নিজস্ব প্রতিবেদক

  ০২ ফেব্রুয়ারি, ২০২৪

ভোক্তাঋণের সুদ বাড়ল সাড়ে ১৩%

নিত্যপণ্যের দাম বাড়ায় বড় কষ্টে আছেন সাধারণ মানুষ। এমন পরিস্থিতিতে নিয়ন্ত্রণহীন মূল্যস্ফীতি সামাল দিতে বাজারে টাকার সরবরাহ কমানোর উদ্যোগ নিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। ধারাবাহিকভাবে বাড়ানো হচ্ছে সুদহার। ভোক্তাঋণের সুদহার পড়বে প্রায় সাড়ে ১৩ শতাংশ। সাধারণত ব্যাংক থেকে ব্যক্তিগত ও ভোগ্যপণ্য যেমন গাড়ি কেনার ঋণ, আবাসন ঋণ, শিক্ষা ঋণসহ ফ্রিজ, টিভি কম্পিউটার ইত্যাদি কেনার জন্য যে ঋণ নেওয়া হয় এগুলো ভোক্তাঋণ। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) তথ্য বলছে, ২০২৩ সালের ডিসেম্বরে সার্বিক খাদ্য মূল্যস্ফীতি হয়েছে ৯ দশমিক ৫৮ শতাংশ। নভেম্বরে এই মূল্যস্ফীতি ছিল ১০ দশমিক ৭৬ শতাংশ। গত অক্টোবরে খাদ্য মূল্যস্ফীতি ছিল ১২ দশমিক ৫৬ শতাংশ, যা ছিল গত প্রায় ১২ বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ। জানুয়ারিতে ঋণের সুদহার ছিল ১১ দশমিক ৮৯ শতাংশ আর ভোক্তাঋণের সুদহার ছিল ১২ দশমিক ৮৯ শতাংশ। এখন যে পদ্ধতির ওপর ভিত্তি করে ঋণের সুদহার নির্ধারিত হচ্ছে তা হলো ‘এসএমএআরটি’ বা ‘স্মার্ট’ তথা- সিক্স মান্থ মুভিং এভারেজ রেট অব ট্রেজারি বিল। প্রতি মাসের শুরুতে এই হার জানিয়ে দেয় বাংলাদেশ ব্যাংক।

চলতি অর্থবছরের প্রথম মাস জুলাইয়ে ১৮২ দিন মেয়াদি ট্রেজারি বিলের ছয় মাসের গড় সুদহার (স্মার্ট রেট) ছিল ৭ দশমিক ১০ শতাংশ, আগস্টে ৭ দশমিক ১৪ এবং সেপ্টেম্বরে বেড়ে হয় ৭ দশমিক ২০ শতাংশ, অক্টোবরে ৭ দশমিক ৪৩, নভেম্বরে ৭ দশমিক ৭২, ডিসেম্বরে ৮ দশমিক ১৪ এবং সবশেষ জানুয়ারিতে স্মার্ট রেট বেড়ে দাঁড়ায় ৮ দশমিক ৬৮ শতাংশে।

ব্যাংকের সুদহার কত হবে : জানুয়ারি মাসের ‘স্মার্ট’ হারের সঙ্গে সর্বোচ্চ ৩ দশমিক ৭৫ শতাংশ হারে মার্জিন বা সুদ যোগ করে ফেব্রুয়ারি মাসে ঋণ দিতে পারবে ব্যাংক। সেই হিসাবে, ২০২৪ সালের দ্বিতীয় মাস ফেব্রুয়ারিতে বড় অঙ্কের ঋণে সর্বোচ্চ ১২ দশমিক ৪৩ শতাংশ শতাংশ সুদ নিতে পারবে।

প্রি-শিপমেন্ট রপ্তানি ও কৃষি ও পল্লী ঋণের ‘স্মার্ট’ হারের সঙ্গে সর্বোচ্চ ২ দশমিক ৭৫ শতাংশ হারে মার্জিন যোগ হবে। অর্থাৎ ফেব্রুয়ারি মাসে প্রি-শিপমেন্ট রপ্তানি ঋণ এবং কৃষি ও পল্লী ঋণের সর্বোচ্চ সুদহার হবে ১১ দশমিক ৪৩ শতাংশ, যা জানুয়ারিতে ছিল ১০ দশমিক ৮৯ শতাংশ। তবে ফেব্রুয়ারিতে ব্যক্তিগত ও গাড়ি কেনার ঋণে ব্যাংক সুদ নিতে পারবে ১৩ দশমিক ৪৩ শতাংশ। কারণ সিএমএসএমই, ব্যক্তিগত ও গাড়ি কেনার ঋণে অতিরিক্ত ১ শতাংশ তদারকি বা সুপারভিশন চার্জ নেওয়ার সুযোগ রয়েছে, যা জানুয়ারিতে ছিল ১২ দশমিক ৮৯ শতাংশ।

আর্থিক প্রতিষ্ঠানের সুদহার : ব্যাংকের ক্ষেত্রে শুধু ঋণে সর্বোচ্চ সীমা থাকলেও ব্যাংকবহির্ভূত আর্থিক প্রতিষ্ঠানে আমানত সংগ্রহেও সুদহারের একটা সর্বোচ্চ সীমা দেওয়া আছে। এসব প্রতিষ্ঠান স্মার্টের সঙ্গে সর্বোচ্চ ২ দশমিক ৭৫ শতাংশ সুদ যোগ করে আমানত সংগ্রহ করতে পারবে। ‘স্মার্ট’ রেটের সঙ্গে সর্বোচ্চ ৫ দশমিক ৭৫ শতাংশ হারে মার্জিন বা সুদ যোগ করে ঋণের বিপরীতে সুদ নিতে পারবে ব্যাংকবহির্ভূত আর্থিক প্রতিষ্ঠান এনবিএফআই। সেই হিসাবে ফেব্রুয়ারি মাসে তাদের সর্বোচ্চ ঋণের সুদহার হবে ১৪ দশমিক ৪৩ এবং আমানতে ১১ দশমিক ৪৩ শতাংশ, যা জানুয়ারিতে ছিল ১৩ দশমিক ৮৯ শতাংশ এবং আমানতে ১০ দশমিক ৮৯ শতাংশ। তবে ব্যাংকের মতো আর্থিক প্রতিষ্ঠানেও ফেব্রুয়ারিতে ঠিক করা ঋণের এই সুদহার পরবর্তী ছয় মাসের মধ্যে পরিবর্তন করা যাবে না।

বাংলাদেশ ব্যাংক ২০২৩ সালের জানুয়ারিতে ১৮২ দিন মেয়াদি ট্রেজারি বিলের ৬ মাসের গড় সুদহার প্রকাশ করে। সেখানে দেখা যায়, গত জানুয়ারিতে স্মার্ট ছিল ৬ দশমিক ৯৬ শতাংশ। এরপর প্রতি মাসে একটু করে বেড়ে গত মে মাসে দাঁড়ায় ৭ দশমিক ১৩ শতাংশ। জুন ও জুলাইয়ে সামান্য কমে ৭ দশমিক ১০ শতাংশে নামে। এরপর আগস্ট থেকে ধারাবাহিক সুদহার বাড়ছে।

সুদহার প্রসঙ্গে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র মো. মেজবাউল হক জানান, মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে সব ধরনের সুদের হার আরো বাড়তে পারে। এ ক্ষেত্রে ব্যাংকগুলো যাতে কোনো ধরনের সমস্যায় না পড়ে সে বিষয়ে প্রস্তুত থাকতে বলা হয়েছে।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close