‘ভোটের মাধ্যমে অপশক্তিকে চির বিদায় করবে জনগণ’
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, বাংলাদেশের জনগণ কখনও স্বাধীনতা বিরোধী অপশক্তি তথা আগুন দিয়ে পুড়িয়ে মানুষ হত্যাকারি ও দুর্নীতিবাজ বিএনপিকে ভোট দেবে না। ভোটে জনগণ তাদের চিরবিদায় করবে। তিনি বলেন, স্বাধীনতা বিরোধী দুর্নীতিবাজ, আগুন দিয়ে মানুষ পুড়িয়ে হত্যাকারি এবং যুদ্ধাপরাধীদের মদদ দানকারী বিএনপিকে কখনও বাংলার মানুষ ভোট দেবে না, এরা আর কোনদিন ক্ষমতায় আসতে পারবে না। জনগণই ক্ষমতায় আসতে দেবে না তাদের। স্বাধীনতার সুফল নিয়ে আর কাউকে ছিনিমিনি খেলতে দেয়া হবে না। আমরা দেবনা বলে দৃপ্তকন্ঠে ঘোষণা করেন তিনি। আজ রোববার বিকেলে বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস এবং ৪৭তম বিজয় দিবস উদযাপন উপলক্ষে আওয়ামী লীগ আয়োজিত আলোচনা সভায় সভাপতির ভাষণে তিনি এসব কথা বলেন।
আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রী ওবায়দুল কাদের আলোচনা সভায় সূচনা বক্তৃতা করেন। আলোচনা সভায় আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা মন্ডলীর সদস্য ও শিল্পমন্ত্রী আমির হোসেন আমু এবং বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ, প্রেসিডিয়াম সদস্য শেখ ফজলুল করিম সেলিম এমপি, প্রেসিডিয়াম সদস্য ও কৃষিমন্ত্রী বেগম মতিয়া চৌধুরী, শহীদ সাংবাদিক সিরাজুদ্দিন হোসেনের পুত্র শাহীন রেজানুর, কেন্দ্রিয় কমিটির মহিলা বিষয়ক সম্পাদক ফজিলাতুন নেছা ইন্দিরা, আওয়ামী লীগের মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক সম্পাদক মৃণাল কান্তি দাস, মহানগর আওয়ামী লীগ দক্ষিণের সাধারণ সম্পাদক শাহে আলম মুরাদ, মহানগর আওয়ামী লীগ উত্তরের সাধারণ সম্পাদক সাদেক খান বক্তৃতা করেন।
অনুষ্ঠান পরিচালনা করেন আওয়ামী লীগের প্রচার সম্পাদক ড.হাছান মাহমুদ এবং উপ প্রচার সম্পাদক আমিনুল ইসলাম। অনুষ্ঠানের শুরুতে শহীদদের স্মরণে দাঁড়িয়ে এক মিনিট নিরবতা পালন করা হয়। আলোচনা সভায় মন্ত্রী পরিষদ সদস্যবৃন্দ, প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টাগণ, সংসদ সদস্যবৃন্দ, সুশীল সমাজের প্রতিনিধিবৃন্দ, আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয়, মহানগর, ওয়ার্ড এবং ইউনিট পর্যায়ের নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।
শেখ হাসিনা বলেন, সিঙ্গাপুরের কোর্ট এবং আমেরিকার ফেডারেল কোর্টই বলেছে- খালেদা জিয়ার ছেলেরা মানি লন্ডারিং করেছে। এটা তাদের কাছেই ধরা পড়েছে, যে টাকা আমরা উদ্ধার করেছি। কাজেই এরা কোন মুখে জনগণের কাছে গিয়ে দাঁড়াবে। কোন মুখে জনগণের কাছে ভোট চাইবে। তিনি বলেন, যারা স্বাধীন দেশে বিশ্বাস করে, বাংলাদেশের স্বাধীনতায় বিশ্বাস করে তারা কিভাবে মেনে নিতে পারে সাজাপ্রাপ্ত যুদ্ধাপরাধীদের ক্ষমতায় বসানো। তাদের সন্তান-সন্তুতিকে নিয়ে দল গঠন করা, যেটি খালেদা জিয়া এবং ঐ বিএনপি করেছিল। তাহলে আমার প্রশ্ন এই দলকে যারা সমর্থন করেন তারা কিভাবে করেন। এ সময় আন্দোলনের নামে বিএনপির দেশ ধ্বংস এবং মানুষ পুড়িয়ে হত্যার সমালোচনা করে তিনি বলেন, আমরা গড়ে তুলি আর ওরা ধ্বংস করে। আর জনগণ যখন প্রতিরোধ করেছে তখন বাধ্য হয়েছে থামতে।
