উপল বড়ুয়া

  ১০ মে, ২০১৮

জাপানের বৈচিত্র্যময় ফুটবল ইতিহাস

বিশ্বকাপ দল পর্যালোচনা

ইন্টারন্যাশনাল ফেডারেশন অব অ্যাসোসিয়েশন ফুটবল (ফিফা) গঠিত হয় ২১ মে ১৯০৪ সালে। অনেকে হয়তো মনে করতে পারেন ফিফার পরপরই ফুটবলের ইতিহাস শুরু। আদতে তা নয়। ফুটবলের ইতিহাস সহস্র বছরের প্রাচীন। খ্রিস্টাব্দ চালুর আগে থেকেই বিভিন্ন দেশে ফুটবল খেলা হতো নিয়মিত। ১১৩ বছর আগে ফিফা কেবল সেটাকে আনুষ্ঠানিক এবং আন্তর্জাতিক রূপ দিয়েছে।

অতীত সামনে টানতে হচ্ছে, ফুটবলের ইতিহাস ঘাঁটলে যে কয়টি দেশ নথিপত্রে প্রমাণ মিলেছে তাদের মধ্যে জাপান অন্যতম। ফুটবলের জন্ম নিয়ে ‘নানা মুনির নানা মত’ রয়েছে। অনেকে বলেন, ফুটবলের জন্ম প্রাচীন চীনে। কেউ বলেন, প্রাচীন রোমান সাম্রাজ্যে। আবার কারো মতে, গ্রেট ব্রিটেনেই উৎপত্তি ফুটবলের।

অবশ্য বিভিন্ন তত্ত্ব উপাত্তের মাধ্যমে জানা যায়, খ্রিস্টপূর্ব ১০০৪ অব্দে জাপানে জন্ম হয় ফুটবল খেলার। তখন গোলাকার কোনো বস্তু দিয়ে খেলত। জার্মানির মিউনিখে অবস্থিত নৃ-তত্ত্ব জাদুঘরে সংরক্ষিত নথি পত্রে দেখা যায়, খ্রিস্টপূর্ব ৫০ অব্দে জাপান ও চীনের লোকজন ফুটবলের মতো এক ধরনের খেলা করত। সেখান থেকে ধীরে ধীরে বিশ্বে ছড়িয়ে পড়ে ফুটবল।

ইতিহাসের হিসাব-নিকাশ থাক এবার। আসা যাক, বর্তমান বিশ্ব ফুটবলে জাপানের অবস্থান নিয়ে। জাপানকে বলা হয় এশিয়ার ব্রাজিল। যদিও পাঁচবারের বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন ব্রাজিলের সঙ্গে জাপানিজদের তুলনা চলে না। বিশ্ব ফুটবলে নিজেদের শ্রেষ্ঠত্বটা ঠিক সেভাবে জানান দিতে না পারলেও অনেক বছর ধরে এশিয়ান ফুটবলের অন্যতম পরাশক্তি হয়ে উঠেছে সামুরাইয়ের দেশটি।

অর্থনৈতিকভাবে সমৃদ্ধ দ্বীপ রাষ্ট্রটিতে তাদের প্রধান ঐতিহ্যবাহী খেলা সুমো ও মার্শাল আর্টের পরেই রয়েছে ফুটবলের অবস্থান। বিশ্বকাপ ফুটবলে এশিয়ার সবচেয়ে সফল দেশ হচ্ছে জাপান। লাল-সাদা পতাকার দেশটি গত পাঁচ বিশ্বকাপেই এশিয়া অঞ্চলের চ্যাম্পিয়ন হয়ে বিশ্বকাপে জায়গা করে নিয়েছে। আসন্ন রাশিয়া বিশ্বকাপে ‘এইচ’ গ্রুপে তারা লড়াই করবে পোল্যান্ড, সেনেগাল ও কলম্বিয়ার সঙ্গে। ১৯ জুন সারানস্কে কলম্বিয়ার বিপক্ষের ম্যাচ দিয়ে বিশ্বকাপ যাত্রা শুরু হবে নিপ্পনিদের।

