কালীগঞ্জ (গাজীপুর) প্রতিনিধি

  ০৮ জানুয়ারি, ২০২২

কালীগঞ্জের কুঞ্জ মেলা শত বছরের ঐতিহ্য

শত বছরের ঐতিহ্য ধরে রেখেছে চুয়ারিয়াখোলার সুপ্রাচীন কুঞ্জ মেলা। গতকাল শুক্রবার মেলা শুরু হয়েছে, চলবে আগামীকাল রবিবার পর্যন্ত। তিন দিনের এই মেলায় দূর-দূরান্ত থেকে মানুষ আসছে। চুয়ারিয়াখোলা গ্রামটি গাজীপুরের কালীগঞ্জ উপজেলার তুমলিয়া ইউনিয়নে। পৌষ মাসের শেষের দিকে বসে কুঞ্জ মেলা। তখনো গ্রামীণ সমাজে থাকত নবান্নের আমেজ।

জানা গেছে, চুয়ারিয়াখোলার শ্রী শ্রী কানাইলাল মন্দির কমিটি কুঞ্জ মেলার আয়োজক। এই মেলার প্রথম দিন খাবার সামগ্রী, দ্বিতীয় দিন দেশি-বিদেশি মাছ এবং তৃতীয় দিন একসঙ্গে খাবার সামগ্রী ও মাছের পসরা নিয়ে বসে দোকানিরা। কুঞ্জ বনে রাধা-কৃষ্ণের প্রেমলীলা স্মরণে সনাতন ধর্মের লোকজন এই মেলার প্রচলন করে। মেলার শুরু টানা ১৫ দিন নিরামিষ খায় এবং মেলার শেষ দিন আমিষ খাদ্য গ্রহণ ও পূজা-অর্চনার মধ্য দিয়ে শেষ হয় তাদের আনুষ্ঠানিকতা। মেলা উপলক্ষে ঝি জামাতা ও আত্মীয়স্বজনকে আমন্ত্রণ জানানো হয়। বাড়িতে বাড়িতে বানানো হয় খই, মুড়কি, নারকেলের ও চালের নাড়ু। মেলা থেকে দই কিনে এনে মুড়কি দিয়ে খাওয়ার রেওয়াজটিও ধরে রেখেছেন এলাকাবাসী।

সরেজমিনে গতকাল শুক্রবার সকালে মেলা প্রাঙ্গণে গিয়ে দেখা গেছে, খাদ্য পণ্যের পসরা নিয়ে দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে ও স্থানীয় বিভিন্ন এলাকা থেকে এসেছেন শতাধিক ব্যবসায়ী। মিষ্টান্ন, খেলনা, চুড়ি, ফিতা, আলতা থেকে ঘরগৃহস্থালির বিচিত্র জিনিস। মেলায় নিমকি-মুড়কি, ফুচকাণ্ডচটপটি, ঝালমুড়ি-চানাচুর, মিষ্টি ও জিলাপিই বিক্রি করা হচ্ছে ৫০টিরও বেশি দোকানে। বিক্রিও হচ্ছে দেদারছে। সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত চলছে নাগরদোলা। আর আছে হাতি, ঘোড়া, নৌকা ও নিশান টার্গেট (স্যুট)।

ঢাকার ডেমরা থেকে পঞ্চাশোর্ধ সাহেরা বেগম কুঞ্জ মেলায় চুড়ি নিয়ে এসেছেন। তিনি জানান, এবার তিনি প্রথম এই কুঞ্জ মেলায় এসেছেন। বিভিন্ন জনের কাছে এই কুঞ্জ মেলার কথা শুনে তার এখানে আসা। অনেক লোকজন এবং বেচাকেনাও ভালো। মেলায় মহিলা ও শিশু ক্রেতাই বেশি বলে জানান তিনি।

মেলায় নরসিংদী থেকে খেলনার দোকান নিয়ে এসেছেন পঞ্চাশোর্ধ্ব আফজাল উদ্দিন। তিনি বললেন, আমি বেশ কয়েক বছর ধরেই এখানে আসি। পুরোনো ঐতিহ্য ধরে রেখেছে কুঞ্জ মেলাটি। বেচাকেনা যাই হোক একসঙ্গে এত দর্শনার্থী দেখে ভালোই লাগে। একই কথা বলেন দক্ষিণ চুয়ারিয়াখোলা গ্রামের চটপটি বিক্রেতা সুজন মিয়া। নরসিংদীর মনোহরদী থেকে নাগরদোলা নিয়ে আসেন হানিফা ও কৃষ্ণদাস। তারা জানান, প্রতি জন ২০ টাকা করে টিকিট নিয়ে তারপর নাগর দোলায় চড়াতে হয়। মেলা নিয়ে তারা সন্তোষ প্রকাশ করেন।

উপজেলার জাঙ্গালীয়ার রয়েন থেকে শুভাস চন্দ্র দাস ও মোক্তারপুরের বাঘুন থেকে পরিমল চন্দ্র পাল মাটির তৈরি তৈজসপত্র নিয়ে এসেছেন। তাদের দোকানে পিঠা ও রুটি তৈরির পাতিল কিনতে ভিড় করছেন তুমলিয়া ইউনিয়নের দড়িপাড়া গ্রামের গৃহবধূ শিখা সরকার, লিপি সরকার ও দিনা সরকার। পঞ্চাশোর্ধ্ব অবলা রানী দাস জানান, শীতের সময় গ্রামে পিঠা খাওয়ার ধুম পড়ে যায়। তাই পিঠা তৈরির পাত্রের জন্য তিনি এসেছেন।

মেলায় বাঁশ-বেতের তৈরি নানা রকম জিনিস নিয়ে আকবর আলী এসেছেন জামালপুর জেলা থেকে। তার সঙ্গে আসেন একই এলাকার ধীরেন্দ্র। আগে তাদের বাপ-চাচারা আসতেন বলে জানান।

শ্রী শ্রী কানাইলাল মন্দির ও মেলার আয়োজক কমিটির সভাপতি মুকুল চন্দ্র দে বলেন, শত বছর পূর্ণ হলো এই কুঞ্জ মেলার। প্রতিদিন ও রাতে পালাগান চলে। শেষের দিন হয় কীর্তন। মেলা থেকে যে আয় হয় তা মন্দিরের কল্যাণ ট্রাস্টে জমা হয়।

তিনি আরো জানান, মেলা উপলক্ষে কোনো ঘোষণা দেওয়া হয় না। আয়োজক কমিটি প্রায় এক মাস আগে থেকে প্রস্তুতি নিতে থাকে। নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকেন স্বেচ্ছাসেবকরা।

তুমলিয়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো. আবুবকর বাক্কু মিয়া বলেন, গ্রামবাংলার ঐতিহ্য ধরে রেখেছে শ্রী শ্রী কানাইলাল মন্দির কমিটির সদস্যরা। প্রতি বছর তারা স্বেচ্ছাশ্রম দিয়ে এই ধারা অব্যাহত রেখেছেন।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close