বিশেষ প্রতিনিধি

  ০৭ আগস্ট, ২০১৮

আগস্ট এলেই কাঁদে বাঙালি

দেশাত্মবোধক গান বাজছে চারপাশে। বাতাসে ভাসছে ৭ মার্চের সেই কালজয়ী ভাষণ। উড়ছে কালো পতাকা। পেজাতুলোর মতো ভাসছে মেঘ। বেদনাবিধুর মুখ নিয়ে থমকে আছে আকাশ। মানুষ হাঁটছে। নিজের অজান্তেই চোখ ভিজে আসছে জলে। শোকে, শ্রদ্ধায় অবনত হয়ে আসছে মাথা। চিরচেনা হাসি নিয়ে, সামনে এসে দাঁড়াচ্ছেন সেই চিরচেনা মানুষ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। একই চেহারা, একই গড়ন, একই তার তেজ। এক দিন তার ডাকেই তো ঘর ফেলে পথে নেমেছিল মানুষ। ভিড় করেছিল তারই ছায়াতলে, পরম আশ্রয়ে। পরাধীন বাঙালির তিনিই তো ছিলেন একমাত্রা পরিত্রাতা। তিনিই তো বাঙালিকে দিলেন স্বাধীনতার অপার স্বাদ। অথচ সেই তাকেই এই আগস্টেই বর্বরোচিতভাবে সপরিবারে খুন করল ঘাতকরা।

আগস্ট এলেই তাই কাঁদে বাঙালি। বাঙালির মন খারাপের মাস এটি। পথে-ঘাটে, গ্রাম-গঞ্জে, শহরে-বন্দরে, গাছে গাছে ফোটে যে ফুল, তার রঙে ঝরে বেদনা। এ প্রান্ত থেকে সে প্রান্ত, এ ঘর থেকে সে ঘর, সবখানে, সর্বত্র, সমানভাবে জুড়ে রয়েছেন তিনি আজও। শাহাদতের এত বছর পর আজও আলোয় ও উদ্ভাসনে, সংকটে ও সম্ভাবনায়, বাঙালির চিরমানসপটে চির সমুজ্জ্বল তিনি। কারণ তিনিই তো বাঙালির শত সহস্র বছরের অবিস্মরণীয় রাজনৈতিক নেতা, বাঙালি জাতির পিতা।

কালো মোটা ফ্রেমের চশমা, সৌমমুখখানা আরো বেশি হৃদয়গ্রাহী করে তুলতো বঙ্গবন্ধুকে। মাত্র ১৬ বছর বয়সে ১৯৩৬ সালে সে চশমা প্রথম ওঠে চোখে তার। ’৩৪ সালে, যখন সপ্তম শ্রেণির ছাত্র, ভীষণ অসুস্থ হয়ে পড়েন এক দিন। দেখা দেয় চোখের বেরিবেরি রোগ। দুর্বল হয়ে পড়ে হৃদযন্ত্র। চিকিৎসা করাতে বাবা নিয়ে গেলেন কলকাতায়। শিবপদ ভট্টাচার্য, এ কে রায় চৌধুরীসহ বড় বড় চিকিৎসকরা দেখলেন। তাদের তত্ত্বাবধানেই চলল টানা দুটি বছর চিকিৎসা।

’৩৬ সালে মাদারীপুর মহকুমায় সেরেস্তদার হয়ে বদলি হয়ে আসেন বাবা। বঙ্গবন্ধু তখনো অসুস্থ। উদ্বিগ্ন হয়ে ছুটে আসেন মা। সে বছরই আবারও চোখ খারাপ হয়ে পড়ে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের। দেখা দেয় গ্লুকোমা রোগ। আবারও কলকাতায় নেওয়া হলো। উঠলেন বোনের বাসায়। চক্ষু পরীক্ষা করলেন ডা. টি আহমেদ। বললেন, শিগগিরই অস্ত্রোপচার করতে হবে। দেরি হলে অন্ধ হয়ে যেতে পারেন। কলকাতা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি হলেন। এক দিন ভোর ন’টায় অস্ত্রোপচার। ভয়ে হাসপাতাল থেকে পালাতে চেষ্টা করলেন বঙ্গবন্ধু। পারলেন না। ১০ দিনের মধ্যে দুই চোখেই সফল অস্ত্রোপচার হলো। চিকিৎসকের পরামর্শে আরো কিছুদিন বন্ধ থাকল লেখাপড়া। এক দিন সুস্থ হলেন। চশমা নিলেন। সেই থেকে কালো ফ্রেমের চশমায় হেসে উঠলেন মানুষটি।

পিডিএসও/হেলাল

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
বঙ্গবন্ধু,শেখ মুজিবুর রহমান,১৫ আগস্ট
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close