নিজস্ব প্রতিবেদক

  ২৯ এপ্রিল, ২০২৪

পদ্মা সেতুতে টোল আদায়ে মাইলফলক

রাজধানী ঢাকা হয়ে দেশের দক্ষিণাঞ্চলের জেলাগুলোতে প্রধান প্রবেশদ্বার পদ্মা সেতু। নিজস্ব অর্থায়নে নির্মিত দেশের বৃহত্তম অবকাঠামো প্রকল্প পদ্মা সেতু চালুর পর গত ২২ মাসে টোল আদায় হয়েছে ১৫০০ কোটি টাকার বেশি। শনিবার রাত ১২টা পর্যন্ত টোল আদায়ের এ মাইলফলক অর্জন করেছে বহুমুখী সেতুটি।

পদ্মা সেতু নির্মাণ প্রকল্প বাস্তবায়নের জন্য বাংলাদেশ সেতু কর্তৃপক্ষকে ২৯ হাজার ৮৯৩ কোটি টাকা ঋণ দিয়েছে সরকার। এ ঋণ ৩৫ বছরে শোধ করতে হবে সেতু কর্তৃপক্ষকে। গত বছরের ২৯ আগস্ট, বৃহস্পতিবার সকালে সচিবালয়ে পদ্মা বহুমুখী সেতু প্রকল্পে সরকার প্রদত্ত ঋণ বাস্তবায়নের জন্য অর্থ মন্ত্রণালয় ও সেতু কর্তৃপক্ষের মধ্যে ঋণচুক্তি স্বাক্ষর হয়। চুক্তির শর্তে এসব কথা বলা হয়েছে।

সেতু বিভাগের তথ্য থেকে জানা গেছে, ২০২২ সালের ২৫ জুন থেকে পদ্মা সেতু দিয়ে যানবাহন পারাপার শুরু হয়। তখন থেকে শনিবার রাত ১২টা পর্যন্ত মাওয়া প্রান্ত দিয়ে ৫৬ লাখ ১ হাজার ২৩২টি এবং জাজিরা প্রান্ত দিয়ে ৫৬ লাখ ৮৯ হাজার ৮৬৩টি যানবাহন পারাপার হয়। এতে টোল আদায় হয়েছে ১ হাজার ৫০২ কোটি ৬২ লাখ ১৫ হাজার ৯০০ টাকা।

বাংলাদেশ সেতু কর্তৃপক্ষের অতিরিক্ত পরিচালক আমিরুল হায়দার চৌধুরী বলেন, ‘টোল আদায়ের ক্ষেত্রে পদ্মা সেতু দেড় হাজার কোটি টাকার মাইলফলক অতিক্রম করেছে। আশা করছি, দিন দিন টোলের পরিমাণ আরো বাড়বে।’

সবচেয়ে বেশি টোল আদায় হয় ঈদে। এ সময় বেশিসংখ্যক যান পারাপার হয়। তবে ঈদের আয় কমেছে। এবারের পবিত্র ঈদুল ফিতর ও নববর্ষের টানা পাঁচ দিনের সরকারি ছুটিতে ৯ থেকে ১৩ এপ্রিল পর্যন্ত ৪৬,৫৫৩টি যানবাহন পদ্মা সেতু পারাপার করেছে। এতে এই পাঁচ দিনে সেতুর মাওয়া ও জাজিরা প্রান্তে টোল আদায় হয়েছে ১৪ কোটি ৬০ লাখ ৫২ হাজার ৭০০ টাকা।

সেতু বিভাগ থেকে প্রাপ্ত তথ্য বলছে, গত বছরের তুলনায় এবারের ঈদে যানবাহন পারাপার কমেছে। সেই সঙ্গে কমেছে টোল আদায়ের পরিমাণও।

গত ঈদুল ফিতরের সময় ২০ এপ্রিল থেকে ২৪ এপ্রিল পর্যন্ত ১ লাখ ৬৩ হাজার ৭৭৮টি যানবাহন পারাপার হয়। এতে টোল আদায় ১৪ কোটি ৬১ লাখ ৬৬ হাজার ৫৫০ টাকা। এ বছরের হিসেবে যানবাহন কমেছে ১৭,২২৫টি। টোলের পরিমাণও কমেছে গত বছরের তুলনায় ১ লাখ ১৩ হাজার ৮৫০ টাকা।