ফুটবলকে উন্নতির লক্ষ্যে জাপান ফুটবল অ্যাসোসিয়েশন (জেএফএ) গঠন করে ১৯২১ সালে। ওই বছরই তারা ফিফার সদস্য পদ লাভ করে। কিন্তু বিশ্বকাপের টিকিটের জন্য তাদের অপেক্ষা করতে হয় ১৯৯৮ সাল পর্যন্ত। আগের বার বাছাইয়ে ইরাকের সঙ্গে ড্র করেছিল তারা, জিতলে হয়তো চার বছর আগেই বিশ্বমঞ্চে অভিষেক হয়ে যেত জাপানের। যেটা হলো ফ্রান্স বিশ্বকাপে, ওই আসরের গ্রুপ পর্বেই থেমে যায় তাদের স্বপ্নযাত্রা। জাপানিজদের সান্ত¦না ছিল ওই বছরই ইতিহাস সেরা ফিফা র‌্যাঙ্কিংয়ের ৯ নাম্বারে উঠে এসেছিল তারা।

২০০২ বিশ্বকাপে দক্ষিণ কোরিয়ার সঙ্গে যৌথভাবে আয়োজন করেছিল তারা। ওই আসরে কোরিয়া সেমিফাইনালে উঠলেও নক আউট পর্বের শুরুতেই শেষ হয়ে যায় জাপানের রথযাত্রা। ২০০৬ জার্মান বিশ্বকাপে এসে ফের গ্রুপ পর্ব থেকে ছিটকে যায় এশিয়ান জায়ান্টরা। তবে পরের বছর দক্ষিণ আফ্রিকা বিশ্বকাপে চমক দেখায় জাপান। ফ্রান্সের মতো পরাশক্তিকে হারিয়ে দ্বিতীয় রাউন্ডে জায়গা করে নেয় সামুরাই ব্লুরা। পরের বার ব্রাজিল বিশ্বকাপে আবার গ্রুপ পর্বে শেষ হয়ে যায় জাপানিদের স্বপ্ন। তাদের বিশ্বকাপ ইতিহাস বলছে এবার তারা দ্বিতীয় রাউন্ডে উঠবে।

জাপান এশিয়ার একমাত্র দল যারা রেকর্ড সর্বোচ্চ চারবার (১৯৯২, ২০০০, ২০০৪, ২০১১) এফসি এশিয়ান কাপ জিতেছে। এছাড়া এশিয়ার একমাত্র দল হিসেবে ল্যাতিন আমেরিকান ফুটবলের মর্যাদাপূর্ণ লড়াই কোপা আমেরিকাতে তারা খেলেছে ১৯৯৯ সালে। ২০১১ সালে দ্বিতীয়বার কোপা আমেরিকা খেলার আমন্ত্রণ পেলেও সুনামির কারণে টুর্নামেন্টটিতে অংশগ্রহণ করতে পারেনি তারা। বিশ্ব ফুটবলের ইতিহাসে তাদের সর্বোচ্চ অর্জন ২০০১ সালে ফিফা কনফেডারেশনস কাপে রানার্সআপ হওয়াটা।

সর্বশেষ ফিফা র‌্যাঙ্কিংয়ে জাপানের অবস্থান ৫৫তম। রাশিয়া বিশ্বকাপে তারা খেলবে কোচ আকিরা নিশিনোর অধীনে। এই অভিজানে স্পট লাইটটা থাকবে সাউদ্যাম্পটনের সেন্টার ব্যাক মায়া ইয়োশিদোর দিকে। যিনি নিখুঁত কর্নার কিকের জন্য বেশ আলোচিত। ২০১২ অলিম্পিক ও বিশ্বকাপ বাছাই পর্বে দুর্দান্ত পারফরম্যান্স দিয়ে সবার নজর কেড়েছিলেন ইয়োশিদো। জাতীয় দলে তার সতীর্থ এসি মিলান মিডফিল্ডার কেইসুকে হোন্ডা দলটির আক্রমণভাগে নেতৃত্ব দিতে পারেন।

১৯১৭ সালে চীনের বিপক্ষে আন্তর্জাতিক ফুটবলে অভিষেক হয় জাপানের। দুঃস্বপ্নের ম্যাচটায় চীনের কাছে ৫-০ গোলে বিধ্বস্ত হয়েছিল তারা। সেই ধাক্কাটা ধীরে ধীরে সামলে উঠেছে জাপান। তথ্যসূত্র : উইকিপিডিয়া, ফিফা ডটকম

পিডিএসও/তাজ

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
জাপান,ইতিহাস,ফুটবল,ফিফা
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close
Error!: SQLSTATE[42S02]: Base table or view not found: 1146 Table 'protidin_sangbad.news_hits_counter_2020_04_07' doesn't exist
Error!: SQLSTATE[42S02]: Base table or view not found: 1146 Table 'protidin_sangbad.news_hits_counter_2020_04_07' doesn't exist