প্রতিদিনের সংবাদ ডেস্ক

  ২৬ মার্চ, ২০২৩

মোদির বিরুদ্ধে ক্ষোভ ঝাড়লেন রাহুল গান্ধী

ভারতের কংগ্রেস পার্টির নেতা রাহুল গান্ধী পার্লামেন্টে অযোগ্য ঘোষিত হওয়ার ঘটনায় প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করে বলেছেন, শুরু থেকে যে প্রশ্ন তিনি করে চলেছেন, তা করেই যাবেন। গৌতম আদানি শিল্পগোষ্ঠীর লগ্নি করা ২০ হাজার কোটি রুপির উৎস কী? এই অর্থের সঙ্গে দেশের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির কী সম্পর্ক তা খোলাসা হওয়া দরকার। নয়াদিল্লিতে শনিবার (২৫ মার্চ) দুপুরে অল ইন্ডিয়া কংগ্রেস কমিটির (এআইসিসি) সদর দপ্তরে সংবাদ সম্মেলনে রাহুল গান্ধী বলেন, লোকসভায় পরবর্তী ভাষণ তিনি যাতে দিতে না পারেন, সে জন্যই তার সদস্যপদ খারিজ করা হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ভয় পাচ্ছেন। প্রধানমন্ত্রীর চোখে তিনি ভয় দেখছেন।

সংবাদ সম্মেলনে রাহুল বলেন, ‘ক্ষমা চাওয়ার প্রশ্নই ওঠে না। আমার নাম সাভারকর (হিন্দুত্ববাদের অন্যতম প্রবক্তা) নয়। আমার নাম গান্ধী।’ তিনি বলেন, ‘আমার তোলা প্রশ্ন থেকে নিজেদের আড়াল করতে আমি যা বলিনি, বিজেপি তাই তুলে ধরে ক্ষমা চাইতে বলে মূল বিষয় থেকে মানুষের দৃষ্টি অন্যত্র সরাতে চাইছে।’

রাহুল বলেন, এই গণতন্ত্রহীনতার কথাই আমি বলেছি। সে জন্যই আমার সদস্যপদ খারিজ করা হয়েছে। আমাকে জেলে ঢোকালেও এই কথা বলে যাব। তিনি বলেন, ‘বিজেপি দাবি করে আমি ভারত-বিরোধী শক্তিগুলোকে সহায়তা করছি। আমি স্পিকারকে বলেছিলাম এসব অভিযোগের বিরুদ্ধে বলাটা আমার অধিকার। কিন্তু তিনি আমাকে কথা বলতে দেননি। কিন্তু আমার মাত্র একটি পদক্ষেপ রয়েছে, সেটি হলো সত্যের জন্য লড়াই করা এবং দেশের গণতন্ত্রকে রক্ষা করা। আমাকে আজীবনের জন্য অযোগ্য করুন, যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দিন, আমি এগিয়েই যাব। আমাকে দেখতে কী চিন্তিত মনে হচ্ছে? আমি আসলে উচ্ছ্বসিত।’

রাহুল ইস্যুতে আন্দোলনে যাচ্ছে কংগ্রেস : ভারতের প্রধান বিরোধী দল কংগ্রেসের শীর্ষ নেতা রাহুল গান্ধীর পার্লামেন্টের সদস্যপদ খারিজের প্রতিবাদে দেশজুড়ে প্রতিবাদ ও আন্দোলন কর্মসূচির প্রস্তুতি নিচ্ছে দলটি। কংগ্রেসের উচ্চ পর্যায়ের নেতাদের এক বৈঠকে এ সিদ্ধান্ত হয়েছে বলে জানিয়েছেন দলটির মুখপাত্র জয়রাম রমেশ। তিনি জানান, শুক্রবার রাজধানী নয়াদিল্লিতে কংগ্রেসের নেতাদের বৈঠকে রাহুল গান্ধীর মা দলের সাবেক সভাপতি সোনিয়া গান্ধী, বর্তমান সভাপতি মল্লিকার্জুন খাড়েগ, সাবেক মন্ত্রী পি চিদাম্বরম এবং সাধারণ সম্পাদক পর্যায়ের নেতা প্রিয়াঙ্কা গান্ধী ভদ্র, কেসি বেনুগোপাল, রাজীব শুকলা, তারিক আনোয়ার, আনন্দ শর্মা, অম্বিকা সোনি, মুকুল ওয়াসনিক পবনকুমার বনসালসহ কয়েকজন নেতা উপস্থিত ছিলেন।

