প্রতিদিনের সংবাদ ডেস্ক

  ০৭ অক্টোবর, ২০২২

আজ থেকে ইলিশে নিষেধাজ্ঞা

ইলিশের উৎপাদন বাড়াতে ৭ থেকে ২৮ অক্টোবর পর্যন্ত দেশের সমুদ্রসীমায় ইলিশ আহরণ ও বিপণন নিষিদ্ধ করেছে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়। এই ২২ দিন সাগর মোহনাসহ, রাজবাড়ীর ও শরীয়তপুরের পদ্মা, চাঁদপুরের মেঘনা এবং মেঘনা-ষাটনল আলেকজান্ডার, ভোলা, শাহবাজপুর, তেঁতুলিয়া, বাউফল, হিজলা, মেহেন্দিগঞ্জ, পটুয়াখালীর আন্ধারমানিক, সুন্দরবনসংলগ্ন বলেশ্বর ও পানগুছি নদীর মোহনায় ইলিশের অভয়াশ্রমগুলোকেও এ নিষেধাজ্ঞার আওতায় আনা হয়েছে। প্রতি বছর আশ্বিন মাসের এ সময় গভীর সাগর থেকে ঝাঁকে ঝাঁকে মা ইলিশ উপকূলের দিকে এসে ডিম ছাড়ে। ইলিশের ডিম থেকে জাটকা, পরে জাটকা বড় ইলিশে পরিণত হয়।

বাগেরহাটের শরণখোলা থেকে মাসুম বিল্লাহ, বরগুনার পাথরঘাটা থেকে ইমরান হোসাইন, চাঁদপুর থেকে আবু সাঈদ কাউসার, রাজবাড়ী থেকে কামাল হোসেন, দিনাজপুরে হিলি থেকে মো. আবদুল আজিজ এই রিপোর্ট পাঠিয়েছেন।

পাথরঘাটা (বরগুনা) : জেলেরা ট্রলার নিয়ে উপকূলে ফিরেছেন। মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রের ঘাটে নোঙ্গর করে আছে জেলেদের কয়েক শতাধিক ট্রলার।

পাথরঘাটা উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তার কার্যালয় সূত্র জানায়, প্রজনন মৌসুমে ৬০ শতাংশের বেশি মা ইলিশ ডিম ছাড়ে। উপকূলীয় পাথরঘাটায় প্রায় ২২ হাজার জেলে রয়েছেন, এর মধ্য ১১ হাজার ৪১১ জন নিবন্ধিত জেলে। নিষেধাজ্ঞা চলাকালে ক্ষতিপূরণ হিসেবে নিবন্ধিত জেলেদের ২০ কেজি করে চাল দেওয়া হবে।

বরগুনা জেলা মৎস্যজীবী ট্রলার মালিক সমিতির সভাপতি গোলাম মোস্তফা চৌধুরী বলেন, বাংলাদেশের জেলেরা আইন মেনে মাছ শিকার বন্ধ রাখলেও ভারতীয় জেলেরা বাংলাদেশ জলসীমায় এসে মাছ শিকার করে নিয়ে যাচ্ছে। এগুলো বন্ধ করতে সরকারের কাছে দাবি জানান তিনি।

পাথরঘাটা উপজেলা সিনিয়র মৎস্য কর্মকর্তা জয়ুন্ত কুমার (অপু) বলেন, নিষেধাজ্ঞার আইন বাস্তবায়নে মৎস অধিদপ্তর, নৌবাহিনী, কোস্টগার্ড, জেলা ও উপজেলা প্রশাসন, পুলিশ এবং স্থানীয় মৎস্য দপ্তরের উদ্যোগে ব্যাপকভাবে অভিযান পরিচালনা করা হবে। নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের নেতৃত্বে চলবে ভ্রাম্যমাণ আদালত।

শরণখোলা (বাগেরহাট) : শরণখোলা উপজেলা ফিশিং ট্রলার মালিক সমিতির সভাপতি মো. আবুল হোসেন হাওলাদার জানান, সরকারি নির্দেশনা আমরা সবসময় মেনে চলি। বাংলাদেশে নিষেধাজ্ঞাকালীন ভারতের জলসীমায় মাছ ধরা বন্ধ না করায় ভারতীয় জেলেরা বাংলাদেশের জলসীমায় প্রবেশ করে অবাধে মাছ ধরে নিয়ে যায়। এজন্য কোস্টগার্ড ও নৌবাহিনীর নিয়মিত টহল জোরদার করার দাবি জানান তিনি।

উপজেলা সিনিয়র মৎস্য কর্মকর্তা বিনয় কুমার রায় বলেন, জেলেদের সচেতনতা বাড়াতে এলাকায় মাইকিং ও লিফলেট বিতরণ করা হয়েছে। কোস্টগার্ড মোংলা পশ্চিম জোনের স্টাফ অফিসার অপারেশন লেফটেন্যান্ট কমান্ডার মহিউদ্দিন জামান জানান, বাংলাদেশের সমুদ্রসীমায় কোস্টগার্ডের টহল চলমান রয়েছে। তবে, ভারতীয় জেলেরা নিষেধাজ্ঞাকালীন বাংলাদেশ জলসীমায় প্রবেশ করতে না পারে সেজন্য নজরদারি বাড়ানো হয়েছে।

