আবদুস সালাম বাবু, বগুড়া

  ২৬ জানুয়ারি, ২০২৩

তৃতীয়বার প্রার্থী হলেন জাপার ওমর

বগুড়া সদর আসনে এক মেয়াদে তিনবার ভোট

বিএনপির ছেড়ে দেওয়া বগুড়ার দুটি আসনে ভোট আগামী ১ ফেব্রুয়ারি। আর এর মধ্য দিয়েই এক মেয়াদে তৃতীয়বারের মতো ভোট দেবেন বগুড়া সদর আসনের ভোটাররা। নির্বাচনী মাঠে রয়েছেন প্রার্থীরা। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ও সভা সমাবেশে প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছেন প্রার্থী ও তাদের সমর্থকরা।

নির্বাচনী এলাকায় ভোর থেকে মধ্যরাত পর্যন্ত চলছে প্রচারণা। তবে ভোট নিয়ে উৎসাহ-উদ্দীপনা বা আগ্রহ কম ভোটারদের। এদিকে এবারের উপনির্বাচনের মধ্য দিয়ে তিনবার ভোট প্রদান করবে সদর আসনের ৪ লক্ষাধিক ভোটার। পাশাপাশি একই আসনে এক মেয়াদে তিনবার প্রার্থী হয়েছেন জাপার প্রার্থী ১৪ সালের বিনাপ্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত সংসদ সদস্য নুরুল ইসলাম ওমর। নির্বাচনে আওয়ামী লীগ, জাতীয় পার্টি, জাসদসহ স্বতন্ত্র প্রার্থীরা প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। তবে আ.লীগ, জাপা ও স্বতন্ত্র প্রার্থীর মধ্যে ত্রিমুখী লড়াই হতে পারে বলে ভোটাররা মনে করছেন।

জানা গেছে, একাদশ সংসদ নির্বাচনে বগুড়া সদর আসন থেকে নির্বাচিত হন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তিনি শপথ গ্রহণ না করায় ২০১৯ সালে দ্বিতীয় দফায় এখানে উপনির্বাচনে নির্বাচিত হন একই দলের জিএম সিরাজ। সম্প্রতি তিনি পদত্যাগ করায় আবারও শূন্য হয়েছে এই আসনটি। এরই মধ্যে নির্বাচন কমিশন ঘোষিত তফসিল অনুযায়ী ১ ফেব্রুয়ারি ভোটগ্রহণ। এতে একই সংসদীয় আসনে এক মেয়াদের তিনবার ভোট দেওয়ার বিরল সুযোগ পেতে যাচ্ছেন বগুড়া সদর আসনের ৪ লক্ষাধিক ভোটার। একাধিকবার ভোটদানের সুযোগ পেলেও উপনির্বাচন নিয়ে আগ্রহ কম সাধারণ ভোটারদের।

বিভিন্ন এলাকার ভোটাররা জানান, তারা শুধু ভোট দেন উন্নয়ন চোখে পড়ে না। বার বার ভোট দিয়ে কি লাভ এমন প্রশ্ন ছুড়ে ভোটাররা আরো বলেন, সদর আসনে আমরা দীর্ঘদিন ধরে নিজেদের কাউকে জনপ্রতিনিধি হিসেবে পাই না। অন্য জেলার বা অন্য উপজেলার মানুষ এখানে নির্বাচিত হন, তাই নিজেদের বড়ই অভাগা মনে হয়, তাই স্থানীয়ভাবে বসবাসকারী কেউ নির্বাচিত হলে কাঙ্ক্ষিত উন্নয়ন হতো বলে তারা মনে করেন।