জয়রাম রমেশ বলেন, রাহুল গান্ধীর পার্লামেন্ট সদস্যপদ বাতিলের প্রতিবাদে আগামী দিনগুলোয় দেশজুড়ে আন্দোলনের প্রস্তুতি নিচ্ছি আমরা। বৈঠকের মূল উদ্দেশ্য ছিল সেই আন্দোনের কৌশল নির্ধারণ করা। ২০১৯ সালের লোকসভা ভোটে কর্নাটকে প্রচারে গিয়ে রাহুল প্রশ্ন তুলেছিলেন, ‘সব চোরেদের পদবী মোদি হয় কেন?’ আইপিএল কেলেঙ্কারিতে অভিযুক্ত ললিত মোদি, ব্যাংক ঋণ মামলায় ‘পলাতক’ নীরব মোদির সঙ্গে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির তুলনা টেনেছিলেন তিনি। ওই ঘটনায় ‘পদবী অবমাননার’ অভিযোগ তুলে ভারতীয় দণ্ডবিধির ৪৯৯ এবং ৫০০ ধারায় রাহুলের বিরুদ্ধে অপরাধমূলক মানহানির মামলা করেছিলেন গুজরাটের বিজেপি নেতা পূর্ণেশ মোদি। শুক্রবার সেই মামলাতেই দোষী সাব্যস্ত হন রাহুল এবং ভারতের দণ্ডবিধি অনুযায়ী তাকে দুই বছর কারাবাসের সাজা ঘোষণা করেন আদালত। বিচারক অবশ্য রাহুলকে উচ্চ আদালতে আপিল করার জন্য ৩০ দিন সময় দিয়েছেন, কিন্তু দণ্ডাদেশ স্থগিত করেননি।

এদিকে ভারতের জনপ্রতিনিধিত্ব আইন (১৯৫১) অনুযায়ী, দেশটির কোনো এমপি-বিধায়ক যদি দুই বছর বা তার বেশি সময় কারাবাসের সাজা পান, সেক্ষেত্রে ওই জনপ্রতিনিধির পার্লামেন্ট-বিধানসভার সদস্যপদ খারিজ হয়ে যায়। রাহুলের বিরুদ্ধে মামলায় রায় ঘোষণার পর দিনই জনপ্রতিনিধিত্ব আইনের আওতায় তাকে পার্লামেন্টের সদস্যপদ থেকে অব্যহতি দেন ভারতের লোকসভার স্পিকার ওম বিড়লা।

বিজেপির কঠোর সমালোচনায় সোচ্চার তৃণমূল কংগ্রেস সভানেত্রী মমতা ব্যানার্জি : পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী ও তৃণমূল কংগ্রেস নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় কেন্দ্রে ক্ষমতাসীন বিজেপির সমালোচনায় সোচ্চার হয়ে উঠেছেন। রাহুল গান্ধীর পার্লামেন্ট সদস্যপদ বাতিল হওয়ার পর তিনি বিজেপির কঠোর সমালোচনা করেন।

টুইট বার্তায় লিখেছেন, বিরোধী নেতারাই প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ও তার দল বিজেপির মূল নিশানা হয়ে উঠেছেন। যখন অতীত অপরাধের রেকর্ড থাকা বিজেপি নেতাদের মন্ত্রিসভায় অন্তর্ভুক্ত করা হচ্ছে, তখন বিরোধী নেতাদের বরখাস্ত করা হচ্ছে কেবল ভাষণ দেওয়ার জন্য! আজ গণতন্ত্র নতুন নীচতায় পৌঁছাল। কংগ্রেস ও তৃণমূল কংগ্রেস উভয় দলই বিজেপি বিরোধী হলেও কংগ্রেস ও তৃণমূল কংগ্রেসের মধ্যে টানাপোড়েন চলছে। গত বছরের মাঝামাঝি ভারতের পশ্চিমাঞ্চলীয় রাজ্য গোয়া’র বিধানসভা নির্বাচনের সময় থেকে এই টানাপোড়েনের সূত্রপাত। পরে পশ্চিমবঙ্গে সিপিএমের সঙ্গে কংগ্রেস জোট করার পর আরও তিক্ত হয়েছে দুদলের মধ্যকার সম্পর্ক।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close