আওয়ামী লীগ পধান বলেন, যারা সৃষ্টি করে যারা ত্যাগ শিকার করে তাদের যে দরদ ও আন্তরিকতা থাকে সেটা কিন্তু উড়ে এসে যারা ক্ষমতায় জুড়ে বসে, অবৈধভাবে ক্ষমতা দখল করে তাদের থাকে না। তিনি বলেন, উড়ে এসে জুড়ে বসা চক্র ভোগ বিলাসে জীবন কাটায়, দেশের অর্থ বিদেশে পাচার করে। আমরা দেশ স্বাধীন করেছি। আজকে দেশ উন্নয়নের পথে এগিয়ে যাচ্ছে এবং আপনারা দেখেছেন এবারের বিজয় দিবস সর্বস্তরের জনগণের ব্যাপক অংশগ্রহণের মধ্যদিয়ে পালিত হয়েছে। সব থেকে ভালো লেগেছে এদেশের তরুণ সমাজ মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় যেভাবে নতুন করে উজ্জীবিত হয়েছে, জাগ্রত হয়েছে তাতে আমরা আশার আলো দেখি- বাংলাদেশ এগিয়ে যাবে। বাংলাদেশ উন্নত হবে। বাংলাদেশ সমৃদ্ধশালী হবে।
জাতির পিতার ৭ মার্চের ভাষণ বিশ্বের প্রামান্য দলিল হিসেবে ওয়ার্ল্ড মেমোরি রেজিষ্টারে অন্তর্ভুক্ত হওয়ায় বাংলাদেশ সারাবিশ্বে জাতি হিসেবে অনন্য মর্যাদা পেয়েছে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী তিনি বলেন, বাঙালি জাতি এখন বিশ্বে মাথা উঁচু করে চলছে, আগামীতেও মাথা উঁচু করে চলবে, সেটাই হবে আমাদের আজকের দিনের প্রতিজ্ঞা। তিনি আরও বলেন, লাখো শহীদের রক্তের বিনিময়ে অর্জিত আমাদের স্বাধীনতা। স্বাধীনতার সুফল আজকে বাংলার মানুষের ঘরে ঘরে পৌঁছাচ্ছে। এই সুফল নিয়ে বাংলার মানুষের ভাগ্য নিয়ে আর কখনো কেউ ছিনিমিনি খেলতে পারবে না। ছিনিমিনি খেলতে আমরা দেব না। জাতির পিতার স্বপ্নের ক্ষুধা মুক্ত, দারিদ্রমুক্ত বাংলাদেশ আমরা গড়ে তুলবো ইনশাল্লাহ।
যুদ্ধ বিধ্বস্ত বাংলাদেশ গড়ে তোলা এবং মুক্তিযুদ্ধে সম্ভ্রমহারা নারীদেও সহায়তায় নারী পুনর্বাসন বোর্ড গড়ে তুলে তাঁদের পুনর্বাসনে বঙ্গবন্ধুর উদ্যোগ তুলে ধরে সরকার প্রধান বলেন, দুর্ভাগ্য আমাদের যে সময় মানুষের মনে একটু স্বস্তি ফিরে আসে সেই সময়ে ’৭৫ এর ১৫ আগস্ট জাতির পিতাকে নির্মমভাবে সপরিবারে হত্যা করা হয়। মাঝে মাঝে আমার এটাই মনে হয় যারা যুদ্ধাপরাধী, যারা এদেশের স্বাধীনতা চায়নি, যাদের বিচার বঙ্গবন্ধু শুরু করে অনেককে সাজা পর্যন্ত দিয়েছিলেন, তাদের রাজনীতি ও ভোটের অধিকার নিষিদ্ধ করেছিলেন সেই সাজা প্রাপ্ত সকল আসামীদের ’৭৫ এর ১৫ আগস্টের পর মুক্তি দেয়া হয়। তাদের রাজনীতি করা সুযোগ দেয়া হয়। পাকিস্তানের পাসপোর্ট নিয়ে পাকিস্তানে আশ্রয় গ্রহণ করাদেরও ফেরত আনা হয় এবং হত্যা ক্যু ষড়যন্ত্রের মধ্যদিয়ে ক্ষমতাদখলকারি