মহসীন শেখ, কক্সবাজার

  ২০ ফেব্রুয়ারি, ২০১৮

বিলীনের আশঙ্কায় মগনামা

কক্সবাজারের পেকুয়া উপজেলার উপকূলীয় এলাকায় মগনামা নামে একটি ইউনিয়ন আছে, আসলে সেটি একটি বিশাল ঘনবসতিপূর্ণ গ্রাম। সাগর তীরবর্তী এই ইউনিয়নের দক্ষিণাংশে ৫৫০ মিটার এলাকাজুড়ে বেড়িবাঁধ না থাকায় চরম ঝুঁকিতে রয়েছে গ্রামটি। পার্শ্ববর্তী দ্বীপ উপজেলা কুতুবদিয়া চ্যানেলের প্রচ- ঢেউ ও তীব্র পানির স্রোতে বিলীন হচ্ছে কাঁকপাড়াসহ আশপাশের আরো বেশ কিছু এলাকা। পার্বত্য জেলা বান্দরবানের পানি উন্নয়ন বোর্ড নিয়ন্ত্রিত প্রায় ১৮০০ ফুট বেড়িবাঁধ অরক্ষিত। তবে কাঁকপাড়া অংশটি সংস্কারের উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে বলে জানা গেছে। ইতোমধ্যেই মগনামার পশ্চিম ও দক্ষিণ অংশের ওসব বেড়িবাঁধ পানির ধাক্কায় বিলীন হয়ে গেছে। এতে মগনামার মানুষ চরম ঝুঁকির মধ্যে পড়েছে। বিশেষ করে আগামী বর্ষা মৌসুমের আগে ওই বেড়িবাঁধ সংস্কার করা অত্যন্ত জরুরি বলে মনে করছেন গ্রামবাসী।

কক্সবাজার পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) সূত্র জানায়, কাঁকপাড়ার বিলীন অংশের বেড়িবাঁধ সংস্কারকাজ বাস্তবায়ন করতে বরাদ্দ পাওয়া গেছে। তবে কবে নাগাদ কাজ শুরু করা হবে সে সম্পর্কিত বিষয়টি এখনো অমীমাংসিত। মগনামা ইউনিয়নের পোয়ারমুখ নামক কাঁকপাড়া মাজার সংলগ্ন স্থানে প্রায় ৫৫০ মিটার বেড়িবাঁধ সম্পূর্ণ বিলীন হয়ে গেছে। বিলীন হওয়া বেড়িবাঁধের এসব অংশ সমুদ্রের সঙ্গে একাকার হয়েছে। বেড়িবাঁধের কোনো চিহ্ন নেই। কুতুবদিয়া চ্যানেলের নদীর চরের সঙ্গে বেড়িবাঁধ মিশে গেছে। ইতোমধ্যে অর্থ বরাদ্দ হয়েছে। তবে টাকার ছাড় পাওয়া যায়নি। খুব শিগগির কাজের কার্যাদেশ দেওয়া হবে।

সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, পানি উন্নয়ন বোর্ড বান্দরবানের ৬৫/২বি পোল্ডারের বেড়িবাঁধ মগনামা দক্ষিণ ও পশ্চিম অংশে বিলীন হয়েছে। তবে পশ্চিমের অবশিষ্ট বেড়িবাঁধ ঝুঁকিমুক্ত। কাঁকপাড়া মাজার পয়েন্টে বেড়িবাঁধ নেই। সেখানে বিভিন্ন পয়েন্টে মৎস্য ও লবণ চাষিরা ব্যক্তিগত উদ্যোগে রিংবাঁধ তৈরি করেছে।

স্থানীয় জেলে জসিম উদ্দিন, লিয়াকত, আবুল কালাম ও ব্যবসায়ী রবিউল আলম জানান, সাগরের লোনা পানি লোকালয়ে প্রবেশ ঠেকাতে স্থানীয়রা এ রিংবাঁধ তৈরি করেছে। এদিকে, বেড়িবাঁধ বিলীন থাকায় মগনামার হাজার হাজার মানুষ ঝুঁকির মধ্যে আছে। দুই-এক মাসের মধ্যে বেড়িবাঁধ সংস্কারকাজ বাস্তবায়ন না হলে নতুন করে সংকট দেখা দিতে পারে বলে আশঙ্কা রয়েছে।

