গাজীপুর প্রতিনিধি

  ১৩ ডিসেম্বর, ২০১৯

গাজীপুর সিটিতে ডায়রিয়ায় ৫ জনের মৃত্যু

আক্রান্ত ৩ শতাধিক

গাজীপুর সিটি করপোরেশন এলাকায় ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হয়ে গত পাঁচ দিনে শিশুসহ পাঁচজনের মৃত্যু হয়েছে। আক্রান্ত হয়েছেন তিন শতাধিক। নিহতরা হলেন কাজীবাড়ি এলাকার মো. মোস্তÍফার বাড়ির ভাড়াটিয়া মোজাম্মেল হোসেনের স্ত্রী কামরুন্নাহার (২০), একই এলাকার আবুলের বাড়ির ভাড়াটিয়া আবদুল জাব্বার (৭০), পূর্বচান্দনা এলাকার আলী আকবরের স্ত্রী সুমা (৩০), বাতেনের বাড়ির ভাড়াটিয়া মঞ্জুর মিয়ার ছেলে নাহিন (৪ মাস) ও রুহুল আমিনের বাড়ির ভাড়াটিয়া ছালাম (৫৫)।

ঢাকা রোগ নিয়ন্ত্রণ অধিদফতরের (আইইডিসিআর) ডা. দেবাশীষ সাহার নেতৃত্বে চিকিৎসকসহ ছয় সদস্যের একটি প্রতিনিধিদল ঘটনাস্থল গতকাল বৃহস্পতিবার পরিদর্শন করেছে। তারা পরীক্ষার-নিরীক্ষার জন্য আইসিডিডিআরবিতে পাঠাতে খাবার পানির নমুনা সংগ্রহ করেছেন। এলাকায় খাবার স্যালাইন, পানি বিশুদ্ধকরণ ট্যাবলেট, সচেতনতামূলক লিফলেট বিতরণ করা হয়েছে। স্যুয়ারেজের লাইনের সঙ্গে পানি সরবরাহের লাইন মিশে এ সমস্যার সৃষ্টি হতে পারে বলে প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে। গাজীপুরের শহীদ তাজউদ্দীন আহমদ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসক প্রণয় ভূষণ দাস জানান, গত ৮ ডিসেম্বর থেকে বৃহস্পতিবার পর্যন্ত এ হাসপাতালে ডায়রিয়ায় আক্রান্ত ৩০৬ জন রোগী ভর্তি হয়ে চিকিৎসা নেন। তাদের মধ্যে চারজনকে মহাখালীর কলেরা হাসপাতালে রেফার করা হয়। বৃহস্পতিবার বিকেল পর্যন্ত ৯৪ জন রোগী এ হাসপাতালে ভর্তি রয়েছেন। কামরুন্নাহার নামে এক রোগীর মৃত্যু হয়েছে। তিনি ডায়রিয়ার পাশাপাশি ক্যানসারে আক্রান্ত ছিলেন।

সরেজমিনে গিয়ে কাজীবাড়ি এলাকার ভাড়াটিয়া মরিয়ম জানান, কারুন্নাহারের বাড়ি ময়মনসিংহের ঈশ্বরগঞ্জ এলাকায়। তার ৮ মাস আগে বিয়ে হয়েছিল। কামরুন্নাহারের ক্যানসার রোগ ছিল না বলে দাবি করেন তিনি। কামরুন্নাহারের স্বামী আবদুল মতিন, নাতনি ইভা (৩) ও বাড়ির ভাড়াটিয়া শিরিনা আক্তারও ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হয়েছিলেন। পূর্বচান্দনা এলাকার হাছেন আলী জানান, তার শ্যালকের স্ত্রী সুমা ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হলে ১০ ডিসেম্বর ভোরে শহীদ তাজউদ্দীন আহমদ হাসপাতালে নেওয়া হয়। সেখান থেকে ঢাকার কলেরা হাসপাতালে রেফার করলে ওই হাসপাতালে নেওয়ার পথে সুমা মারা যায়। তার ছেলে আশরাফুল ইসলাম বাদলও ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হয়েছিল।

নাহিনের নানা আ. ছালাম জানান, তার মেয়ের ঘরের দুই নাতি ফাহিম ও নাহিন দুজনই ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হয়। ফাহিম ঢাকার কলেরা হাসপাতালে ভর্তি রয়েছে। নাহিন শহীদ তাজউদ্দীন আহমদ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন মৃত্যুবরণ করে।

একই এলাকার রুহুল আমিন জানান, ছালাম তার বাড়ির ভাড়াটিয়া। তিনি ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হলে শহীদ তাজউদ্দীন আহমদ হাসপাতালে ভর্তি হন। অবস্থার অবনতি হলে সেখান থেকে তাকে ঢাকায় রেফার করা হয়। সেখানে নেওয়ার পথে তার মৃত্যু হয়। আবুলের বাড়ির ভাড়াটিয়া ইতি জানান, আবদুল জাব্বার গত সোমবার রাতে ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হন। ভোর সাড়ে ৪টার দিকে তিনি মারা যান। এসব বাড়ির মালিক ও ভাড়াটিয়ারা জানান, তারা গাজীপুর সিটি করপোরেশনের পানি পান ও ব্যবহার করেন।

গাজীপুর সিটি করপোরেশনের সহকারী প্রকৌশলী (পানি) মো. নজরুল ইসলাম সাংবাদিকদের জানান, চার দিন ধরে ওই দুটি এলাকায় পানি সরবরাহ লাইন পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা হচ্ছে। বৃহস্পতিবার পর্যন্ত পানি সরবরাহ লাইনে ত্রুটি পাওয়া যায়নি। পানির মেইন লাইন থেকে সরবরাহ লাইনের পানিতে ব্লিসিং পাউডার দেওয়া হচ্ছে। পানির পাইপগুলো পরিষ্কার করা হয়েছে। তবে পানির লাইনে কোনো ত্রুটি আছে কি নাÑ তা পরীক্ষা-নিরীক্ষা অব্যাহত আছে।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close