সম্পাদকীয়

  ১১ জুন, ২০২১

করোনা মোকাবিলায় রাষ্ট্রের সঠিক নেতৃত্ব চাই

নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ অমর্ত্য সেন বলেছেন, কোভিড-১৯ মহামারির সময় একটি জিনিসে ভারতের কেন্দ্রীয় সরকার খুবই অবহেলা করেছে আর সেটি হলো জীবনযাত্রায় স্বাস্থ্য ব্যবস্থার যে বড় ভূমিকা আছে তা উপেক্ষা করা। সম্ভবত সে কারণেই সাধারণকে পোহাতে হয়েছে এত দুর্ভোগ এবং এখনো তা অব্যাহত রয়েছে। এদিক দিয়ে তুলনামূলক বিচারে বাংলাদেশের অবস্থা অনেকটা ভালো বলেই মানতে হবে। এজন্য সরকারের বিচক্ষণতা এবং সাহসী পদক্ষেপকে সাধুবাদ জানানো যায়। কোভিড প্রতিরোধে বাংলাদেশ বিশ্বের প্রশংসা কুড়িয়েছে।

অমর্ত্য সেনের ভাষায় সরকারি সমর্থক ও তাদের সমমনা অর্থনীতিবিদরা বলেছেন, এসব নিয়ে এখন চিন্তার কোনো কারণ নেই। মানুষের টাকা হলে স্বাস্থ্য, শিক্ষা সবই হবে। কিন্তু তিনি এ মতের সঙ্গে একাত্মতা ঘোষণা করতে পারেননি। বলেছেন, এ ধারণার মধ্যে চিন্তার অভাব অত্যন্ত প্রকট। বাস্তবতা হচ্ছে, স্বাস্থ্য-সংক্রান্ত বড় সমস্যা হলে সামাজিকভাবে তা মোকাবিলা করার ক্ষমতাও কমে যায়।

আমরাও মনে করি, গোটা সমাজ যদি স্বাস্থ্য-সংক্রান্ত বিষয়ে একসঙ্গে আক্রান্ত হয়; তখন তা মোকাবিলা করা ব্যক্তিবিশেষের জন্য কঠিন হয়ে পড়ে। নির্ভর করতে হয় রাষ্ট্রের স্বাস্থ্য কাঠামো এবং ব্যবস্থাপনার ওপর। টাকা দিয়ে তা মোকাবিলা করা সম্ভব হয়ে ওঠে না। তবে রাষ্ট্রের পাশে মানুষকেও দাঁড়াতে হয়। সরকারের একার পক্ষে মহামারি প্রতিরোধও কখনো ফলপ্রসূ হয়নি। এখানে উভয়পক্ষকে সমান মনোযোগী হতে হয়।

অমর্ত্য সেন বলেছেন, সাধারণের মাঝে আলোচনার গুরুত্ব অনেক। অনেক অজানা তথ্যের বিনিময় হয়। এতে সচেতনতা বৃদ্ধি পায়। কোনো সমস্যা হলে কী করা যায়, সে বিষয়ে তারা ফলপ্রসূ চিন্তা করতে পারে। ভারতের যেসব অঞ্চলে স্বাস্থ্যব্যবস্থা তুলনামূলক ভালো, সেখানকার পরিবেশ অনেকটা এ রকম। এক্ষেত্রে কেরালার কথা উল্লেখ করা যায়। কেরালা অত্যন্ত শক্ত হাতে কোভিড-১৯ মোকাবিলা করেছে। ভারতের স্বাস্থ্য ব্যবস্থাপনা নতুন পরিকল্পনার কথা ভাবছে। সবাইকে টিকা কিনে ব্যবহার করতে হবে।

এ প্রসঙ্গে নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ বলেন, এটি একটি ত্রুটিযুক্ত চিন্তার বহিঃপ্রকাশ। যেখানে প্রথম লকডাউনে দেখা গেল খেটে খাওয়া মানুষের কথা কেউ মনে রাখল না। যাদের খেটে খেতে হয়, তারা কোথায় কাজ পাবেন, খাবার আসবে কোত্থেকে এবং তারা ওষুধ-পথ্যইবা কীভাবে কিনবেন। আবার নতুন করে বলার চেষ্টা চলছে টিকা কিনতে হবে।

তিনি বলেছেন, যে রকম অর্থনীতিই হোক না কেন, সবাই এ বিষয়ে একমত যে, সবাইকে বিনামূল্যেই টিকা দিতে হবে এবং তারা সে পথেই পা বাড়িয়েছেন। কেননা, টিকা ছাড়া সমাজের সবাইকে বাঁচানো সম্ভব নয়। বিপর্যয়ের মধ্যেই ভারতসহ নানা দেশে আর্থিক বৈষম্য বাড়ছে। অথচ মহামারির অভিজ্ঞতা বলছে, এভাবে চলতে পারে না। সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষের জীবন ও জীবিকার স্বার্থকে সবার আগে রেখে নীতি প্রণয়ন জরুরি। সমস্যা সমাধানের নতুন ব্যবস্থাপনা দিয়ে সামাজিক উন্নতি ঘটানো তখনই সম্ভব, যখন দেশের সব মানুষকে তার মধ্যে আনার চেষ্টা হয়।

আমরা মনে করি, তিনি যথার্থই বলেছেন। সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষের জীবন ও জীবিকার স্বার্থকে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দিতে হবে। সম্ভবত বাংলাদেশ সরকার সেদিকেই খেয়াল রেখে করোনা মোকাবিলা করেছে এবং এখনো সেই ধারা অব্যাহত রেখেছে। তুলনামূলক বিচারে এখানেই বাংলাদেশের সাফল্য, সাফল্য সরকারের।

পিডিএসও/হেলাল

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
করোনা মোকাবিলা,নেতৃত্ব,সম্পাদকীয়
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close