কলকাতা প্রতিনিধি

  ১৫ মে, ২০১৮

পশ্চিমবঙ্গে ভোটের বলি প্রার্থীসহ ৮ জন, শাসক দলের তান্ডব

অশান্তির মধ্য দিয়েই শুরু হয়েছে পশ্চিমবঙ্গে ত্রিস্তরীয় পঞ্চায়েত নির্বাচন। গতকাল সোমবার সকালে ভোট শুরুর পর পরই প্রাণ গেল প্রার্থীসহ ছয়জনের। আর এর আগের দিন রাতে ভোটকে কেন্দ্র করে আগুনে দগ্ধ হয়ে মারা গেছেন আরো দুজন। বিরোধীরা অভিযোগ করেছেন শাসক দল তৃণমূল কংগ্রেস ভোট কেন্দ্রের আশপাশ এলাকায় বিরোধী দলের সমর্থকদের ওপর তান্ডব চলিয়েছে।

জানা গেছে, গতকাল সকালে রাজ্যের উত্তর ২৪ পরগনা, দক্ষিণ ২৪ পরগনা ও মুর্শিদাবাদে এসব খুনের ঘটনা ঘটে। এদের মধ্যে শাসক দল তৃণমূল, সিপিএম ও বিজেপি কর্মীর পাশাপাশি নির্দলীয় প্রার্থীও রয়েছেন।

গতকাল সকালে উত্তর ২৪ পরগনা জেলার আমডাঙ্গায় নিহত হন সিপিএম কর্মী তৌবুর গায়েন। আহত হন আরো দুই সিপিএম কর্মী। জানা যায়, দুষ্কৃতকারীদের বোমাবাজির মধ্যে পড়ে মারা যান তৌবুর।

অন্যদিকে, দক্ষিণ ২৪ পরগনা জেলার কুলতলি এলাকায় ভোট দিতে যাওয়ার সময় গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা যান তৃণমূল কর্মী আরিফ আলী গাজী। তাকে খুনের অভিযোগ উঠেছে এসইউসিআইয়ের বিরুদ্ধে।

পাশাপাশি, নদীয়ার শান্তিপুরে বুথ দখল করতে গিয়ে গণপিটুনিতে নিহত হন একজন। নিহত ব্যক্তির নাম সঞ্জিত প্রমাণিক। তিনি স্নাতকোত্তর শ্রেণির ছাত্র। সঞ্জিত তৃণমূল সমর্থক ছিলেন বলে প্রাথমিকভাবে জানা গেছে। এ ঘটনায় আহত হয়েছেন আরো দুজন। আহতদের শান্তিপুর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।

এছাড়া মুর্শিদাবাদের বেলেডাঙ্গায় গুলি ও বোমার আঘাতে খুন হন এক বিজেপি কর্মী। তার নাম তপন মন্ডল। বিজেপি নেতাদের অভিযোগ, তৃণমূলের সন্ত্রাসীরাই তপনকে হত্যা করেছে।

সবশেষ খুন হন মুর্শিদাবাদের নওদায় এক নির্দল প্রার্থী। মৃতের নাম শাহিন শেখ। জানা যায়, শাসক দল তৃণমূল বুথ দখল করার চেষ্টা করলে বাধা দিতে গেলে তাকে গুলি করা হয়। ঘটনাস্থলেই মারা যান তিনি। আহত হন আরও দুজন। যদিও তৃণমূল এই অভিযোগ অস্বীকার করেছে।

এর আগের দিন রোববার রাতে দক্ষিণ ২৪ পরগনা জেলার কাকদ্বীপে এক সিপিএম কর্মীর বাড়িতে আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয়। পুড়ে মৃত্যু হয় ওই সিপিএম কর্মী এবং তার স্ত্রীর। অভিযোগের তীর যথারীতি শাসক তৃণমূলের দিকে।