বাংলাদেশ সেতু কর্তৃপক্ষ সূত্রে জানা গেছে, ৯ এপ্রিল মাওয়া প্রান্ত দিয়ে ৩০,৩৩০টি, ১০ এপ্রিল ১৭,৫০৫টি, ১১ এপ্রিল ১১,১৯৪টি, ১২ এপ্রিল ১৫,৮৮৩টি এবং ১৩ এপ্রিল ১২,৮৯৬টি যানবাহন পদ্মা সেতু পার হয়েছে। এতে এ প্রান্ত দিয়ে এ পাঁচ দিনে টোল আদায় হয়েছে ৭ কোটি ৮৭ লাখ ১৮ হাজার ৫৫০ টাকা।

জাজিরা প্রান্ত দিয়ে পাঁচ দিনে যথাক্রমে ১৪,৮৭৪টি, ৮,৫১০টি, ৭,৪৬৫টি, ১২,১০০টি এবং ১৫,৫৯৬টি যানবাহন পদ্মা সেতু পার হয়েছে। এতে এ প্রান্তে টোল আদায় হয়েছে ৬ কোটি ৭৭ লাখ ৩৪ হাজার ১৫০ টাকা।

ঋণ পরিশোধ : পদ্মা সেতুর জন্য নেওয়া ঋণের ৫ম ও ৬ষ্ঠ কিস্তি পরিশোধ করেছে বাংলাদেশ সেতু কর্তৃপক্ষ। গত ১৮ ডিসেম্বর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উপস্থিতিতে সেতু বিভাগের সচিব ও বাংলাদেশ সেতু কর্তৃপক্ষের নির্বাহী পরিচালক মো. মঞ্জুর হোসেন আনুষ্ঠানিকভাবে অর্থ বিভাগের সিনিয়র সচিবকে ৩১৫ কোটি ৭ লাখ ৫৩ হাজার ৪৪২ টাকা পরিশোধ করেন। বাংলাদেশ সেতু কর্তৃপক্ষের তথ্য কর্মকর্তা স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে এই তথ্য জানানো হয়েছে।

ঋণের ৫মণ্ড৬ষ্ঠ কিস্তি পরিশোধ অনুষ্ঠানে সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের, মন্ত্রিসভার সদস্য, মন্ত্রিপরিষদ সচিব, প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব, সিনিয়র সচিব উপস্থিত ছিলেন।

বাংলাদেশ সরকারের নিজস্ব-অর্থায়নে পদ্মা সেতু নির্মাণে ব্যয় হয়েছে ৩২ হাজার ৬০৫ কোটি টাকা। নির্মাণ ব্যয়ের প্রায় পুরো অর্থই বাংলাদেশ সেতু কর্তৃপক্ষকে ঋণ হিসেবে দিয়েছে অর্থ বিভাগ।

২০২২ সালের ২৬ জুলাই সরকারের অর্থ বিভাগের সঙ্গে একটি সংশোধিত ঋণ চুক্তিতে স্বাক্ষর করে বাংলাদেশ সেতু কর্তৃপক্ষ। সে চুক্তি অনুযায়ী, ১ শতাংশ সুদহারে ৩৫ বছরের মধ্যে ঋণের অর্থ পরিশোধ করা হবে। ঋণ পরিশোধের সময়সূচি অনুসারে, প্রতি অর্থবছরে চার কিস্তিতে সুদ পরিশোধ করা হবে, কিস্তি ১৪০টি।

এছাড়া সেতুর বিস্তারিত নকশার জন্য এশিয়ান ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক থেকে ২ শতাংশ সুদে দুটি ঋণ চুক্তির আওতায় ১৫ বছর মেয়াদি ১,৭৪,৫৩,০০০ টাকার স্পেশাল ড্রয়িং রাইট (এসডিআর) ঋণ নেওয়া হয়েছে।

বছরে চার কিস্তি, অর্থাৎ ৬০ কিস্তিতে সুদ ও মূলসহ ২৮,০৯৯,৩৩০ টাকা এসডিআর পরিশোধ করা হবে।

চুক্তির পর ২০২২-২৩ অর্থবছর থেকেই সেতু কর্তৃপক্ষের ঋণ পরিশোধ শুরু হয়েছে। ঋণ পরিশোধের জন্য ২০৫৬-৫৭ অর্থবছর পর্যন্ত সময় পাবে তারা।

এদিকে, ২০২২ সালের ২৫ জুন সেতুটি উদ্বোধনের পর থেকে এ বছরের ৩০ নভেম্বর পর্যন্ত টোল হিসেবে ১,১৬৫,১৩,৪১,৩৪১ টাকা আদায় হয়েছে।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close