গাজী শাহনেওয়াজ

  ০৪ মে, ২০১৯

বুড়িগঙ্গার তীর থেকে উচ্ছেদ হচ্ছে শিপইয়ার্ড ও ডকইয়ার্ড

রাজধানী ঢাকার প্রাণকেন্দ্রে অবস্থিত বুড়িগঙ্গা নদীর তীরভূমি থাকবে স্বচ্ছ। এমনটাই দেখতে চাইছে নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়। তাই আবার বড় ধরনের উচ্ছেদে নামার পক্ষে এ মন্ত্রণালয়। তাদের নজর এবার শিপইয়ার্ড, ডকইয়ার্ড এবং শিপবিল্ডার্সের দিকে।

নদীর কূলঘেঁষে গড়ে ওঠা এ ধরনের শতাধিক স্থাপনা রয়েছে। পরিবেশগতভাবে নদীর জন্য এগুলো মারাত্মক হুমকি বলে মনে করছে জাতীয় নদী রক্ষা কমিশন। কমিশনের মতে, এই স্থাপনাগুলোর কারণে নদীর নাব্য সংকট হচ্ছে।

জানা গেছে, এ রকম অনেক স্থাপনার মালিকের বৈধ কাগজপত্র নেই। নামজারি হয়নি অনেকগুলোর। অথচ কর্তৃপক্ষের সঙ্গে সখ্য রেখে বছরের পর বছর এই অসাধু চক্র ব্যবসা করে আসছে।

তৃতীয় মেয়াদে ক্ষমতায় এসে সরকার গঠনের পর শুরুতেই কর্তৃপক্ষ অবৈধ স্থাপনা অপসারণে নামে। বুড়িগড়া, তুরাগ ও নারায়ণগঞ্জ এলাকায় উচ্ছেদ অভিযান চালায়। এটি অব্যাহত রাখার ঘোষণা রয়েছে মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে। এবার ডকইয়ার্ড, শিপইয়ার্ড ও শিপবিল্ডার্সগুলো অপসারণ করা সম্ভব হলে স্বচ্ছ বুড়িগঙ্গা গড়ে তোলা সম্ভব বলে জানিয়েছেন নদী বিশেষজ্ঞরা।

সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, রাজধানী বুড়িগঙ্গাকে নিয়ে সরকারের মাস্টারপ্ল্যান রয়েছে। এবার মাস্টারপ্ল্যানের অংশ হিসেবে নদীর তীরঘেঁষে গড়ে ওঠা অবৈধ শতাধিক শিপইয়ার্ড, ডকইয়ার্ড ও শিপবিল্ডার্স অপসারণের লক্ষ্যে গত মাসে একটি সভা অনুষ্ঠিত হয়। কিন্তু এসব স্থাপনার মালিকরা সভার সিদ্ধান্ত মানতে নারাজ। তারা বলছেন, এসব ইয়ার্ড করতে অনেক অর্থ ব্যয় হয়। ব্যাংক লোন ছাড়া কারখানা তৈরি সম্ভব নয়। অপসারণ বা উচ্ছেদ করতে হলে সরকারকে আরেক দফা ভাবতে হবে। কিন্তু মন্ত্রণালয় ও নদী রক্ষা কমিশন তা মানতে নারাজ। তাদের বক্তব্য হচ্ছে, বুড়িগঙ্গার পানি একসময় পানযোগ্য ছিল। কিন্তু দখল দূষণের কারণে বর্তমানে ভয়াবহ পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে। তাই ঢাকার চারপাশের নদীগুলোকে পুনরুজ্জীবিত করতে হবে। রক্ষা করতে হবে নদীর তীরভূমি।

এদিকে লঞ্চমালিক সমিতির সভাপতি শহীদুল ইসলাম বলেছেন, ১৯৫০ সালে ডকইয়ার্ডগুলো নির্মাণ করা হয়। পরে স্লিপওয়ে নির্মাণ করাসহ ডকইয়ার্ডগুলোর উন্নয়ন করা হয়। এগুলো অনেক ব্যয়বহুল। বিআইডব্লিউটিএকে খাজনা দেওয়া হয়। প্রয়োজনের তাগিদে খাজনা বাড়াতে টিএকে ফি নির্ধারণের প্রস্তাব দিলেও এতে সাড়া দেননি সংশ্লিষ্টরা। তিনি দাবি করেন, ডকইয়ার্ডগুলো নদী দূষণ করছে না।

হক ডকইয়ার্ডের মালিক মুজিবুল হক বলেন, ডকইয়ার্ড বলতে স্লিপওয়ে বোঝায় না। সব ডকইয়ার্ডের সিøপওয়ে নেই। তিনি বলেন, ব্যাংক লোন নিয়ে ব্যবসা করতে হয়। মেরামতের সঙ্গে সঙ্গে অর্থ পাওয়া যায় না। তাদের বক্তব্যের সঙ্গে দ্বিমত পোষণ করে ডকইয়ার্ড মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক বলেন, প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা রয়েছে ডকইয়ার্ড সরাতে হবে। ওনার (প্রধানমন্ত্রী) সিদ্ধান্ত নিয়ে প্রশ্ন তোলার সুযোগ নেই।

এদিকে বিআইডব্লিউটিএর পরিচালক (বন্দর) বলেন, হারবারের সঙ্গে ডকইয়ার্ড থাকা জরুরি না। এ বিষয়ে জরিপ করা হয়েছে। ডকইয়ার্ডগুলো সরিয়ে নিতে হবে; এগুলোর প্রয়োজনীয়তা নেই। নৌপরিবহন অধিদফতরের ডিজি বলেন, বুড়িগঙ্গার তীরে ২৩টি ভারী ডকইয়ার্ড আছে।

জাতীয় নদী রক্ষা কমিশনের চেয়ারম্যান বলেন, ৩৩টি ডকইয়ার্ড পরিদর্শন করেছি। এসব ডকইয়ার্ডের ৩০টির নামজারি রেকর্ড পাওয়া যায়নি। তিনি বলেন, হাইড্রোমর্ফোলজিক্যাল পরিবেশ এ ক্ষেত্রে বিবেচনা করেছি। ডকইয়ার্ডের সঙ্গে আনুষঙ্গিক অনেক কিছু রয়েছে। দেখা গেছে, নদীতে ৪-৫টি ভাঙা জাহাজ পড়ে আছে। এগুলো নাব্যতার ক্ষেত্রে হুমকি। তাই এগুলোকে দ্রুত স্থানান্তর করতে হবে। চেয়ারম্যান আরো বলেন, অনেক মালিক রেকর্ড দেখাতে ব্যর্থ হয়েছে।

নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের সচিব আবদুস সামাদ বলেন, নদী দখল করে নির্মিত ডকইয়ার্ড রাখা যাবে না। নদীকে বাঁচাতে হবে। ডকইয়ার্ডগুলো কোনো না কোনোভাবে নদী দূষণ করছে। এগুলো সরাতে হবে।

আর নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরী বলেন, লালবাগের হাজারীবাগ থেকে ট্যানারি সরানোর ক্ষেত্রে আপস করা হয়নি। বুড়িগঙ্গা নিয়ে মাস্টারপ্ল্যান অনুযায়ী ডকইয়ার্ডসমূহ সরানো হবে।

পিডিএসও/হেলাল

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
শিপইয়ার্ড ও ডকইয়ার্ড,বুড়িগঙ্গার তীর,উচ্ছেদ,নাব্য সংকট
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close