নিজস্ব প্রতিবেদক

  ১৭ জানুয়ারি, ২০১৯

রাষ্ট্রীয় সম্পদ দখল ‘রাম রাজত্বের’ অবসান ঘটাবেন গণপূর্তমন্ত্রী

জোর-জুলুম খাটিয়ে বা প্রতারণার আশ্রয়ে রাষ্ট্রীয় সম্পদ দখল বন্ধ করার ঘোষণা দিয়েছেন নতুন গৃহায়ন ও গণপূর্তমন্ত্রী শ ম রেজাউল করিম। সুপ্রিম কোর্টের এই আইনজীবী বলেছেন, ঠুনকো আদালতের আদেশ নিয়ে বা দুর্বৃত্তপনা করে বা রাজনৈতিক ক্ষমতার অপব্যবহার করে দখলের মতো ‘রাম রাজত্ব’ কায়েম আর করতে দেব না। গতকাল বুধবার সকালে গৃহায়ন ও গণপূর্ত কর্তৃপক্ষের সম্মেলন কক্ষে কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সঙ্গে মতিবিনিময়ে দুর্নীতির বিরুদ্ধে ‘জিরো টলারেন্সের’ বিষয়ে সবাইকে সতর্ক করেন তিনি।

মন্ত্রী বলেন, আমি খোলামেলা বলতে পারি, অনেক প্রভাবশালী ব্যক্তিরা ভূমি দখলের সঙ্গে জড়িত। বিত্তে প্রভাব, ক্ষমতায় প্রভাব, রাজনীতিতে প্রভাব। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে ক্ষমতাশালী দলের লোকরা একটু ক্ষমতার ব্যবহারটা পরিপূর্ণ না করে অপব্যবহারের একটা প্রবণতা থাকে। সেজন্য বলব, সব কিছু থাকবে কিন্তু তার ভেতর থেকে আপনাদের (কর্মকর্তা) কাজ করতে হবে।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে দুর্নীতি ‘স্পর্শ করতে পারে না’ জানিয়ে রেজাউল করিম বলেন, সারা পৃথিবীর ১৭৩টি দেশের সরকার প্রধানের ভেতরে তিনি (প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা) সৎ, সেরা প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দ্বিতীয় অবস্থান তার।

গৃহায়ন ও গণপূর্ত বিভাগের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা কী সমস্যা মোকাবিলা করছেন, সেগুলো জেনে সমাধানের পথ করে দেওয়ার আশ্বাস দেন মন্ত্রী। তিনি বলেন, আমাকে প্রধানমন্ত্রী যে দায়িত্ব দিয়েছেন, সে দায়িত্বে আমি নিজে কোনোভাবে দুর্নীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত হব না, কোনো অস্বচ্ছতায় সম্পৃক্ত হব না আমি আশা করব, আমার মন্ত্রণালয় সম্পৃক্ত দফতর সংশ্লিষ্টদের নিষ্ঠা, দায়িত্বশীলতা এবং সততার সঙ্গে কাজ করতে হবে। এর কোনো বিকল্প এখানে চলবে না। এটা আমার পরিষ্কার মেসেজ। যারা উপস্থিত আছেন তাদের এবং যারা উপস্থিত নেই তাদের মেহেরবানী করে মেসেজটি পৌঁছাবেন। কারো কোনো অসততা, অস্বচ্ছ কার্যক্রম ও দুর্নীতি বরদাশত করা হবে না বলে হুশিয়ারি দেন গণপূর্তমন্ত্রী। আপনি চেয়ারম্যান হোন আর নিম্ন কর্মচারী এমএলএসএস হোন।

আবার দুর্নীতি না করে কাজ করবেন না তাও হবে না বলেও সতর্ক করেন তিনি। রেজাউল করিম বলেন, একটি ফাইল নিয়ে সারা দিন বসে থাকলাম, পাতা উল্টালাম। তা হবে না। কাজের গতি বাড়াতে হবে। আমাদের ডায়নামিক হতে হবে। আমলাতান্ত্রিক জটিলতা আছে, রাজনৈতিক হস্তক্ষেপ আছে, কোর্টের হস্তক্ষেপ আছে। আমি একজন আইনজীবী এসব মামলা কীভাবে নিষ্পত্তি করা যায় তা নিয়ে বসব। প্রয়োজনে সিনিয়র আইনজীবী যুক্ত করব।

তিনি বলেন, আমি চাইব, রাষ্ট্রের সম্পদ অবৈধভাবে বা ঠুনকো আদালতের আদেশ নিয়ে অথবা কোন দুর্বৃত্তপনা করে বা রাজনৈতিক ক্ষমতা অপব্যবহার করে দখল করে রাখবেন এ রকম রাম রাজত্ব কায়েম এখন আর হবে না ইনশাআল্লাহ।

নাগরিকের মৌলিক অধিকার বাসস্থানের ব্যবস্থা করা ওপর জোর দিয়ে মন্ত্রী বলেন, সেই অধিকার নিশ্চিত করা আমাদের রাষ্ট্রীয় দায়িত্ব। এটা দয়া দাক্ষিণের বিষয় নয়। ফলে আমরা যারা গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের এবং তৎসংশ্লিষ্ট দফতর ও সংস্থায় কর্মরত আছি তাদের অবশ্যই মনে রাখতে হবে যে, যে যেখান থেকে বেতন-ভাতা সুবিধা নিচ্ছি এবং দাফতরিক পদবি ব্যবহার করছি। এসব সুযোগ-সুবিধা খেটে খাওয়া মানুষের ট্যাক্সের টাকায় বেতন গ্রহণ করেন। আমি আমার অনারিয়াম গ্রহণ করি। এসব মানুষের প্রতি আমাদের দায়িত্ববোধও রয়েছে। ভোগবিলাস নয়, ক্ষমতা মানুষকে সেবা দেওয়ার জন্য শেখ হাসিনার এই বক্তব্য উদ্ধৃত করে তিনি বলেন, এজন্য আমরা যারা নতুন মন্ত্রিসভার সদস্য, সব সময় বলার চেষ্টা করি যে, আমি দায়িত্বপ্রাপ্ত হয়েছি, ক্ষমতাপ্রাপ্ত হয়েছি এটা সঠিক না। এ দায়িত্বপ্রাপ্তের জায়গায় আমাকে নিষ্ঠার সঙ্গে আন্তরিকতার সঙ্গে কাজ করতে হবে।

এই মন্ত্রণালয় নিয়ে অনেক ‘অনাকাক্সিক্ষত’ সংবাদ প্রকাশ হয় বলে বৈঠকে বলেন গণপূর্ত বিভাগের চেয়ারম্যান। এ প্রসঙ্গে মন্ত্রী বলেন, হ্যাঁ, হতে পারে মিথ্যা সংবাদ থাকে। কিন্তু এটা মথায় রাখতে হবে যে, সংবাদ যখন হয় তখন কিছু না কিছু ন্যূনতম একশতের মধ্যে এক শতাংশ ভিত্তি না থাকলে সংবাদের প্লটটি রচনা হওয়ার ?সুযোগ হবে কেন?

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close