গত রোববার সন্ধ্যায় পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় অবাধ ও শান্তিপূর্ণ ত্রিস্তরীয় পঞ্চায়েত ভোটের আবেদন রাখলেও এ দিন ভোটপর্ব শুরু হতেই অশান্তি ছড়িয়ে পড়তে আরম্ভ করেছে পশ্চিমবঙ্গের জেলায় জেলায়।

রাজ্যের মোট ৬২১টি জেলা পরিষদ, ছয় হাজার ১১৯টি পঞ্চায়েত সমিতি এবং ৩১ হাজার ৭৮৯টি গ্রাম পঞ্চায়েতে চলছে ভোটদান। ত্রিস্তরীয় পঞ্চায়েতের ক্ষেত্রে মোট ৩৮ হাজার ৫২৯টি আসনের মধ্যে বিজেপি লড়ছে ৭৩ দশমিক ০৯ শতাংশ আসনে। বামেরা লড়ছে ৫৬ হাজার ০৭ শতাংশ আসনে। আর কংগ্রেস প্রার্থী দিতে পেরেছে মাত্র ২০ শতাংশের মতো আসনে। বাকি ১০০ শতাংশ আসনেই প্রার্থী দিয়েছে শাসক দল তৃণমূল।

গ্রাম পঞ্চায়েতে ৩১ হাজার ৭৮৯টি আসনের মধ্যে সব কটিতেই প্রার্থী দিয়েছে তৃণমূল। ২২ হাজার ৬৩৭টি আসনে প্রার্থী দিয়েছে বিজেপি। ১৬ হাজার ৬৯৯টি আসনে প্রার্থী দিয়েছে বামেরা, কংগ্রেস দিয়েছে পাঁচ হাজার ৪৯৭টি আসনে।

পঞ্চায়েত সমিতির ছয় হাজার ১১৯টি আসনের মধ্যে ছয় হাজার ১১৩টি আসনে প্রার্থী দিয়েছে তৃণমূল। বিজেপি প্রার্থী দিয়েছে চার হাজার ৯৫০টি আসনে, বামেরা দিয়েছে চার হাজার ৩৪১টি আসনে এবং কংগ্রেস দিয়েছে এক হাজার ৪০৮টি আসনে।

জেলা পরিষদের ৬২১টি আসনের মধ্যে সব ক’টিতেই প্রার্থী দিয়েছে তৃণমূল। বিজেপি দিয়েছে ৫৭৫টি আসনে। বামেরা দিয়েছে ৫৬২টি আসনে এবং কংগ্রেস দিয়েছে ৩৫৩টি আসনে। ভোটের নিরাপত্তায় ৪৬ হাজার রাজ্য পুলিশ, ১২ হাজার কলকাতা পুলিশ এবং ভিন রাজ্যের দেড় হাজার পুলিশকর্মী মোতায়েন করা হয়েছে।

এরই মধ্যে রাজ্যের বিভিন্ন জেলায় ভোটগ্রহণে বিক্ষিপ্ত অশান্তির খবর মিলেছে। কোচবিহার জেলার নাটাবাড়িতে বিজেপি এজেন্টকে চড় মেরেছেন রাজ্যের উত্তরবঙ্গ উন্নয়নমন্ত্রী রবীন্দ্রনাথ ঘোষ। কোচবিহারের করলায় ভোটারদের লক্ষ্য করে সাত-সকালেই বোমাবাজি চলে। কলকাতা সংলগ্ন রাজারহাটে ব্যালট বাক্সে পানি ঢেলে দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে শাসক দল তৃণমূলের বিরুদ্ধে।

রাজ্যের উত্তর ২৪ পরগনা, দক্ষিণ ২৪ পরগনা জেলার বিভিন্ন স্থানে ছাপ্পা ভোট, মারধর, বুথ জ্যাম, বিরোধী এজেন্টকে বুথ থেকে বের করে দেওয়া, ব্যালট বাক্স নিয়ে পালানোর অভিযোগ উঠেছে তৃণমূলের বিরুদ্ধে।

