প্রতিদিনের সংবাদ ডেস্ক

  ১৩ অক্টোবর, ২০২১

বিশ্বের সঙ্গে ভালো সম্পর্ক গড়তে চায় তালেবান

আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় ও দেশগুলোর কাছে সুসম্পর্কের বার্তা পাঠিয়েছে আফগানিস্তান। আফগানিস্তানের সঙ্গে ভালো সম্পর্ক বজায় রাখার জন্য আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন তালেবান সরকারের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আমির খান মুত্তাকি। দোহায় এক ভাষণে তিনি বলেছেন, তারা কোনো দেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপ করতে চায় না। অন্যদের কাছ থেকেও একই রকমের আচরণ প্রত্যাশা করে। দোহায় যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বৈঠকের পর একের পর এক বিদেশি প্রতিনিধিদের সঙ্গে বৈঠক করছে তালেবান। মুত্তাকি জানিয়েছেন, গতকাল দোহায় ইইউর প্রতিনিধিদের সঙ্গে তারা বৈঠক করেছেন। খবর বিবিসি, আলজাজিরা ও ডয়েচে ভেলের।

মোল্লা আমির খান মুত্তাকি জানিয়েছেন, তারা বিশ্বের সব দেশের সঙ্গে ভালো সম্পর্ক গড়ে তুলতে চান। এরই মধ্যে কিছু বৈঠক হয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের পর জার্মানি, কাতার ও সবশেষে ইইউর সঙ্গে তাদের বৈঠক হয়েছে। সবই ইতিবাচক বৈঠক বলে জানান তিনি। মুত্তাকি আরো বলেন, আমরা একটা ভারসাম্যের নীতি নিয়ে চলতে চাই। একমাত্র এই নীতিই আফগানিস্তানকে স্থিরতা দিতে পারে।

তিনি বলেন, ইসলামিক আমিরাত আফগানিস্তানের ক্ষমতাকে পুরোপুরি কাজে লাগাতে এবং একটি অর্থনৈতিক বিপ্লবের অংশীদার হতে বদ্ধপরিকর।

যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে তালেবানের সাম্প্রতিক বৈঠক নিয়েও কথা বলেন আমির খান মুত্তাকি। তিনি বলেন, যুক্তরাষ্ট্র ও ইসলামি আমিরাতের মধ্যে স্বাক্ষরিত দোহা চুক্তির পূর্ণ বাস্তবায়ন দুই দেশের মধ্যে যে কোনো সমস্যা সমাধান করতে পারে।

তালেবানের সঙ্গে বৈঠকের ব্যাপারে ইইউর মুখপাত্র নবিলা মাসরালি বলেন, আলোচনার মানে এটা নয়, ইইউ আফগানিস্তানকে কূটনৈতিক স্বীকৃতি দিচ্ছে। তিনি আরো বলেন, নারীদের অধিকার ও আফগানিস্তানকে সাহায্য দেওয়া নিয়ে কথা হয়।

এর আগে প্রথমবারের মতো তালেবানের নতুন সরকারের প্রতিনিধিদের সঙ্গে মুখোমুখি বৈঠকে বসে যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিনিধি দল। কাতারের দোহায় স্থানীয় সময় শনি ও রোববার অনুষ্ঠিত হয় এ বৈঠক। এরপর জার্মানির প্রতিনিধিদের সঙ্গে বৈঠক হয় সোমবার। সেখানে আফগানিস্তান ও পাকিস্তানের জন্য বিশেষ জার্মান প্রতিনিধি মার্কাস পটজেলও ছিলেন। তিনিই এখন আফগানিস্তানের রাষ্ট্রদূতের দায়িত্ব পালন করছেন।

আলোচনার পর জার্মান প্রতিনিধিরা জানান, আফগানিস্তানে তালেবান এখন বাস্তব। মার্কিন ও ন্যাটো বাহিনী আফগানিস্তান ছেড়ে চলে গেছে। জার্মানির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জারি করা বিবৃতিতে বলা হয়েছে, আফগানিস্তানে এখনো যে জার্মান নাগরিকরা আছেন এবং যেসব আফগান নাগরিকদের প্রতি জার্মানির বিশেষ দায়িত্ব আছে, তারা যাতে নিরাপদে কাবুল ছাড়তে পারে তা নিয়ে কথা হয়েছে। জার্মানির প্রতিনিধিরা মানবাধিকার ও বিশেষ করে নারীদের অধিকার রক্ষা নিয়ে কথা বলেছেন।

এর আগে, তালেবানের সঙ্গে বৈঠকে ‘স্পষ্ট ও পেশাদার’ আলোচনা হয়েছে বলে যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষ থেকে জানানো হয়। বৈঠকের পর যুক্তরাষ্ট্র আরো জানায়, তালেবানকে কথা দিয়ে নয়, কাজে প্রমাণ করতে হবে।

মার্কিন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক বিবৃতিতে জানানো হয়, চলতি সপ্তাহে দোহা আলোচনায় গুরুত্ব পেয়েছে নিরাপত্তা, সন্ত্রাসবাদ নিয়ে উদ্বেগ এবং যুক্তরাষ্ট্রসহ অন্য দেশের নাগরিকদের নিরাপদে ফেরার নিশ্চয়তার বিষয়গুলো নিয়ে। এ ছাড়া আফগানিস্তানের সমাজ ব্যবস্থায় সবক্ষেত্রে নারীদের সর্বাত্মক অংশগ্রহণসহ মানবাধিকার বিষয়গুলোও উঠে এসেছে আলোচনায়।

২০ বছরের আফগানযুদ্ধের অবসান ঘটিয়ে গত ৩১ আগস্ট দেশটি থেকে সেনা প্রত্যাহার সমাপ্তি ঘোষণা করে যুক্তরাষ্ট্র আফগানিস্তান থেকে সরিয়ে নেয় ১ লাখ ২৪ হাজার আমেরিকান এবং আফগান দোভাষীকে। কিন্তু সময়মতো লোকজন সরাতে না পেরে ঝুঁকির মধ্যে পড়েন আফগান দোভাষীরা, যারা গত ২০ বছর ধরে আমেরিকা ও তাদের মিত্রদের সহযোগিতা করেছেন।

আফগানিস্তানের রাজধানী কাবুল গত ১৫ আগস্ট দখল করে নেয় তালেবান। এরপর থেকে অরাজনৈতিক পরিস্থিতির মধ্যে দেশটির অর্থনীতিতে ধস নেমে আসে। কার্যত অচল হয়ে পড়ে গোটা দেশ। বন্ধ হয়ে যায় বিদেশি সহায়তা। খাবারের সংকটে পড়ে আফগানরা তোশক-বালিশও বিক্রি করেছেন এমন খবরও পাওয়া গেছে। তালেবানের নতুন সরকারের ১ মাস হয়েছে। তাদের আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি পাওয়ার বিষয়টি এখনো প্রশ্নবিদ্ধ।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close