এদিকে একই মেয়াদে তৃতীয়বার এই আসনে প্রার্থী হয়েছেন জাতীয় পার্টি মনোনীত প্রার্থী জেলা জাপার সদস্য সচিব নুরুল ইসলাম ওমর। তিনি ২০১৪ সালের নির্বাচনে বিনাপ্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হয়ে বিরোধিদলীয় হুইপ ও পরে চিফ হুইপের দায়িত্ব পালন করেন। ২০১৮ সালের ৩০ ডিসেম্বর নির্বাচনে বগুড়া-৬ (সদর) আসনে তিনি প্রার্থী হন মহাজোট থেকে। ওই নির্বাচনে আ.লীগের কোন প্রার্থী ছিল না। নির্বাচনে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর দুই লাখ পাঁচ হাজার ৯৮৭ ভোট পেয়ে বিজয়ী হয়েছেন। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন জাতীয় পার্টির নূরুল ইসলাম ওমর, তিনি পান ৩৮ হাজার ৯৬১ ভোট। মির্জা ফখরুল শপথ না নেওয়ায় ২০১৯ সালের ২৪ জুন শূন্য আসনে উপনির্বাচন হয়, সেখানে বিএনপি প্রার্থী জিএম সিরাজ নির্বাচিত হন, বিএনপির ধানের শীষ নিয়ে তিনি ৮৯,৭৪২ ভোট পান। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী আওয়ামী লীগ প্রার্থী এস এম টি জামান নিকেতা পান ৩২,২৯৭ ভোট। অপরদিকে জাতীয় পার্টির প্রার্থী নুরুল ইসলাম ওমর পেয়েছিলেন ৭,২৭১ ভোট।

সম্প্রতি সংসদ থেকে বিএনপির সংসদ সদস্যরা পদত্যাগ করায় আবারও হচ্ছে উপনির্বাচন। এবার বিএনপি ভোটে না এলেও আওয়ামী লীগ জাসদসহ স্বতন্ত্র মিলে ১০ প্রার্থীর সঙ্গে প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জাপা প্রার্থী নুরুল ইসলাম ওমর। তিনি বলেন, এবার তিনিই বিজয়ী হবেন, এই আসনে তিনি সংসদ সদস্য হিসেবে দায়িত্ব পালন কালে উন্নয়ন কাজ করেছেন। শিক্ষা, সামাজিক সাংস্কৃতিক, ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানসহ রাস্তাঘাটের উন্নয়নে কাজ করেছেন। বগুড়ার বিভিন্ন সমস্যা তুলে ধরেছেন সংসদে। এ কারণে তাকেই এবার নির্বাচিত করবে সদরবাসী।

এদিকে ভোটের মাঠে আলোচনায় স্বতন্ত্র প্রার্থী পৌর আ.লীগের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক আবদুল মান্নান আকন্দ। তিনি মাঠ চষে বেড়াচ্ছেন ট্রাক প্রতীক নিয়ে। তিনি জানান, জনগণের ব্যাপক সাড়া পাচ্ছি, উন্নয়ন প্রত্যাশী ভোটারগণ তার ট্রাক প্রতীকে ভোট দিয়ে বিজয়ী করবেন বলে প্রত্যাশা ব্যক্ত করেন তিনি।

জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক রাগেবুল আহসান রিপু নৌকা প্রতীক নিয়ে মাঠ চষে বেড়াচ্ছেন, দিচ্ছেন উন্নয়নের প্রতিশ্রুতি। তিনি জানান, সদর উপজেলাবাসীর সার্বিক উন্নয়নে নৌকায় ভোট দেবেন ভোটারগণ- এই আশা করি। শহরের যানজট নিরসন, পূর্ণাঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপনসহ বিমানবন্দর চালু এবং বগুড়ার উন্নয়ন এগিয়ে নিতে ভোটাররা তার ওপর আস্থা রাখবেন বলে তিনি আশা করেন।

বগুড়া জেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি মজিবর রহমান মজনু বলেন, বগুড়া সদর একটি গুরুত্বপূর্ন আসন, এখানে দলীয় প্রার্থীজয়ী হলে দল শক্তিশালী হবে, উন্নয়ন এগিয়ে যাবে। বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনার উন্নয়নের সুফল জনগনের দ্বারপ্রান্তে পৌঁছে দিতে নৌকার বিকল্প নাই।

এদিকে সুষ্ঠু পরিবেশে শান্তিপূর্ণ নির্বাচন অনুষ্ঠানে সব পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে বলে জানিয়ে জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা মো. মাহমুদ হাসান বলেন, আগামী ১ ফেব্রুয়ারি একটি গ্রহণযোগ্য উপনির্বাচন উপহার দিতে নির্বাচন কমিশন বদ্ধপরিকর। সে ব্যাপারে প্রয়োজনীয় সব পদক্ষেপ নেওয়া হবে। বগুড়া-৬ (সদর) আসনে ভোটার রয়েছেন ৪ লাখ ১০ হাজার ৭৪৩ জন।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close