নিজস্ব প্রতিবেদক

  ২৪ অক্টোবর, ২০২১

শাহজালাল বিমানবন্দর

থার্ড টার্মিনালের অগ্রগতি ২১ শতাংশ

* ডিসেম্বরে দৃশ্যমান হবে অবকাঠামো * যুক্ত হবে পাতাল ট্রেন কাজ শুরু শিগগিরই

একবার রোদ, আরেকবার বৃষ্টি। রোদে অ্যাপ্রোন পরে শ্রমিকদের পুরোদমে কাজ করতে দেখা যায়। আবার বৃষ্টি হলে দৌড়ে পাশের শেডে আশ্রয় নেন তারা। বৃষ্টি শেষে আবারও কর্দমাক্ত মাঠে কাজ শুরু করেন শ্রমিকরা। এভাবে মেঘের এ লুকোচুরির মধ্যেও পুরোদমে চলছে ঢাকার হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের থার্ড টার্মিনালের (টার্মিনাল-৩) নির্মাণকাজ। এরই মধ্যে প্রকল্পের ২১ শতাংশ কাজ শেষ হয়েছে। চলতি বছরের ডিসেম্বরে চোখে পড়বে থার্ড টার্মিনালের অবকাঠামোগত অগ্রগতি। ২০২৩ সালের জুনে শেষ হবে অত্যাধুনিক এ টার্মিনালের নির্মাণকাজ।

বাংলাদেশ বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ (বেবিচক) বলছে, ২০২৩ সালের জুনে শেষ হবে অত্যাধুনিক এ টার্মিনালের নির্মাণকাজ। তবে এত দিন যারা খিলক্ষেত থেকে শাহজালাল বিমানবন্দরে যাওয়ার পথে বামে ফাঁকা মাঠ কিংবা বিশৃঙ্খল নির্মাণকাজ দেখতেন, এ বছরের ডিসেম্বরে তাদের চোখে পড়বে থার্ড টার্মিনালের অবকাঠামোগত অগ্রগতি।

হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের পরিচালক গ্রুপ ক্যাপ্টেন তৌহিদ-উল আহসান বলেছেন, এরই মধ্যে এ প্রকল্পের ২১ শতাংশ কাজ শেষ হয়েছে। দিন-রাত কাজ চলছে। করোনাকালেও স্বাস্থ্যবিধি মেনে নির্মাণকাজ চলেছে। আশা করছি নির্ধারিত সময়ের আগে কাজ শেষ হবে। এ বিমানবন্দর বিশ্বের দৃষ্টিনন্দন ও অত্যাধুনিক বিমানবন্দরগুলোর মধ্যে একটি হবে। যাত্রীদের দুর্ভোগ অনেকাংশে কমে যাবে। বাংলাদেশের অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে এ বিমানবন্দর।

২১ হাজার ৩৯৯ কোটি টাকার এ প্রকল্পের কাজ শেষ হলে ব্যবসা-বাণিজ্যে নতুন সম্ভাবনার দুয়ার খুলবে বলে মনে করছেন দেশের শীর্ষস্থানীয় ব্যবসায়ীরা। তবে টার্মিনালটি চালুর পাশাপাশি যাত্রী ও বাংলাদেশের জনগণের চাহিদা যাতে পূরণ হয় সেজন্য এখন থেকেই কার্যকর পরিকল্পনা নেওয়ার কথা বলছেন তারা।

