ড. মোস্তফা সারোয়ার

  ১২ সেপ্টেম্বর, ২০২২

মানবাধিকার প্রসঙ্গ ও মিশেল ব্যাচেলেট

ছবি : সংগৃহীত

গত আগস্ট মাসজুড়েই সহযোগী কয়েকটি দৈনিকে ফলাও করে প্রচার পেয়েছে মানবাধিকার সংশ্লিষ্ট বিষয়গুলো। যার বেশির ভাগই আগস্ট ট্র্যাজেডির মানবাধিকার লঙ্ঘন সম্পর্কিত নয়। মানবাধিকারের বিষয়টি অতি পুরোনো এবং গুরুত্বপূর্ণ হলেও এর সংজ্ঞা ও পরিধি নিয়ে বৈশ্বিক মতভেদ রয়েছে। একই মাপের জুতা সবাইকে পরানোর মতো একটা ব্যবস্থা, সার্বজনীন বৈশ্বিক মানবাধিকার সনদে রাখা হয়েছে। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধোত্তর বিশ্বব্যবস্থায় স্নায়ুযুদ্ধের সময়, মূলত বিজয়ী মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সংবিধানের আলোকেই জাতিসংঘ ১৯৪৮ সালের ১০ ডিসেম্বর বৈশ্বিক মানবাধিকার সনদ গ্রহণ করে। ৩০টি অনুচ্ছেদের ওই সনদে বিস্তারিত থাকলেও মোটা দাগে দুটি বিষয়কে প্রাধান্য দেওয়া হয়েছে, নাগরিক স্বাধীনতা এবং রাজনৈতিক স্বাধীনতা। তবে পরবর্তী সময়ে পশ্চিমা দুনিয়ায় উদার নৈতিকতাবাদের ব্যাপক উত্থান হলে বাকস্বাধীনতা, পছন্দের স্বাধীনতা, সংগঠনের স্বাধীনতা, চলাচলের স্বাধীনতা ইত্যকার বিষয়গুলো অনেক বেশি গুরুত্ব পায়। কিন্তু উত্তর ইউরোপের কিছু ব্যতিক্রম ছাড়া প্রায় সব ক্ষেত্রেই ব্যাপক জনগোষ্ঠীর শিক্ষা, স্বাস্থ্য, বাসস্থান, ব্যক্তি মর্যাদাসহ অভিবাসীদের অধিকার উপেক্ষিত থেকে যায় মানবাধিকারের বিষয় হিসেবে। অন্যদিকে রাজনৈতিক স্বাধীনতায় ঘাটতি থাকলেও পশ্চিমারা যাদের কখনো জনতুষ্টিবাদী সরকার বলে থাকে, সেসব রাষ্ট্রের খাদ্য, শিক্ষা, স্বাস্থ্য এবং আবাসনের মতো বিষয়গুলো মানবাধিকারের গুরুত্বপূর্ণ অনুষঙ্গ হিসেবে আবির্ভূত হয়েছে। ফলে কার্যত মানবাধিকারের উপাদানের বিষয়ে বৈশ্বিক ঐকমত্য প্রতিষ্ঠা একটি দুরূহ ব্যাপার। তবে স্নায়ুযুদ্ধ-উত্তর এককেন্দ্রিক বিশ্বব্যবস্থা এবং করপোরেট সাংবাদিকতা প্রসারের কারণে পশ্চিমা প্রচার মাধ্যম পশ্চিমা মূল্যবোধের ওপর প্রতিষ্ঠিত মানবাধিকার নামক শব্দটি সার্বজনীন করে ফেলেছে। অথচ মানবাধিকার সংশ্লিষ্ট বিষয়টি হওয়া উচিত একটি দেশের মানুষের ঐতিহ্য, আবেগ, অনুভূতি, সামাজিক ও ধর্মীয় মূল্যবোধসহ সামাজিক ও রাজনৈতিক সংস্কৃতির আলোকে।