চাঁদপুর : চাঁদপুর মৎস্য বণিক সমিতির সভাপতি মানিক জমাদার ও সাধারণ সম্পাদক শব-এ-বরাত জানান, মাছঘাটে আড়তে আমাদের বাপ-দাদার ব্যবসা। তাদের কাছে শুনেছি, ওই সময় এই আড়তে ৩ থেকে ৪ হাজার মণ ইলিশ প্রতিদিন বেচাকেনা হতো। দেশের বিভিন্ন জায়গায়, এমনকি বিদেশেও যেত চাঁদপুরের ইলিশ। এখন দৈনিক ৪০ থেকে ৫০ মণ মাছও আড়তে আসে না। কিছুদিন ধরে চাঁদপুর বড়স্টেশন মাছঘাটের আড়তে ইলিশ আসতে শুরু করেছে। এরই মধ্যে নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হলো। এতে বরাবরের মতো সরকারের এ সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানাই।

তারা আরো বলেন, চাঁদপুরের ইলিশ একটি ব্র্যান্ড। এর স্বাদ ও গন্ধের জন্য চাহিদা বেশি। তাই দাম বেশি পাওয়ার আশায় সাগর মোহনার ইলিশ চাঁদপুরের মাছঘাটের আড়তে আসে। চাঁদপুর মাছঘাটের ইলিশ বিক্রেতা ও মৎস্য বণিক সমিতির সদস্য রাসেল জানান, দেশের বিভিন্ন বাজারে, পাড়া মহল্লায় চাঁদপুরের ইলিশ বলে সাধারণত সাগরের ইলিশ বিক্রি করা হয়। একই কথা জানালেন চাঁদপুর মাছঘাটে মাছ কিনতে আসা তপন, ইমরান, লিটন ও ইমন।

দৈনিক চাঁদপুর কণ্ঠ পত্রিকার প্রবীণ সাংবাদিক কাজী শাহাদাত বলেন, চাঁদপুর ইলিশের আড়তে থাকা ইলিশ মাছের ৯০ শতাংশ চট্টগ্রাম বা উপকূলীয় এলাকার।

রাজবাড়ী : রাজবাড়ীতে ২০ হাজার জেলে রয়েছে। জেলেদের কাঁধে ঋণের বোঝা। রাজবাড়ী জেলা মৎস্য অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়, পুরাতন তালিকা অনুযায়ী রাজবাড়ীতে ১০ হাজার ২৯০ জন নিবন্ধিত জেলে আছেন। নতুন তালিকা হলে এই সংখ্যা দ্বিগুণ হবে বলে জেলেরা জানিয়েছেন। নিবন্ধিত জেলেরা বলছেন, সরকারের দেওয়া চাল পর্যাপ্ত নয়। তাদের সবচেয়ে বড় বিপদ ঋণের কিস্তির যন্ত্রণা। রাজবাড়ীর পদ্মা পারের জেলেরা নিষেধাজ্ঞার সময়ে তাদের খাদ্য সহায়তা বাড়িয়ে দিয়ে ঋণের কিস্তি বন্ধ রাখার দাবি জানান।

রাজবাড়ী সদর উপজেলা বরাট ইউনিয়নের পদ্মা পারের জেলে আনিচ কাজী, মজিবার, হারুন শেখ, রুবেল শিকদার, নাজিরুদ্দিন সরদার, সমেস বাবু বলেন, গত দেড় দুই মাস নদীতে তেমন মাছ মেলেনি। কিস্তি ও সুদের উপর দিয়ে সংসার চলছে। এ নিষেধাজ্ঞার সময়ে বিকল্প কর্মসংস্থান না থাকায় চরম বিপদে পড়তে হবে। প্রকৃত জেলেরা যাতে খাদ্য সহায়তা পায়, তা নিশ্চিত করার আহ্বান জানান।

রাজবাড়ী জেলা মৎস কর্মকর্তা মো. মশিউর রহমান বলেন, গত বছর ৪ হাজার ৭০০ জেলেকে ৯৪ টন খাদ্য সহায়তা দেওয়া হয়েছে। এ বছর তালিকা চূড়ান্ত না হলেও ৬ হাজার জেলের জন্য খাদ্য সহায়তার চাহিদা পাঠানো হয়েছে। বিকল্প কর্মসংস্থান করার লক্ষ্যে রাজবাড়ীর তিন উপজেলা গোয়ালন্দ, কালুখালী ও পাংশায় ২০২২-২৩ অর্থবছরে ৩২৩ জেলেকে বকনা বাছুর (গরু) দেওয়ার কার্যক্রম শুরু হয়েছে।

হিলি (দিনাজপুর) : দিনাজপুরের হিলিতে মা ইলিশ সংরক্ষণ ও বিক্রি বন্ধে উপজেলা মৎস্য অফিসের উদ্যোগে প্রেস বিফ্রিং হয়েছে। বৃহস্পতিবার বেলা ১১টায় উপজেলা পরিষদ সভাকক্ষে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ নূর-এ আলমের সভাপতিত্বে এতে প্রধান অতিথি ছিলেন উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান হারুন-উর রশিদ।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close