ভালোবাসার কথা জানানোর ক্ষণটি হৃদয় অতলে তবুও বেঁচে থাক অনাদিকাল।

শেখ শাহরিয়ার হোসেন

শিক্ষার্থী, সমাজকর্ম বিভাগ

সংবেদনশীল সূক্ষ্ম অনুভূতিই ভালোবাসা

‘ভালোবাসা’ বিষয়টি একটি অদ্ভুত, সংবেদনশীল ও সূক্ষ্ম অনুভূতি, তাকে কোনো নির্দিষ্ট সংজ্ঞায় সংজ্ঞায়িত করা সম্ভব নয়। যেখানে সব ভালোর অস্তিত্ব বিরাজ করে, তা-ই ‘ভালোবাসা’। যুবক-যুবতীর প্রেম উৎসারিত ভালোবাসার বাইরেও ভালোবাসা রয়েছে। ভালোবাসার অজস্র রূপ, সহস্র রং! মানবজীবনের সব ক্ষেত্রেই ভালোবাসার আবহ তৈরি করা প্রয়োজন। মানুষ বেঁচে থাকে ভালোবাসায় এবং বেঁচে থাকার ইচ্ছে জাগে ভালোবাসার কারণেই। তবে বর্তমানে মানুষের মূল্যবোধের অবক্ষয়প্রাপ্ত অস্থির সময়ে মানুষের অন্তর থেকে এ শুদ্ধ অনুভূতি ক্রমে হ্রাস পাচ্ছে। ভালোবাসার স্পর্শ হতাশা আর বিষণ্ণতাকে মুছে দিতে পারে, নিরাসক্ত-নির্জীবের বুকে আনতে পারে প্রাণের জোয়ার। ভালোবাসার দ্বারা পৃথিবী থেকে হানাহানি, হিংসা, বিদ্বেষের বিষবাষ্প মুছে দেওয়া সম্ভব। ভালোবাসাকে সর্বজনীন দৃষ্টিভঙ্গিতে ফিরিয়ে আনতে হবে। ভালোবাসা হোক প্রতিদিনের, প্রতি মুহূর্তের! সামাজিক, পারিবারিক, ধর্মীয় ও রাষ্ট্রীয় পরিমন্ডলসহ সর্বত্র ভালোবাসা হোক মানবিকতা, সহনশীলতা ও সহমর্মিতার প্রধান উৎসভূমি! চলুন সবাই ভালো থাকি এবং ভালোবাসায় বিশ্বকে ভালো রাখি।

সোহানুর রহমান সুবেল

শিক্ষার্থী

গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগ

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close