অস্বীকার করার উপায় নেই এই বিশ্বায়নের যুগে মানবাধিকারের বিষয়টি কোনো সমাজ বা রাষ্ট্রের একক কোনো বিষয়। একটি দেশের মানবাধিকারের ব্যাপক লঙ্ঘন বিভিন্ন বাস্তবতায় পার্শ্ববর্তী অন্য কোনো দেশকেও প্রভাবিত করতে পারে। যেমনটি বাংলাদেশের ক্ষেত্রে হয়েছে মিয়ানমারের রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর মানবাধিকার লঙ্ঘন বাংলাদেশের সমাজ সংস্কৃতি এবং অর্থনীতিতে ব্যাপক প্রভাব ফেলেছে। জাতিসংঘের বাইরে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য বা ক্ষেত্রবিশেষে ইউরোপীয় ইউনিয়নও বৈশ্বিক মানবাধিকার রিপোর্ট প্রকাশ করে থাকে। এটি একটি ভালো উদ্যোগ হলেও যে প্রক্রিয়ায় বা যে পদ্ধতি অনুসরণ করে এটি করা হয়ে থাকে তা প্রশ্নের ঊর্ধ্বে নয়। বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই মানবাধিকার প্রতিবেদনগুলো পশ্চিমা অর্থে পরিচালিত থিংক ট্যাংক, গণমাধ্যম এবং স্থানীয় মানবাধিকার এনজিও বা নাগরিক সমাজের প্রতিবেদনের ওপর ভিত্তি করে করা হয়ে থাকে। এই প্রতিবেদনগুলো কি সর্বক্ষেত্রেই বস্তুনিষ্ঠ? তর্কের খাতিরে যদি ধরেই নিই উদ্দেশ্য ভালো কিন্তু যে প্রক্রিয়ায় মানবাধিকার সংশ্লিষ্ট বৈশ্বিক সূচক তৈরি করা হয়, সেখানে কি পশ্চিমা উদারনৈতিক মূল্যবোধের বাইরের দেশগুলোর ভালো কোনো স্কোর করা কি সম্ভব? যেমন ধরুন, ক্যাটো ইনস্টিটিউট, ফ্রাসে ইনস্টিটিউট, লিবারেল ইনস্টিটিউটসহ ফ্রিডম হাউসের মতো পশ্চিমা রক্ষণশীল থিংক ট্যাংকসহ অন্যরা এ সংশ্লিষ্ট বৈশ্বিক সূচক প্রকাশ করতে গিয়ে প্রায়ই ৫-৬টি ক্যাটাগরির অধীনে ৫-৬ ডজন চলক ব্যবহার করে থাকে। এই চলকগুলো মোটা দাগে অর্থনৈতিক, সামাজিক, রাজনৈতিক, গণতান্ত্রিক, বিচারব্যবস্থা, ধর্মীয় স্বাধীনতা বিষয়ে হয়ে থাকে। তবে অনেক বিশ্লেষক মনে করেন, উল্লেখিত ক্যাটাগরিগুলোর অধীনে যে ডজন ডজন চলক ব্যবহার করা হয়, তার অর্ধেকই পুঁজিবাদী পশ্চিমা উদারনৈতিক সমাজ-সংস্কৃতির বাইরে কার্যকর নয়। অথচ গ্রিট হফস্টেটের থিওরি অনুযায়ী বিশ্বব্যবস্থা মোটা দাগে ৬টি সাংস্কৃতিক মাত্রার মিশ্রণ। তাই এসব সূচকের একাডেমিক গুরুত্ব থাকলেও ব্যবহারিক গুরুত্ব নিতান্তই নেহায়েত। যেমন ধরুন সিভিল লিবার্টির কথা, বিয়ে বিচ্ছেদ, উত্তরাধিকার, সমলিঙ্গের সহবাস (পুরুষের সঙ্গে পুরুষের সম্পর্ক, নারীর সঙ্গে নারীর সম্পর্ক) সংশ্লিষ্ট কয়েকটি চলকে শুধু মধ্যপ্রাচ্যের মুসলিম দেশগুলো নয়, বাংলাদেশ, ইন্দোনেশিয়া, টার্কির মতো মডারেট মুসলিম দেশেরও স্কোর কম থেকে যায়। এরপর আসি অর্থনৈতিক ক্যাটাগরিতে। যেখানে খাদ্যনিরাপত্তাসহ শিক্ষা, স্বাস্থ্য, বাসস্থান অধিকার সংশ্লিষ্ট বিষয়ে কোনো চলক না থাকলেও বিনিয়োগকৃত বৈদেশিক পুঁজির (লাভসহ) নিরাপদ প্রত্যাবর্তন, ব্যবসা শুরুর প্রতিবন্ধকতা, ট্যাক্স ট্যারিফ কাঠামোর মতো মুক্তবাজার অর্থনীতিকে জোরদার করার অনেক সূচকই রয়েছে। বাংলাদেশসহ তৃতীয় বিশ্বের যেসব দেশ মুক্তবাজার অর্থনীতির পথে এখনো নবীন, তাদের কি এই সূচকে ভালো কোনো স্কোর করা সম্ভব?