ঢাকা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির (ডিসিসিআই) সভাপতি রিজওয়ান রাহমান বলেন, এ প্রকল্পের বাস্তবায়ন দ্রুততম সময়ের মধ্যে করতে হবে। সময় যত বেশি নেওয়া হবে খরচও তত বেড়ে যাবে। বাড়তি খরচ যাত্রীদেরই বহন করতে হয়। নতুন এ টার্মিনালে আরও অনেক ইমিগ্রেশন কাউন্টার তৈরি হবে। আমাদের বর্তমান টার্মিনালেও (১ ও ২) কিন্তু অনেক কাউন্টার আছে, কিন্তু অধিকাংশ সময় সেখানে ইমিগ্রেশন অফিসার থাকেন না। ফলে ইমিগ্রেশন করতে যাত্রীদের দীর্ঘ সময় দাঁড়িয়ে থাকতে হয়। বর্তমানে আমাদের বিমানবন্দরের দায়িত্বপ্রাপ্তরা সিভিল এভিয়েশনের কর্মকর্তা, তারা সরকারি কর্মকর্তাও। একজন সরকারি কর্মকর্তার সরকারের কাছে তেমন জবাবদিহিতা থাকে না। আমরা মনে করি, সিঙ্গাপুর, জাপান, যুক্তরাষ্ট্রের মতো থার্ড টার্মিনালকে যদি পাবলিক-প্রাইভেট পার্টনারশিপের মধ্যে আনা যায় তাহলে যাত্রীদের অনেক সুবিধা হবে। বাইরের প্রতিষ্ঠানকে দায়িত্ব দিলে তাদের জবাবদিহিতার মধ্যে রাখা যায়। উদাহরণস্বরূপ বলতে পারি, থাইল্যান্ডের যে প্রতিষ্ঠান বিমানবন্দর পরিচালনা করে তাদের থার্ড টার্মিনাল পরিচালনার দায়িত্ব দেন। তারা সুষ্ঠুভাবে পরিচালনা করতে না পারলে সরিয়ে দেন। এখনই এ বিষয়ে উদ্যোগ নেওয়া উচিত। আর যদি সিভিল এভিয়েশনের কর্মকর্তাদের দিয়ে বিমানবন্দর চালাতে হয়, সেক্ষেত্রে এখনই জনবল নিয়োগ দেওয়া প্রয়োজন।

যুক্ত হবে পাতাল ট্রেন, কাজ শুরু শিগগিরই : বিমানবন্দরের থার্ড টার্মিনালের সঙ্গে যুক্ত থাকবে স্বপ্নের মেট্রোরেল। তৈরি হবে পৃথক একটি স্টেশনও। এর মাধ্যমে বাংলাদেশে আসা যাত্রীরা বিমানবন্দর থেকে বের না হয়ে মেট্রোরেলে করে নিজেদের গন্তব্যে যেতে পারবেন। শিগগিরই কাজ শুরু হবে এ মেট্রোরেল সংযোগের।

শাহজালাল বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষ জানায়, মেট্রোরেলের এ সংযোগ বিমানবন্দরের তৃতীয় টার্মিনাল থেকে নতুন বাজার, বাড্ডা হয়ে মোট ৩১ কিলোমিটার ভ্রমণ করে কমলাপুর রেলস্টেশনে পৌঁছবে। এটি ম্যাস র?্যাপিড ট্রানজিট ডেভেলপমেন্ট প্রজেক্ট বা লাইন-১ নামে পরিচিত হবে। অর্থাৎ একজন যাত্রী বিমানবন্দরের থার্ড টার্মিনাল থেকে খিলক্ষেত, নরদা, নতুনবাজার, উত্তর বাড্ডা, বাড্ডা, হাতিরঝিল, রামপুরা, মালিবাগ, রাজারবাগ হয়ে সরাসরি কমলাপুর যেতে পারবেন।

প্রকল্প সূত্রে জানা গেছে, একজন প্রবাসীকে বিমানবন্দরে নেমে যানবাহনের জন্য আর ঘণ্টার পর ঘণ্টা দাঁড়িয়ে থাকতে হবে না। বিমানবন্দরের যেকোনো টার্মিনালে নেমে থার্ড টার্মিনালে এসে তিনি ঘণ্টায় ৯০ কিলোমিটার বেগে পরিচালিত মেট্রোরেলে মাত্র ২৪ মিনিট ৩০ সেকেন্ডে কমলাপুর পৌঁছাবেন। যাত্রীরা আড়াই মিনিট পরপর ট্রেন পাবেন। প্রতিটি ট্রেনে থাকবে আটটি করে কোচ। যাত্রী ধারণক্ষমতা হবে তিন হাজার আটজন। কোচগুলোতে প্রতিদিন প্রায় আট লাখ যাত্রী যাতায়াত করতে পারবেন। বিমানবন্দরের এ রুট হবে পাতাল।

বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষের (বেবিচক) চেয়ারম্যান এয়ার ভাইস মার্শাল এম মফিদুর রহমান বলেন, আমরা চেষ্টা করছি নির্ধারিত সময়ের আগেই কাজ শেষ করার। এ কারণে কাজটি আমি নিজেই মনিটর করছি। বর্তমানে কাজের যে অগ্রগতি আশা করছি ডিসেম্বরে টার্মিনালটির অবকাঠামো দৃশ্যমান হবে। নতুন এ টার্মিনাল হলে উন্নত অনেক দেশের এয়ারলাইন্স বাংলাদেশের সঙ্গে সংযোগ স্থাপন করবে, বাড়বে এভিয়েশন খাতের পরিধি, লাভবান হবে সরকার।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close