কোচবিহার জেলার দিনহাটা ২ নম্বর ব্লকের সাবেক ছিটমহলের ভোটারদের ভোট দিতে বাধা দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে। নারী ভোটারদের লাঠি দিয়ে মারধর করার অভিযোগ উঠেছে তৃণমূলের বিরুদ্ধে। রাজ্যের পশ্চিম মেদিনীপুর, পূর্ব মেদিনীপুরসহ একাধিক জেলায় প্রকাশ্যে শাসক দল তৃণমূলের দুষ্কৃতকারীরা আগ্নেয়াস্ত্র নিয়ে ঘুরছে বলেও অভিযাগ পাওয়া গেছে।

শাসক দলের বিরুদ্ধে বিরোধীদের মারধর, ভোটারদের ভোটদানে বাধা দেওয়ার মতো অভিযোগ ছাড়াও শাসক দলের অন্দরে গোষ্ঠী কোন্দলে বহু জায়গায় অশান্তি তৈরি হয়েছে। শাসক দলের এক গোষ্ঠী অপর গোষ্ঠীর ওপর আক্রমণ শানাচ্ছে। বিশেষ করে শাসক দলের বিক্ষুব্ধ নির্দলীয় প্রার্থীরা আক্রান্ত হচ্ছেন মুর্শিদাবাদ, বর্ধমান, হাওড়া, হুগলিসহ বিভিন্ন এলাকায়।

পাশকুড়ার গোবিন্দপুর বুথে পুলিশের সামনেই শাসক দলের দুষ্কৃতকারীরা ব্যাপক হারে ছাপ্পা ভোট দিচ্ছে বলে অভিযোগ উঠেছে। হাওড়ার উলিবেড়িয়ায় পুলিশকে লক্ষ্য করে ব্যাপক হারে বোমাবাজির অভিযোগ উঠেছে।

শাসক দলের বিরুদ্ধে বুথ জ্যাম করার অভিযোগও তুলেছেন বিরোধীরা। অন্যদিকে, উত্তর ২৪ পরগনা জেলার বনগাঁ, বাগদার একাধিক বুথে বহিরাগতরা এসে ভোট দিয়ে যাচ্ছে বলে শাসক ও বিরোধী একে অপরের বিরুদ্ধে অভিযোগ তুলেছেন।

রাজ্যের খাদ্যমন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক অভিযোগ করেছেন, বাংলাদেশ থেকে বহিরাগতদের নিয়ে এসে উত্তর ২৪ পরগনা জেলার সীমান্তবর্তী অঞ্চলে ভোট করাচ্ছে বিরোধী সিপিএম ও বিজেপি। সব মিলিয়ে পঞ্চায়েত ভোটের শুরু থেকেই বিক্ষিপ্ত হিংসা, অশান্তি আর শাসকবিরোধী চাপানউতোরে ভোটের বাজার বেশ উত্তপ্ত।

এদিকে এই ত্রিস্তরীয় পঞ্চায়েত নির্বাচনে রাজ্যের ৩৪ শতাংশের কাছাকাছি আসনে প্রার্থী দিতে পারেনি বিরোধীরা। বিরোধীদের অভিযোগ, সন্ত্রাসের ভয়েই প্রার্থী দিতে পারেনি তারা। বাকি ৬৬ শতাংশ আসনে এ দিন সকাল থেকে ভোটগ্রহণ শুরু হলেও শাসক দলের দাদাগিরি কার্যত অব্যাহত।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close
Error!: SQLSTATE[42S02]: Base table or view not found: 1146 Table 'protidin_sangbad.news_hits_counter_2020_04_07' doesn't exist
Error!: SQLSTATE[42S02]: Base table or view not found: 1146 Table 'protidin_sangbad.news_hits_counter_2020_04_07' doesn't exist