এবার আসা যাক, মানবাধিকার পরিমাপের গুণগত দিক সম্পর্কে। পশ্চিমা গণমাধ্যমের রিপোর্ট এবং বিভিন্ন দেশে (গ্লোবাল সাউথ) পশ্চিমা অর্থে পরিচালিত আন্তর্জাতিক এনজিও এবং তাদের সঙ্গে সম্পৃক্ত দেশীয় মানবাধিকার এনজিও বা সুশীল সমাজের অসম্পাদিত রিপোর্টই বৈশ্বিক মানবাধিকার রিপোর্টের তথ্যের অন্যতম উৎস। যেমন ধরুন ২০১৩ সালে হেফাজত কাণ্ডের পর হিউম্যান রাইট ওয়াচ বাংলাদেশ সম্পর্কে মূল্যায়ন তুলে ধরেছিল। গণমাধ্যমের দৃষ্টিতে বিতর্কিত একটি এনজিওর বয়ানের ওপর ভিত্তি করে। একইভাবে যুক্তরাষ্ট্রের স্টেট ডিপার্টমেন্ট ২০২১ সালে বাংলাদেশ সম্পর্কে যে প্রতিবেদন প্রকাশ করেছিল, তার তথ্যের অন্যতম উৎস ছিল স্থানীয় মানবাধিকার সংশ্লিষ্ট একটি এনজিও এবং সুশীল সমাজ, যার বিরুদ্ধে বাংলাদেশ সরকার প্রতিবাদও জানিয়েছিল।

এবার প্রসঙ্গ একটু পাল্টাই। আগস্ট মাসজুড়ে মানবাধিকার সংশ্লিষ্টদের তৎপরতা দিয়ে লেখাটি শুরু করেছিলাম। পাঠকের অনেকেই ভাবতে পারেন, আগস্ট মাস ঘটনাবহুল বিয়োগান্তক মাস। যে মাসে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে সপরিবারে হত্যা করা হয়েছে, বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনাকে পৈশাচিক গ্রেনেড হামলা করে হত্যা করার চেষ্টা হয়েছে, ১৭ আগস্ট দেশব্যাপী বোমা হামলা হয়েছে। প্রতিটি ঘটনাতেই মানবাধিকার ভূলণ্ঠিত হয়েছে। এ রকম একটি মাসে মানবাধিকার সংগঠনগুলো সরব থাকবে এটিই স্বাভাবিক। কিন্তু অবাক হয়ে প্রত্যক্ষ করলাম, তাদের অনেকেরই লক্ষ্য ভিন্ন। গত ২৫ আগস্ট ছিল মিয়ানমারের সেনাবাহিনী ও সরকার কর্তৃক ৭ লাখেরও অধিক রোহিঙ্গা মুসলিম জনগোষ্ঠীর মানবাধিকারের চূড়ান্ত লঙ্ঘনের ৫ম বর্ষপূর্তি। এরই সপ্তাহ খানেক আগে গত ১৪ তারিখে দেশে এসেছিলেন জাতিসংঘের মানবাধিকারবিষয়ক কমিশনের প্রধান মিশেল ব্যাচেলেট। আর গত ২৫ আগস্ট এসেছিলেন জাতিসংঘের মহাসচিবের মানবাধিকার বিষয়ক দূত নোলিন হাইজার। এ দেশের আমন্ত্রণে এলেও তাদের দুজনের আগমনের অন্যতম উদ্দেশ্য ছিল, বাংলাদেশে অবস্থানরত মিয়ানমারের রোহিঙ্গাদের মানবাধিকার পরিস্থিতি এবং নিজ দেশে নিরাপদ প্রত্যাবর্তন সংশ্লিষ্ট বিষয়ে খোঁজ-খবর করা। এ সময় প্রায় অর্ধ ডজন সংগঠন ভিন্ন ভিন্ন দিনে মানবাধিকার রক্ষার ব্যানারে বেশ তৎপর ছিল। সহযোগী কিছু দৈনিকে সেগুলো আবার ঘটা করে প্রচারও পেল। একটি কাগজে দেখলাম, ডজনখানেক বিশিষ্ট ব্যক্তিও (কাগজওয়ালাদের দৃষ্টিতে) জাতিসংঘের মানবাধিকার কমিশনের প্রধান মিশেল ব্যাচেলেটের সঙ্গে সাক্ষাৎ প্রার্থী হয়েছেন। বিয়োগান্তক আগস্টের মানবাধিকারহরণ বা মিয়ানমারের বাস্তুচ্যুত রোহিঙ্গাদের মানবাধিকারহরণ মূল আলোচনার বিষয় ছিল না। যদিও অন্তত শেষোক্তটি হতে পারত সময়ের দাবিতে। কাগজে দেখলাম নালিশগুলোর সার কথা হলোÑ বাকস্বাধীনতা নেই, মত প্রকাশের স্বাধীনতা নেই, সংগঠন করা বা চলাফেরার স্বাধীনতা নেই, বিচারবহির্ভূত হত্যাসহ গুম-নিখোঁজ হওয়ার সংখ্যা বেড়েই চলেছে। প্রশ্ন হলো যেখানে এত নেই নেই, সেখানে কীভাবে অনেকেই সুসংঘটিত হয়ে এত ঢালাও অভিযোগের ফিরিস্তি প্রকাশ করে এবং তা গণমাধ্যমে শিরোনাম হয়। আর গুম-হারিয়ে যাওয়া নিয়ে কিছু লিখতে চাই না, পাছে ঢাকার একজন সাবেক মেয়রের মতো হাটে হাঁড়ি ভেঙে দিয়ে আবার না কেউ হারিয়ে যাওয়া নতুন কারো খবর দিয়ে গণমাধ্যমের ব্রেকিং নিউজ হয়।