কাঁকপাড়া শেখ আবদুল আজিজ চৌধুরী প্রাথমিক বিদ্যালয় সাগর গর্ভে বিলীন হচ্ছে। মাজার সাগরে চলে গেছে। প্রতিদিন জোয়ার-ভাটা চলছে। এদিকে, বেড়িবাঁধ সংস্কার দাবিতে জনপ্রতিনিধিরা সোচ্চার হচ্ছেন। সোচ্চার হচ্ছেন সর্বস্তরের মানুষ।

স্থানীয় ইউপি সদস্য নুর মোহাম্মদ মাদু ও শাহেদ হোসেন জানান, কাঁকপাড়াসহ মগনামার পশ্চিমের বেড়িবাঁধ বিলীন হয়েছে বিগত ৩-৪ বছর আগে। কাঁকপাড়া অংশ সম্পূর্ণ বিলীন হয়েছে। ফলে সেখান দিয়ে সাগরের লোনা পানিতে মগনামাসহ পাশর্^বর্তী উজানটিয়া ইউনিয়ন প্লাবিত হয়ে যাচ্ছে। গত তিন বছরে এ দুই ইউনিয়ন একাধিকবার প্লাবিত হয়েছে। পাউবো টেকসই বেড়িবাঁধ সংস্কার কাজ বাস্তবায়ন করতে প্রায় ২০০ কোটি টাকা বরাদ্দ দেয়। মাটি ভরাট নদীর স্রোতধারা ঠেকাতে সিসি ব্লক, জিউ টেক্সটাইল দেওয়া হয় বেড়িবাঁধে। শরৎঘোনা থেকে মগনামা জেটিঘাট পর্যন্ত আড়াই কিলোমিটারের মধ্যে প্রায় ১ কিলোমিটারে মাটি ভরাট হয়েছে। দেড় কিলোমিটার সংস্কারকাজ চলমান রয়েছে। মগনামা জেটিঘাট থেকে চ্যাপ্টাখালী নাশি পর্যন্ত বেড়িবাঁধ সংস্কারকাজ বাস্তবায়ন হয়েছে। চ্যাপ্টাখালী নাশি থেকে ঢলন্যাপাড়া পর্যন্ত প্রায় ৩ কিলোমিটার বেড়িবাঁধ মাটি ভরাটকাজ বাস্তবায়ন হয়েছে। ওই অর্থ থেকে পাউবো সংস্কারকাজ বাস্তবায়ন করছে। তবে কাঁকপাড়ার শেখ আবদুল আজিজ চৌধুরী প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে দক্ষিণে উজানটিয়ার সীমানা পর্যন্ত এলাকা সংস্কার কাজের আওতায় আসেনি।

স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান শরাফত উল্লাহ ওয়াসিম জানান, মগনামার ঝুঁকি হ্রাস করতে কাঁকপাড়া অংশের বেড়িবাঁধ সংস্কার করতে হবে। তবে চতুরদিকে কাজ সমাপ্ত হলেও কাঁকপাড়া অংশ খোলা থেকে গেছে। পানি এ অংশ দিয়ে প্রবেশ করলে মগনামা সমগ্র প্লাবিত হবে। আমি গ্রামীণ অবকাঠামো রাস্তাঘাট সংস্কার করেছি। বিপুল সড়ক মাটি ভরাট বাস্তবায়ন করা হয়েছে। নিচু সড়কগুলো উঁচু করা হয়েছে। কিন্তু বেড়িবাঁধের এ অংশের সংস্কার না হলে এসব রাস্তাঘাট পানিতে তলিয়ে যাবে। এ ব্যাপারে কক্সবাজার পাউবোর দায়িত্বরত শাখা কর্মকর্তা গিয়াস উদ্দিন জানান, টেন্ডার প্রক্রিয়াধীন। পাউবো খুব দ্রুত সময়ে কাজ বাস্তবায়ন করবে। পাউবো বান্দরবানের নির্বাহী প্রকৌশলী রাকিবুল হাসানের সঙ্গে যোগাযোগ করতে তার মুঠোফোনে কল দেওয়া হলে সংযোগ না পাওয়ায় বক্তব্য নেওয়া সম্ভব হয়নি।

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close
Error!: SQLSTATE[42S02]: Base table or view not found: 1146 Table 'protidin_sangbad.news_hits_counter_2020_04_07' doesn't exist
Error!: SQLSTATE[42S02]: Base table or view not found: 1146 Table 'protidin_sangbad.news_hits_counter_2020_04_07' doesn't exist