নিজস্ব প্রতিবেদক

  ২৯ সেপ্টেম্বর, ২০২২

বুড়িগঙ্গার আদি চ্যানেলে দ্রুত এগোচ্ছে খনন

রাজধানীর প্রাণখ্যাত বুড়িগঙ্গা নদীর আদি চ্যানেল উদ্ধারে দুই পাড়ে চলছে অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ। শুরু হয়েছে খননকাজও। সাত কিলোমিটার দীর্ঘ এই চ্যানেলটি উদ্ধার হলে বুড়িগঙ্গা থেকে তুরাগ নদীতে যাওয়ার পথ সুগম হবে। পণ্য পরিবহন যেমন সহজ হবে, তেমনি কমবে ব্যয়। নগরীর জলাবদ্ধতাও কমবে বলে আশা করছেন সংশ্লিষ্টরা।

পুরান ঢাকার মুসলিমবাগ, শহীদনগর, হাজারীবাগ, কালুনগর হয়ে শিকদার মেডিকেলের পেছন দিয়ে রায়েরবাগ পর্যন্ত ছিল নৌপথ। আশির দশকেও বুড়িগঙ্গা নদীর এই আদি চ্যানেল দিয়ে নৌযান চলাচল করত। তবে বেড়িবাঁধ দেওয়ার পর আস্তে আস্তে নদী হয়ে যায় খাল। এই আদি চ্যানেলের প্রায় সাড়ে ৭ কিলোমিটার জায়গার দু’পাশ দখল করে গড়ে ওঠে নানা স্থাপনা যেমন- বহুতল ভবন, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান, বাস-ট্রাক টেম্পোস্ট্যান্ড ও ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান। এসব স্থাপনা উচ্ছেদ করে মৃতপ্রায় এই চ্যানেল পুনরুজ্জীবিত করার কাজ করছে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন। তিন ধাপে এই চ্যানেলটি উদ্ধারের কার্যক্রম বাস্তবায়ন হবে বলে জানান মেয়র শেখ ফজলে নূর তাপস।

উচ্ছেদের পর আবার যাতে বেদখল না হয়, সে জন্য খালের দুই পাড়ে দৃষ্টিনন্দন পরিবেশ তৈরি করার পরিকল্পনা আছে মেয়রের। জুন মাসে বুড়িগঙ্গার আদি চ্যানেল উদ্ধারের কাজ শুরু হয়। স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায়মন্ত্রী তাজুল ইসলাম এবং মেয়র তাপসের উপস্থিতিতে খনন কার্যক্রম শুরু হয়।

লোহার ব্রিজে দাঁড়িয়ে নতুনরূপ ফিরে পাওয়া খালটি দেখছিলেন কামরাঙ্গীরচর তিন নম্বর গলির বাসিন্দা মো. শাহীন। তিনি বলেন, ‘আমি যেখানে দাঁড়িয়ে সেখানে একসময় ময়লার গন্ধে কেউ দাঁড়াত না। ময়লার ওপর দিয়ে হেঁটেই লালবাগ থেকে কামরাঙ্গীরচর যাওয়া যেত। এ প্রকল্পের কাজ শুরু হওয়ায় আমরা খুশি। সেকশন থেকে সোয়ারীঘাট এবং মাদবর বাজার এলাকার কাজটুকু করলে এখানে বড় লঞ্চও চালানো যাবে।

দক্ষিণ সিটির ২৪নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর মোকাদ্দেস হোসেন জাহিদ বলেন, ‘আমরা ছোটবেলায় এ খালে নৌকা চালিয়েছি। মূলত ১৯৯১ সাল থেকে এখানে দখল ও দূষণ শুরু হয়। আমরা বালুরঘাট থেকে ময়লা অপসারণ শুরু করেছি। চার-পাঁচ ফুট ময়লা অপসারণ করার পর আমরা পানির দেখা পাই। এখন ১৩ ফুট গভীরতা রয়েছে।’

স্থানীয়রা জানিয়েছেন, ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের ৫৫, ৫৬ ও ৫৭নং ওয়ার্ড কামরাঙ্গীরচর এলাকা মূলত বুড়িগঙ্গার বুকে জেগে ওঠা একটি চর। এই চর (শহীদনগর থেকে হাজারীবাগ) আর বেড়িবাঁধের মাঝের জায়গাটিই বুড়িগঙ্গার আদি চ্যানেল। এক সময় যা ছিল জলাশয়, তা এখন ময়লা-আবর্জনার পাহাড়। দখলদারিত্বের কারণেও কমেছে এর প্রশস্ততা।

তারা আরো জানিয়েছেন, বুড়িগঙ্গার আদি চ্যানেলে নব্বইয়ের দশকে পানির প্রবাহ ছিল। মানুষ তখন এ পথে নৌকায় করে টঙ্গীর বিশ্ব ইজতেমায় যেত। বেড়িবাঁধ হওয়ার পর বুড়িগঙ্গার আদি চ্যানেল দখল হওয়া শুরু হয়।

বুধবার (২৮ সেপ্টেম্বর) দুপুরে সিটি করপোরেশনের কর্মকর্তা এবং কাউন্সিলরদের নিয়ে পরিদর্শনে যান ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মেয়র শেখ ফজলে নূর তাপস। মেয়র চলমান খননকাজের বিভিন্ন অংশ ঘুরে দেখেন। ভালোভাবে কাজ করতে সংশ্লিষ্টদের নির্দেশনা দেন। এ সময় করপোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ফরিদ আহাম্মদ, সচিব আকরামুজ্জামান, প্রধান সম্পত্তি কর্মকর্তা রাসেল সাবরিন, স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীরা উপস্থিত ছিলেন।

দক্ষিণ সিটির তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী খাইরুল বাকের বলেন, ‘আমরা দুটি প্যাকেজের আওতায় সেকশন থেকে লালবাগ বেড়িবাঁধ অংশে কাজ করছি। আমাদের এখন দুটি ফ্লোটিং এক্সকেভেটর কাজ করছে। এ চ্যানেলের যাবতীয় আবর্জনা পরিষ্কার ও খনন করে ঢাকার দক্ষিণ অংশে সুন্দর, দৃষ্টিনন্দন ও নান্দনিক পরিবেশ সৃষ্টি করা হবে। এতে লালবাগ, হাজারীবাগ, ধানমন্ডি ও কামরাঙ্গীরচরের জলাবদ্ধতা দূর হবে। ওইসব এলাকা থেকে নির্গত পানি ইটিপি ও সিইটিপি দ্বারা পরিশোধিত আকারে নদীতে নিষ্কাশিত করার ব্যবস্থা থাকবে। চ্যানেলের দুই প্রান্তে নতুন রাস্তা, সাইকেল লেন, বৃক্ষরোপণ, দৃষ্টিনন্দন সেতু নির্মাণ করা হবে। ঢাকাবাসীর জন্য একটি নতুন বিনোদন কেন্দ্র হবে এটি।’

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close