আগস্ট মাসের গুরুত্ব হালের মানবাধিকার ওয়ালারা না বুঝলেও মিশেল ব্যাচেলেট ঠিকই বুঝেছিলেন, বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে শ্রদ্ধা নিবেদন করেছিলেন। মিশেল ব্যাচেলেট শুধু দুই মেয়াদে লাতিন আমেরিকান দেশ চিলির রাষ্ট্রপ্রধানই ছিলেন না, তিনি স্নায়ুযুদ্ধকালীন মানবাধিকার লঙ্ঘনের চূড়ান্ত শিকারের একজন, বাংলাদেশে যেমন বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা। মিশেল ব্যাচেলেট ১৯৭৩ সালে চিলির সামরিক জান্তা অগাস্টো পিনুশেটের রক্তাক্ত অভ্যুত্থানের মাধ্যমে চিলির সমাজতান্ত্রিক প্রেসিডেন্ট সালভাদর আলেন্দকে হত্যা-পরবর্তী সময়ে, তার সামরিক অফিসার পিতার সঙ্গে নির্মমভাবে নির্যাতিত হয়ে প্রায় অর্ধযুগ দেশান্তরী ছিলেন। হয়তো বা তিনি ঠিকই বুঝেছেন, মানবাধিকারের ফেরিওয়ালারা কখন কাদের হয়ে কী কথা বলে। তাইতো দেখি, বাংলাদেশ থেকে ফিরে গিয়ে সুইজারল্যান্ডের জেনেভায় তার বিদায়ি সংবাদ সম্মেলনে ১৭ আগস্ট সন্ধ্যায় ঢাকায় দেওয়া ২২১০ শব্দের বক্তব্যের পুনরাবৃত্তি করে বাংলাদেশের মানবাধিকার সম্পর্কে আর কোনো কথা বলেননি। দেশের অনেক সংবাদ মাধ্যম কিছুটা অভিযোগের সুরেই তার এই অবস্থানকে পত্রিকায় খবরের শিরোনাম করেছে। হয়তো বা দেশি-বিদেশি অনেক মানবাধিকারওয়ালা গোস্বাও করেছেন! তাইতো দেখি মঙ্গলবার (৩০ আগস্ট) তড়িঘড়ি করে জাতিসংঘের মানবাধিকারবিষয়ক হাইকমিশনের মুখপাত্র রবিনা শ্যামদাসনি ইমেইলে বিবৃতি দিয়ে ওনাদের গোস্বা কমানোর চেষ্টা করেছেন। বিবৃতির সার কথা হলো বাংলাদেশে অবস্থানকালে ব্যাচেলেট যথেষ্ট উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন বিধায় জেনেভায় এ প্রসঙ্গে কথা না বলে বৈশ্বিক বিষয়ে (মিয়ানমারের রোহিঙ্গাদের মানবাধিকারসহ) বক্তব্য রেখেছেন। আজ যখন এই লেখা লিখছি, ততক্ষণে মিশেল ব্যাচেলেট কর্মের মেয়াদ পূর্ণ করে দায়িত্ব থেকে সরে দাঁড়িয়েছেন। সাবেকদের অফিশিয়ালি বলার সুযোগ থাকে না, থাকলে হয়তো স্মিত হাসি দিয়ে বলতেন কি না জেনেভায় যে পরিমিতি বোধের পরিচয় দিয়েছি তা জেনে বুঝেই দিয়েছি।

লেখক : অধ্যাপক, খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় [email protected]

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
মানবাধিকার প্রসঙ্গ,মিশেল ব্যাচেলেট
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close