চক্র দেশের ক্ষমতায় আসে। ঐ রাজাকার, আলবদর, আল শামসদের মন্ত্রী বানানো হয়। এদেশে যারা গণহত্যা চালিয়েছে, গ্রামের পর গ্রাম জালিয়ে দিয়েছে আমার মা বোনদের যারা পাকিস্তানীদের হাতে তুলে দেয়, তারাই ক্ষমতায় আসে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, কি দুর্ভাগ্য এদেশের, যারা রক্ত দিল, যারা যুদ্ধ করলো তারাই যেন অপরাধী হয়ে গেল। আর যারা পাকিস্তানী হানাদারবাহিনীর দালালি করলো, যারা গণহত্যা চলালো, যারা মা-বোনদের ধর্ষণ করলো তাদেরই ক্ষমতায় বসানো হলো। আর ক্ষমতায় বসিয়েছিল কে? সেও একজন মুক্তিযোদ্ধা, তাকে বড়ো খেতাবও দেয়া হয়েছিল, ছিল একজন মেজর। জাতির পিতাই তাকে প্রমোশন দিয়ে দিয়ে বানালেন মেজর জেনারেল। সে হচ্ছে বেইমান, মোনাফেক জিয়াউর রহমান। সেই এদেরকে প্রতিষ্ঠা করলো বাংলাদেশে। জাতির পিতার হত্যাকারীদের বিচারের পথ রুদ্ধ করতে ইনডেমনিটি অর্ডিন্যান্স জারি এবং জাতির পিতার আত্মস্বীকৃত খুনীদের বিভিন্ন দূতাবাসে চাকরী দিয়ে পুরস্কৃত করার কথাও উল্লেখ করেন প্রধানমন্ত্রী।
সংসদ নেতা বলেন, একবার ভেবে দেখেন বাংলাদেশের রাষ্টদূত বা দূতাবাসে চাকরী করার যোগ্যতা হচ্ছে সে এই দেশের জাতির পিতার আত্মস্বীকৃত খুনী। স্বাধীন বাংলাদেশের ডিপ্লোম্যাট একজন খুনী। এতে করে বিশ্বে দেশের ভাবমূর্তি চরমভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয় বলেও তিনি উল্লেখ করেন। তিনি বলেন, জিয়াউর রহমান একাই নয়, খালেদা জিয়া, এরশাদ সবাই এই খুনী ও পাকবাহিনীর দোসরদের খোশামোদী-তোষামোদী করেছেন। খালেদা জিয়া ক্ষমতায় এসেতো আরো একধাপ উপরে উঠলেন, এদেরকে নিয়েই তার দহরম মহরম। এদের হাতে তুলে দিলেন লাখো শহীদের রক্তে রঞ্জিত পতাকা, এদেরকে বানালেন মন্ত্রী। তিনি বলেন, আমরা জনগণের কাছে ওয়াদা করেছিলাম ক্ষমতায় গিয়ে এই অপরাধীদের বিচার করবো। আমরা সেই বিচার করেছি।
সম্প্রতি পত্রিকায় প্রকাশিত সৌদি আরবের ধনকুবেরদের কাছে ব্যবসায়ে লগ্নী করার জন্য বাংলাদেশের জিয়া পরিবারের টাকা প্রদান সংক্রান্ত সৌদি আইন-শৃংখলা বাহিনীর তথ্য সম্পর্কে আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, ভাঙ্গা স্যুটকেস আর ছেড়া গেঞ্জি থেকে আগে জাহাজ রেবিয়েছে কোকো ১,২,ইন্ডাস্ট্রি বেরিয়েছে, এখন আবার শপিং মল বেরোচ্ছে, ফ্লাট বেরোচ্ছে, হাজার হাজার কোটি টাকা বের হচ্ছে। বাংলাদেশের ব্যাংকের থেকে ৯৫০ কোটি টাকা যারা লুটে নিয়ে গেছে তারা আবার স্বপ্ন দেখে ক্ষমতায় যাবার, রাজনীতি করার। তিনি বলেন, এই দেশের যারা আর্থসামাজিক উন্নয়ন চান, এদেশের মানুষের ভাগ্যের পরিবর্তন চান, এই দেশের মানুষ যেন ক্ষুধা মুক্ত দারিদ্র মুক্ত হয়, বিজ্ঞান শিক্ষায় শিক্ষিত হয়ে উন্নত প্রজন্ম হয়ে গড়ে উঠে, যারা চান তারা কখনও ঐ যুদ্ধাপরাধীদের দোসর মানুষ হন্তারকদের ভোট দিতে পারেন না।পিডিএসও/মুস্তাফিজ